কয়েক বছরের মধ্যে প্রথমবার চলতি সপ্তাহে উত্তর কোরিয়া ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা প্রকাশ্যে এসেছে। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বেইজিং এক যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করায় পিয়ংইয়ং তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
সামরিক গুপ্তচর উপগ্রহ উৎক্ষেপণে উত্তর কোরিয়ার সর্বসাম্প্রতিক প্রচেষ্টা চীনের এক বৃহৎ কূটনৈতিক উদ্যোগকে ব্যাহত করায় দুই মিত্র দেশের মধ্যে এই আপাত সংঘাতের সূত্রপাত।
উত্তর কোরিয়া যখন ঘোষণা করে, তারা উপগ্রহ উৎক্ষেপণ পরিচালনা করবে তখন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং সোওলে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই বৈঠক ত্রিপাক্ষিক সংলাপের একটি অংশ। এই আলাপ-আলোচনা প্রায় পাঁচ বছরে একবারও হয়নি।
সোমবার বিকালে ত্রিপাক্ষিক আলোচনা শেষ হওয়ার কয়েক ঘন্টা পর আগ্নেয় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উপগ্রহ আকাশে উৎক্ষিপ্ত হয়।
নজিরবিহীন না হলেও, চীনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বড় রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে এ এক বিরল মতানৈক্যের প্রকাশ। অথচ দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়ার প্রধান মিত্র ও অর্থনৈতিক জীবনদাতা চীন।
হাওয়াইয়ের ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টারের কোরিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জাঁ লি-র বক্তব্য অনুযায়ী, এই ঘটনা বুঝিয়ে দিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে “ঠোঁট ও দাঁতের নৈকট্যের মতো” যে সম্পর্কের কথা দু’পক্ষই জোর দিয়ে বলছিল তাতে ফাটল ধরেছে যা উভয়পক্ষই বহুদিন ধরে চেপে রেখেছে ।”
তিনি আরও বলেন, “আমার মনে হয়, আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি তা হল, সামান্য একটু চাপ পড়লেই এই ফাটল বৃদ্ধি পেয়ে আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে।”
উত্তর কোরিয়ার এই কর্মকাণ্ড চীনের লি-কে অস্বস্তি ও বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। তিনি তখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়োলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। উভয়েই এই আসন্ন উৎক্ষেপণের নিন্দা করেন।
সরকার-পরিচালিত কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি এক বিবৃতি প্রকাশ করে যেখানে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তিন দেশকে “ উপহাস ও তামাশা ” করার জন্য অভিযুক্ত করেছে। পাশাপাশি সে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি “স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ” ও তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে “অহেতুক হস্তক্ষেপ” হিসেবে আখ্যা দিয়ে এই দেশগুলিকে নিন্দা করেছে পিয়ংইয়ং।
২০১৭ সাল থেকে এই অবধি উত্তর কোরিয়া চীনের এতটা নগ্ন সমালোচনা করেনি। সে বছরই বেইজিং উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছিল।
তারপর থেকে উত্তর কোরিয়া ও চীনের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। নতুন একাধিক নিষেধাজ্ঞা বিরোধিতা করছে এখন চীন। এমনকি, জাতিসংঘের প্রস্তাবে নিষিদ্ধ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে নাটকীয়ভাবে সম্প্রসারিত করেছে উত্তর কোরিয়া। অথচ এই প্রস্তাবকে এক সময় সমর্থন করেছিল চীন।
তবে, আস্তরণের নিচে সমস্যার ইঙ্গিত ও লক্ষণ রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চীনের নেতা শি জিনপিং পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।
ইতোমধ্যে, সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার সুদূর পূর্বপ্রান্তে সফর করেছিলেন কিম। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা সম্প্রসারিত করতে সম্মত হন।
কিছু বিশ্লেষক বলছেন, রাশিয়া যদি তাদের সীমান্তে উল্লেখযোগ্য পারমাণবিক স্থাপনা নির্মাণ করে তাহলে চীনের তাতে অস্বস্তি হতে পারে। আর এতে সাম্প্রতিক উত্তেজনার কিছু ব্যাখ্যা পাওয়া যেতে পারে।