কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে হামাস গাজায় অস্ত্র-বিরতি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে। কাতার ও মিশর এই জবাব দেখছে এবং এটা নিশ্চিত করেছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ ব্যাপারে মধ্যস্থতা চালিয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে যে তারা হামাসের জবাব মূল্যায়ন করে দেখছে।
হামাস এবং ক্ষুদ্রতর ইসলামিক জিহাদ জঙ্গি গোষ্ঠির মতে যুদ্ধ “সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করাকে” অগ্রাধিকার দিয়ে তারা “একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে ইতিবাচক ভাবে বিষয়টি দেখবে”।
ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই চাইছে এই পরিকল্পনা তাদের পরস্পরবিরোধী লক্ষ্য অর্জনে যেন সহায়ক হয় যা কীনা এই চুক্তি চূড়ান্ত রূপ নেয়ার বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
হামাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, “ হামাসের জবাবে এই গোষ্ঠী অবস্থানকে আবার নিশ্চিত করা হয়েছে যে, যে কোন সমঝোতায় আমাদের জনগণের উপর ইহুদি আগ্রাসন বন্ধ করার কথা, ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার , গাজা পূননির্মাণ এবং গুরুত্বর সঙ্গে বন্দি বিনিময় সম্পন্ন করার বিষয়গুলি থাকতে হবে”।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র্মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গাজায় অস্ত্রবিরতি এবং যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য এখন মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছেন।
এই সব আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র বলছে তারা গাজায় ও আশপাশের এলাকায় ফিলিস্তিনি অসামরিক লোকজনকে আরও মানবিক সহায়তা প্রদান করছে।
জর্ডান আয়োজিত মানবিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, “আজ আমি ফিলিস্তিনিদের জন্য নতুন সাহায্য হিসেবে আরও ৪০ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার প্রদানের কথা ঘোষণা করছি। এটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র উন্নয়ন, অর্থনীতি এবং মানবিক সাহায্য বাবদ ২০২১ সাল থেকে যে ১৮০ কোটি ডলার দিয়েছে তার অতিরিক্তি।
তিনি অন্যান্য দাতাদেরও তাদের অবদান বৃদ্ধি করতে বলেন।
মানবিক সহায়তা
আন্তর্জাতিক অধিকার গোষ্ঠীসমুহ ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মতে গত মাসেই শুধু গাজার দক্ষিণের শহর রাফা থেকে ১০ লক্ষ লোক গৃহচ্যূত হয়েছেন। সেখানকার জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ বিশুদ্ধ খাবার পানিও পান না। গাজার পয়ঃব্যবস্থার বেশির ভাগই নষ্ট এবং সেখানকার ৪০ টি হাসপাতারে খুব কমই খোলা আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন অর্থায়ন গাজা, পশ্চিম তীর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঝুঁকির মুখে পড়া লোকজনকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে পারবে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য, নিরাপদ পানীয় জল, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিক্ষা, আশ্রয় ও সমাজ-মনস্তাত্বিক বিষয়ে সাহয্য প্রদান।
জর্দানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ মঙ্গলবার বলেন গাজায় ফিলিস্তিনিদের মানবিক সহায়তা প্রদান হচ্ছে “ আমাদের মানবিকতা ও আন্তরিকতার পরীক্ষা। ত্রাণ প্রদান আরও উন্নত করার বিষয়ে জর্দান , মিশর ও জাতিসংঘ এই সম্মেরনের আয়োজন করে।
তিনি এই সম্মেলনে বলেন “ আমরা গাজাকে ত্যাগ করতে পারিনা। এটা সকলের কাছেই অগ্রাধিকারের বিষয় হতে হবে কারণ আমাদের কর্ম দিয়েই ইতিহাস আমাদের বিচার করবে”।
ব্লিংকেনের সঙ্গে মঙ্গলবার বাদশাহ আব্দুল্লাহর পৃথক এক বৈঠকে তারা সামগ্রিক অস্ত্র-বিরতি এবং পণবন্দিদের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। পররাষ্ট্র বিভাগ বলছে , “এই প্রস্তাব হচ্ছে গাজায় যুদ্ধ শেষ করার সত্যিকারের এক পথচিত্র”।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে আসার সব পথ “চালু থাকতে হবে” এবং তিনি জোর দিয়ে বলেন যে স্থলপথগুলি, “খুবই গুরুত্বপূর্ণ”।
গুতেরেস বলেন , “গাজায় ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ পরিস্কার পানীয় জল পান না এবং তাঁরা খাদ্যাভাবের চরম স্তরে রয়েছেন”।
জাতিসংঘ প্রধান বলেন যে গাজায় যে দ্রুততার সঙ্গে এবং যে পরিমাণ লোককে হত্যা করা হয়েছে তেমনটি তিনি দেখেননি তাঁর এই মহাসচিব থাকার সময়।
গুতেরেস বলেন, “এই ভয়াবহতা বন্ধ করতে হবে। পণবন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং অস্ত্রবিরতির জন্য সময় এটা যথার্থ সময়”।
অস্ত্র-বিরতি চুক্তি
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন মঙ্গলবার বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় প্রস্তাবিত বহু-পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। হামাসই একমাত্র সংগঠন যারা এখনো এই পরিকল্পনায় সম্মত হয়নি।
ব্লিংকেন বলেন, ইসরায়েল ও হামাসকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদন করায় ‘এটি যতটা সম্ভব স্পষ্ট হয়েছে যে, বিশ্ব এটিই খুঁজছে।’
সোমবার ১৪-০ ভোটের পর হামাস এক বিবৃতিতে স্বাগত জানায় যে, “পরিষদ গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে” এবং “আমাদের জনগণ ও প্রতিরোধ গোষ্ঠীর দাবির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ” নীতিগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে পরোক্ষ আলোচনায় বসার ইচ্ছার ইঙ্গিত দিয়েছে।
মঙ্গলবার ব্লিংকেন বলেন, এই প্রতিক্রিয়া “আশাব্যঞ্জক লক্ষণ।”
“আমরা হামাসের জবাবের অপেক্ষায় আছি। এবং সেটাই বলে দেবে তারা কী চায়, তারা কী খুঁজছে, তারা কার যত্ন নিচ্ছে,” তিনি বলেন।
ব্লিংকেন এ’কথা বলেন বিরোধী নেতা ইয়াইর ল্যাপিড এবং প্রাক্তন মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ-এর সাথেয় বৈঠকের পর। নেতানিয়াহু যুদ্ধ পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা করছেন বলে অভিযোগ করে গ্যান্টজ রবিবার যুদ্ধকালীন সরকার থেকে বেরিয়ে আসেন।
এরই মধ্যে ব্লিংকেন ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তফার সঙ্গে মঙ্গলবার জর্দানে এক বৈঠকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ঘোষিত সংস্কার ঘোষণাকে স্বাগত জানান।
যুকাতরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে , ব্লিংকেন “ ইসরায়েলের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা সহ একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনকে পুনরায় নিশ্চিত করেন”।
এই প্রতিবেদনে পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যুরো চিফ নাইক চিং অবদান রেখেছেন। কিছু তথ্য দিয়েছে এপি, রয়টার্স ও এএফপি