যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বুধবার বলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে হামাস ‘অসংখ্য পরিবর্তনের’ প্রস্তাব দিয়েছে। কিছু কার্যকর করার মতো, কিছু কার্যকর করার মতো নয়।
“ইসরায়েল প্রস্তাবটি যেভাবে ছিল সেভাবেই গ্রহণ করেছে। হামাস তা করেনি,” দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিংকেন বলেন। “সামনের দিনগুলোতে আমরা জরুরি ভিত্তিতে আমাদের অংশীদার, কাতার ও মিশরকে সাথে নিয়ে এই চুক্তি সম্পন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাবো।”
মিশরসহ উপসাগরীয় দেশ কাতার গাজায় প্রস্তাবিত বহু পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতা করছে।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি সাংবাদিকদের বলেন, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজে বের করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী একটি স্থায়ী ও টেকসই সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন, যাতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ইসরায়েল পাশাপাশি টিকে থাকতে পারে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাসের প্রতিক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্র খতিয়ে দেখছে। ওই অঞ্চলে কূটনৈতিক সফরে থাকা ব্লিংকেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হামাসের দেয়া ওই খসড়া খতিয়ে দেখছেন বলে জানা গেছে, যেটা হামাস মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিশরকে দেয় ।
মিশরের গোয়েন্দা প্রধান আব্বাস কামেলের কাছ থেকে নথিটি নিতে প্রশাসনের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছিলেন ব্লিংকেন।
হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, “হামাসের প্রতিক্রিয়া দলটির এই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে যে, যেকোনো চুক্তিতে অবশ্যই আমাদের জনগণের ওপর জায়নবাদী আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে, ইসরায়েলি বাহিনীকে বের করে আনতে হবে, গাজা পুনর্গঠন করতে হবে এবং একটি গুরুতর বন্দি বিনিময় চুক্তি অর্জন করতে হবে।”
হোয়াইট হাউসের সতর্ক প্রতিক্রিয়া
বুধবার দিনের আগে,কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানির সাথে সাক্ষাত করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিশরীয় কর্মকর্তারা গাজায় প্রস্তাবিত বহুমাত্রিক যুদ্ধবিরতির বিষয়ে হামাসের প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন করছেন এসময়।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা যোগাযোগ উপদেষ্টা জন কারবি সাংবাদিকদের বলেন, হামাস মঙ্গলবার কাতার ও মিশরকে তাদের মতামত জানিয়েছে। তাদের জবাব গাজার শীর্ষ হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের অনুমোদিত বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
আলোচনার প্রক্রিয়া ব্যাহত হবার ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে তিনি এর চেয়ে বেশি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
“এখানে অনেক কিছু জড়িত, অনেক কিছু এই প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করছে, যার মধ্যে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জিম্মিদের জীবন,” কারবি বলেন। “এসময় আমারা কি বলছি বা কিভাবে বলছি সে ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া জরুরী।”
হামাস এবং অপেক্ষাকৃত ছোট ইসলামিক জিহাদ জঙ্গি গোষ্ঠীর মতে, তারা “একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ইতিবাচক ভূমিকার” জন্য প্রস্তুত এবং যুদ্ধ "সম্পূর্ণ বন্ধ" তেই অগ্রাধিকার দিবে।
হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, “এই প্রতিক্রিয়া হামাসের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। এতে যে কোনো চুক্তিতে অবশ্যই আমাদের জনগণের ওপর জায়োনিস্ট আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে, ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজা ছেড়ে যেতে হবে, গাজা পুনর্গঠন এবং গুরুতর বন্দি বিনিময় চুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”
বাইডেনের প্রস্তাব
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিস্তারিত প্রকাশ করে বলেছেন এটা ইসরাইলের প্রস্তাব। তার অন্যান্য কর্মকর্তারাও এতে সায় দিয়েছেন। মঙ্গলবার ব্লিংকেন বলেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চুক্তির প্রতি তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তবে এখানে বিতর্কের ক্ষেত্র রয়ে গেছে, যার মধ্যে আছে গাজা থেকে ইসরাইলের বাহিনী প্রত্যাহার বিষয়ক হামাসের দাবী এবং হামাসকে পরাজিত করার ইসরায়েলি অঙ্গিকার।
তিন ধাপের চুক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে যুদ্ধ বন্ধ, গাজা থেকে কিছু জিম্মিকে মুক্তি, ইসরাইলের হাতে আটক কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি, ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি, গাজার জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের তাদের বাড়িঘর ও আশপাশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে গাজায় বাকি সকল জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহারের বিনিময়ে লড়াই স্থায়ীভাবে বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।
চূড়ান্ত পর্যায়ে, আটমাস ধরে ইসরায়েলি বোমা-বর্ষণে বিধ্বস্ত গাজার দীর্ঘমেয়াদী পুনর্গঠন পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাছাড়া এটিতে গাজায় থাকা যে কোনও মৃত জিম্মির দেহাবশেষও ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলা আছে।
হিজবুল্লাহর রকেট নিক্ষেপ
এদিকে, বুধবার মধ্য গাজা এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় স্থল ও বিমান হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইসরায়েল।
তারা আরও জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ জঙ্গিরা ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে দেড় শতাধিক রকেট নিক্ষেপ করেছে , ফলে তারা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।
গত বছর ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। তাছাড়া ২৫০ জন জিম্মি হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভিযানে ৩৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্যুরো চিফ নাইকি চিং এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন। এপি, রয়টার্স এবং এ এফপি থেকে এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য নেয়া হয়েছে।