যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার ইটালির আপুগলিয়ায় জে-সেভেন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছন। এই বৈঠকের লক্ষ্য ছিল ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ এবং চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রেক্ষাপটে বিশ্বের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার দিকে আলোকপাত করা।
জি-সেভেনের নেতারা ইটালির বিলানস বহুল বোর্গো এগনাজিয়া অবকাশ কেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছালে তাদের স্বাগত জানান ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলনি। গত সপ্তাহে ইউরোপীয় পার্লামেনেটর নির্বাচনে মেলনির কট্টর ডানপন্থি দল প্রায় ২৯% ভোট পায় এবং তাতে গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিম ইউরোপীয় দেশটির তিনি এক মাত্র নেত্রী হয়ে উঠেছেন।
এ দিকে বাইডেনও রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত আছেন তা ছাড়া এই শীর্ষ বৈঠকের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়ার একদিন আগে মঙ্গলবার তার ছেলে হান্টার বাইডেন মাদকাসক্ত হয়ে বন্দুক রাখার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন।
তা সত্বেও বিইডেন এই শীর্ষ বৈঠকে এই আশা নিয়ে এসেছেন যে তিনি এই গোষ্ঠীকে রাজি করাতে পারবেন রাশিয়ার আটক অর্থের সুদ থেকে ইউক্রেনকে ৫ হাজার কোটি ডলার ঋণ দিতে এবং বৈদ্যুতিক যানবাহন সহ কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ দূষণমুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারে চীনের সক্ষমতার মোকাবিলা করতে।
এই শীর্ষ বৈঠকের একদিন আগেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনা বৈদ্যুতিক যানবহনের উপর শুল্ক আরোপ করে এ ব্যাপারে তাদের সমর্থনের আভাস দেয়। এতে বাইডেন প্রশাসনের চীনা বৈদ্যুতিক যানবহনের উপর কড়া শুল্ক আরোপেরই প্রতিধ্বণি শোনা যায়।
মেলনির প্রেসিডেন্ট আমলের প্রধান বিষয়গুলি ব্যাপারেও বাইডেন তাঁর সমর্থন দিচ্ছেন যেমন আফ্রিকায় বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন। এই বিষয়গুলি বৃহস্পতিবার জি-সেভেনের উদ্বোধনী অধিবেশনে আলোচনা করা হয় এবং তার পরই আসে গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গ।
গাজায় অস্ত্রবিরতি
এখন অস্ত্রবিরতি বিষয়ক আলোচনা কঠিন এক সন্ধিক্ষণে থাকায় বাইডেন নেতাদের কাছ থেকে এ ধরণের কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন যে ইসরায়েলকে তার সামরিক অভিযান বন্ধ করতে, অসামরিক লোকজনের হতাহত কমিয়ে আনতে এবং ফিলিস্তিনিদের আরও সহায়তা প্রদানের জন্য তিনি কি যথেষ্ট চাপ দিচ্ছেন।
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালিভান ইটালির পথে এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানে বসে সংবাদদাতাদের বলেন নেতাদের “মনোযোগ একটি বিষয়ের উপর নিবদ্ধ রয়েছে আর তা হলো অস্ত্রবিরতি প্রয়োগ করা এবং তারই অংশ হিসেবে পণবন্দিদের মুক্ত করানো। তিনি আরও বলেন , “বাইডেনের প্রতি তাদের পুর্ণ সমর্থন আছে”।
সালিভান বৃহস্পতিবার সকালে সংবাদদাতাদের বলেন ইসরায়েলের সঙ্গে লেবাননের সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়েও নেতারা আলোচনা করবেন।
তিনি আরও বলেন, “ ইরান যে অব্যাহত হুমকির বিষয়েও তারা মতবিনিময় করবেন, বিশেষত ইরানের প্রক্সি বাহিনী এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচী বিষয়ে”।
অস্ত্রবিরতিকে এই জোট সমর্থন করছে তবেব গাজা সম্পর্কে অন্যান্য বিষয় নিয়ে জি-সেভেন সদস্যরা বিভক্থ। এই বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে হামাসের নেতৃবৃন্দ এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতেনিয়াহুর জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
রাশিয়ার সম্পদ
বাইডেন জি-সেভেন নেতাদের চাপ দিচ্ছেন তারা যেন ইউক্রেনকে সরাসরি অর্থ দিতে তার পরিকল্পনায় রাজি হয় এবং রাশিয়ার যে ২৮ হাজার কোটি ডলার আটকে রয়েছে তার সুদ ব্যবহার করে তাদের ঋণ শোধ করা হবে ।
অনুমান করা হচ্ছে এই জব্দ করা অর্থ থেকে বছরে তিন শ’ কোটি কিংবা তারও বেশি সুদ আসবে। কাজেই সুদের ঐ অর্থ থেকে ১০ বছর কিংবা তার বেশি সময়ের মধ্যে ৫ হাজার কোটি ডলারের ঐ ঋণ পরিশোধ সম্ভব হবে যে অবধি রাশিয়া ক্ষতিপূরণ না দেয়।
মে মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরও কম আগ্রাসী পরিকল্পনার ব্যাপারে রাজি হয়েছিল । সেই পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে ঐ অর্থের বার্ষিক সুদের অর্থ দেয়ার কথা বলা হয়েছিল।
তা ছাড়া এই সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে থাকছে আফ্রিকায় জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়ন।