অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

টি-২০ ক্রিকেট বিশ্ব্বকাপ

টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটঃ যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে সুপার ৮ পর্ব নিশ্চিত করল ভারত


ভারতের পেস বোলার আরশদিপ সিং আর সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ ম্যাচের এক পর্বে। ফটোঃ ১২ জুন, ২০২৪।
ভারতের পেস বোলার আরশদিপ সিং আর সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ ম্যাচের এক পর্বে। ফটোঃ ১২ জুন, ২০২৪।

শুরু হয়েছিল একটি এলবিডব্লিউ-র ফলে “সোনালি শূন্য” দিয়ে, তারপর একটু ভাল হবার আগে আরও খারাপ। অবশেষে যা সবার ধারনা ছিল তাই হল, যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট টিম টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হারলো। আর ভারত দ্বিতীয় পর্ব, সুপার ৮-এ তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলো।

ক্রিকেট পরাশক্তি পাকিস্তানকে আগের খেলায় পরাজিত করার পর আমেরিকানরা বুধবারের ম্যাচে আসে পর্বত-সমান মনোবল নিয়ে। কিন্তু ভারত, যারা টি২০ ফরম্যাটে বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং-এর শীর্ষে, তাদের শক্তির গভীরতা দেখাল, এবং তারা যাতে আরেকটি অঘটনের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করলো।

নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারত মাত্র তিন উইকেট হারিয়ে ১০ বল বাকি থাকতেই যুক্তরাষ্ট্রের ৮ উইকেট হারিয়ে ১১০ রান উতরে যায়। সাত উইকেটে ভারতের জয়ের কারিগর ছিলেন বাঁ-হাতি পেন বোলার আরশদিপ সিং, যিনি মাত্র ৯ রানে ৪টি উইকেট নেন, আর সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ যিনি ৪৯ বলে অপরাজিত ৫০ হাঁকান।

গ্রুপ এ তে আমেরিকানদের আরও একটা খেলা বাকি আছে, শুক্রবার ফ্লোরিডায় আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে। শেষ খেলায় জয় হলে যুক্তরাষ্ট্র সুপার ৮ নামের দ্বিতীয় পর্বে যেতে পাড়বে। প্রথম পর্ব থেকে মোট ৮টি দল – প্রতি গ্রুপের শীর্ষ দুজন – সুপার ৮ পর্বে খেলবে।

“আমরা এখন নতুন করে তৈরি হব, এবং নিজেদের মধ্যে কয়েকটি বৈঠক করবো,” যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপ্টেন অ্যারন জোন্স। “তারপর আমরা আয়ারল্যান্ডকে শক্তভাবে মোকাবেলা করবো, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই।”

প্রথম ওভারে ভারতের ভিরাট কোহলির উইকেট নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সৌরভ নেত্রাভালকরের আনন্দ। ফটোঃ ১২ জুন, ২০২৪।
প্রথম ওভারে ভারতের ভিরাট কোহলির উইকেট নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সৌরভ নেত্রাভালকরের আনন্দ। ফটোঃ ১২ জুন, ২০২৪।

ভারত টসে জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেয়। আরশদিপ সিং-এর প্রথম বল দ্রুত গতিতে উদ্বোধনী ব্যাটার শয়ন জাহাঙ্গীরের ব্যাট পাশ কাটিয়ে তার পায়ে আঘাত করে। জাহাঙ্গীরের ‘গোল্ডেন ডাক’ এবং কোন রান না করেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম উইকেটের পতন।

জাহাঙ্গীর মাঠ ত্যাগ করার কয়েক মিনিট পরেই সিং-এর প্রথম ওভারের শেষ বলে অ্যান্ড্রিস গউস হার্দিক পান্ডিয়ার হাতে ক্যাচ তুলে দেন। প্রথম ওভারে ৩ রানে ২ উইকেটের পতন মানে যুক্তরাষ্ট্রের শুরুটা ছিল শোচনীয়।

তবে তাদের ইনিংসের দ্বিতীয়ার্ধ ছিল তুলনামূলক ভাল। যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ১০ ওভারে ৪২ রান তোলে, আর শেষ ১০ ওভারে তাদের ব্যাট থেকে আসে ৬৮ রান। ইনিংসের শেষে তাদের মোট রান সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ১১০ – যেটা মোটামুটি সম্মানজনক বলা যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেন নিতিশ কুমার (২৭) এবং স্টিভেন টেইলর (২৪)। অধিনায়ক জোন্স, যার ৩৬ রান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ের পথ সুগম করেছিল এবং যিনি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে কানাডার বিরুদ্ধে ৯৪ হাঁকিয়েছিলেন, তিনি বুধবার মাত্র ১১ রান তুলতে সক্ষম হন।

“তারা একের পর এক ম্যাচে ভাল করছে, এবং আমি তাদের জন্য শুভ কামনা ছাড়া আর কিছুই আশা করবো না,” যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন। “সব পরিশ্রমী প্লেয়ার এবং যুক্তরাষ্ট্রে তারা তাদের চিহ্ন রেখে যাবে।”

অপরাজিত অর্ধশতক হাঁকানোর পর সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ মাঠে দর্শকদের অভিনন্দন গ্রহণ করছেন। ফটোঃ ১২ জুন, ২০২৪।
অপরাজিত অর্ধশতক হাঁকানোর পর সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ মাঠে দর্শকদের অভিনন্দন গ্রহণ করছেন। ফটোঃ ১২ জুন, ২০২৪।

ভারতের ইনিংসের শুরুটাও একটু নড়বরে ছিল। ভিরাট কোহলিও “গোল্ডেন ডাক” নিয়ে বিদায় নিলেন – সৌরভ নেত্রাভালকরের করা প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বল তার ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় উইকেট কিপার গউস-এর হাতে। নেত্রাভালকর তার দ্বিতীয় ওভারে তুলে নেন ভারতের ক্যাপ্টেন শর্মার উইকেট। তিন ওভার না জেতেই ভারত ১০ রানে ২ উইকেট।

কোহলি আর শর্মাকে অল্প খরচে বিদায় দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রর মনোবল বেশ চাঙ্গা হয়, বিশেষ করে ১১০ রানে নিজেদের ইনিংস শেষ করার পর। কিন্তু ভারত শুধু তাদের দুই তারকার উপর নির্ভরশীল না, তাদের ব্যাটিং-এ গভীরতা আছে।

জয়ের অন্য প্রয়োজনীয় ১১১ রান সংগ্রহ করার পথে ভারত আর মাত্র একটি উইকেট হারায়। ইয়াদাভের অপরাজিত অর্ধশতকের পরেই আসে শিভাম দুবে যিনি ধীরে খেলে ৩৫ বলে ৩১ রান করেন।

“হ্যাঁ, আমরা শুরুতে কয়েকটি উইকেট হারাই, কিন্তু সুরিয়া আর দুবেকে প্রশংসা করতে হয়, তারা ম্যাচিউরিটি দেখিয়েছে এবং খেলা শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছে,” শর্মা বলেন।

নিউ ইয়র্ক থেকে ঘণ্টা খানেক দূরে এই অস্থায়ী ক্রিকেট স্টেডিয়াম ভরে গিয়েছিল ভারতের হাল্কা নীল এবং কমলা রঙের জার্সি পরা হাজার হাজার সমর্থক দিয়ে। কিন্তু স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও প্রচুর সমর্থন ছিল।

মাঠে প্লেয়ারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমেরিকান ফ্যানরা।

“গত দু’বছর ধরে আমরা এটা নিয়েই কথা বলছি, ইউএসএ ক্রিকেটের জন্য আরও ফ্যান চাই,” বললেন জোন্স। “এখন এই হচ্ছে সময় যখন আমরা আসলেই উপভোগ করছি।”

XS
SM
MD
LG