অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

গাজা যুদ্ধঃ হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হলে ইসরায়েলও সম্মত হবে, আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র


গাজার কাছে এক ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক মহড়া দিচ্ছে। ফটোঃ ২ জুন, ২০২৪।
গাজার কাছে এক ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক মহড়া দিচ্ছে। ফটোঃ ২ জুন, ২০২৪।

হোয়াইট হাউস জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি রবিবার বলেছেন, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস যদি গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলের প্রস্তাবের সাথে একমত হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে ইসরায়েল সেই পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।

“এই প্রস্তাব একটি ইসরায়েলি প্রস্তাব। আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, হামাস যদি এই প্রস্তাব গ্রহণ করে – যেটা তাদেরকে দেয়া হয়েছিল, একটি ইসরায়েলি প্রস্তাব – তাহলে ইসরায়েল হ্যাঁ বলবে,” কারবি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবিসি নিউজ-এর “দিস উইক” অনুষ্ঠানে বলেন।

মিশর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততাকারিরা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেয়া যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির রূপরেখা মেনে নেয়ার জন্য দুপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গালান্ট রবিবার বলেন, শান্তি প্রক্রিয়ার কোন পর্যায়েই তারা হামাসকে গাজার শাসক হিসেবে মেনে নেবে না। তিনি বলেন তারা হামাসের বিকল্প কে হতে পারে তা ভেবে দেখছেন।

“আমারা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবো, এবং একই সাথে হামাসের বিকল্প প্রশাসন কী হতে পারে, তা যাচাই করছে প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ,” গালান্ট এক বিবৃতিতে বলেন।

“আমরা গাজার কিছু এলাকা আলাদা করবো, সেখান থেকে হামাস কর্মীদের বের করবো এবং ভিন্ন একটি বাহিনী মোতায়েন করবো যারা বিকল্প প্রশাসন গড়ে তুলতে সক্ষম হবে – যে বিকল্প হামাসকে হুমকির মুখে রাখবে,” গালান্ট বলেন।

সম্ভাব্য বিকল্প কী হতে পারে, তার বিস্তারিত কিছু তিনি বলেন নি।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু (বাঁয়ে) এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গালান্ট। ফাইল ফটোঃ ২৮ অক্টোবর, ২০২৩।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু (বাঁয়ে) এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গালান্ট। ফাইল ফটোঃ ২৮ অক্টোবর, ২০২৩।

গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের রূপরেখা দেয়ার পর দিনের পরের দিকে ইসরায়েলের যুদ্ধ সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা বৈঠকে বসবে বলে ইসরায়েলি মিডিইয়া জানিয়েছে।

নেতানিয়াহুর উপদেষ্টা

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক উপদেষ্টা রবিবার নিশ্চিত করেছেন, দেশটি গাজার যুদ্ধ অবসানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উত্থাপন করা চুক্তি মেনে নিয়েছে। তবে তিনি একে ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন এটির আরও অনেক সংশোধন প্রয়োজন।

ব্রিটেনের সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুর প্রধান পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা ওফির ফালক জানান, বাইডেনের প্রস্তাব হচ্ছে “এমন এক চুক্তি যার সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি—এটি ভালো কোনো চুক্তি নয়, কিন্তু আমরা মনেপ্রাণে চাই জিম্মিরা মুক্তি পাক। সকল জিম্মি।”

“এখনো অনেকগুলো বিষয় নিয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেওয়া বাকি আছে”, জানান তিনি এবং বলেন, ইসরায়েলি শর্তগুলো, যার মধ্যে আছে “জিম্মিদের মুক্তি ও গণহত্যাকারী জঙ্গি সংগঠন হামাসকে নির্মূল করা” এখনো বদলায়নি।

বাইডেন শুরুতে ইসরায়েলি হামলায় নিরঙ্কুশ সমর্থন জানালেও সাম্প্রতিক সময়ে এই অভিযানে অসংখ্য বেসামরিক মানুষ নিহতের ঘটনায় প্রকাশ্যে দেশটির সমালোচনা করেছেন। তিনি যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে নেতানিয়াহুর সরকারের দেয়া তিন ধাপের একটি পরিকল্পনা শুক্রবার উপস্থাপন করেন।

তুরস্কের ইস্তানবুলে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ফটোঃ ১ জুন, ২০২৪।
তুরস্কের ইস্তানবুলে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ফটোঃ ১ জুন, ২০২৪।

প্রথম ধাপে যুদ্ধে বিরতি দেওয়া হবে এবং হামাসের হাতে বন্দি কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এরপর উভয় পক্ষ দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ী ভাবে লড়াই বন্ধ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করবে এবং এই ধাপের অংশ হিসেবে বাকি জিম্মিরা মুক্তি পাবেন, জানান বাইডেন।

ফালক আবারও নেতানিয়াহুর অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমাদের সকল লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হবে না।”

নেতানিয়াহু তার জোট সরকারকে ধরে রাখতে চাপের মুখে আছেন। তার দুই কট্টর ডানপন্থী অংশীদার হুমকি দিয়েছেন, হামাসকে রেহাই দেওয়া হবে এমন কোনো চুক্তিতে সম্মতি দিলে তারা সরকার ছেড়ে যাবেন। মধ্যমপন্থী অংশীদার সাবেক সেনা-জেনারেল বেনি গ্যান্টজ চান এই চুক্তি বিবেচনা করা হোক।

বাইডেনের এই উদ্যোগকে প্রাথমিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে হামাস।

হামাসের দাবিগুলো হল গাজায় স্থায়ীভাবে আগ্রাসন বন্ধের নিশ্চয়তা, ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, ফিলিস্তিনিদের অবাধে চলাফেরা করার অনুমতি ও পুনর্নির্মাণ কাজের জন্য ত্রাণ সহায়তা।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এ ধরনের শর্ত নাকচ করেছেন এই বলে যে, এটা কার্যত ৭ অক্টোবরের আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়ার সমতুল্য। সে সময় ইসরায়েল ধ্বংসের চেতনায় বলিয়ান হামাস গাজা শাসন করছিল। সে দিন হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলি সীমান্তের বেড়া পেরিয়ে এসে অতর্কিত হামলা চালালে যুদ্ধের সূচনা হয়। ইসরায়েলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় ১,২০০ মানুষ নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫০ জন।

এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল পাল্টাহামলা শুরুর করে, যার জেরে দরিদ্র ও উপকূলীয় ভূখণ্ডটিতে ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। ইসরায়েলের দাবি, তাদের ২৯০ সেনা এই যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে।

XS
SM
MD
LG