বুধবার আফগানিস্তানের তালিবান শাসকরা জুন মাসের ৩০ তারিখে দোহায় জাতিসংঘ আয়োজিত বৈঠকে যোগ দেয়ার ব্যাপারে তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এই বৈঠকের লক্ষ্য হচ্ছে বহু সংকটের সম্মুখীন এই দেশটির সঙ্গে বিশ্বের সম্পৃক্ততাতে সহায়তা করা এবং সমন্বয় সাধন করা।
এই ঘোষণার এক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের একজন ঊর্ধ্বতন কুটনীতিক কাবুল সফর করেন এবং বর্তমান এই কর্তৃপক্ষকে আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূতদের এই দু’দিন ব্যাপী সম্মেলনে যোগ দিতে “অগ্রিম আমন্ত্রণ জানান”।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আফগানিস্তানের সঙ্গে “আরও একত্রিত হয়ে, সমন্বয়ের সাথে এবং কাঠামোর মধ্য দিয়ে” যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই প্রক্রিয়া ২০২৩ সালের মে মাসে শুরু করেন। তার পর থেকে কাতারের রাজধানীতে আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে এটি হবে তৃতীয় আন্তর্জাতিক আয়োজন।
তালিবানের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জাকির জালালিেআফগান রাজধানীতে তাঁর অধস্তনদের উদ্দেশ্যে দেয়া “মূল ভাষণে” বলেন দোহায় , “ ইসলামিক আমিরাতের প্রতিনিধিরা মূল আলোচনায় অংশ নেবেন”। মন্ত্রনালয়ের একজন মুখপাত্র বুধবার এক্স ‘এ তাঁর বিস্তারিত মন্তব্য পোষ্ট করেন।
জালালি বলেন দোহা -৩ বৈঠকে অংশ গ্রহণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত পরে ঘোষণা করা হবে। পূর্বেকার দু’টি বৈঠকে যোগ না দেয়ার তালিবানের সিদ্ধান্তকে তিনি এই বলে সমর্থন করেন যে কাবুলের জন্য কোন রকম “প্রতীকি অংশগ্রহণ হতো অনর্থক কারণ আয়োজকরা আলোচ্যসূচি সম্পর্কে আপত্তি নিরসন করতে এবং শর্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
জালালি বলেন “তবে দোহার এই তৃতীয় বৈঠকের আলোচ্যসূচী ইতিবাচক ভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে এবং আলোচনার বিষয়বস্তুগুলির মধ্যে কোন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে আসন্ন বৈঠকে আফগানিস্তান যে আর্থিক ও ব্যাংকিং সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন, আফিম চাষীদের বিকল্প পেশা এবং দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হবে।
জালালি বলেন তালিবানের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় দোহা বৈঠক সম্পর্কে জাতিসংঘের সর্বসাম্প্রতিক বিস্তারিত আলোচ্যসূচীর জন্য অপেক্ষা করছে যাতে কাবুল সরকার সেখানে তাদের প্রতিনিধি পাঠাতে পারে।
রাজনীতি ও শান্তি বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি রোজম্যারি ডিকার্ডো ১৮ থেকে ২১ মে আফগানিস্তান সফর করেন এবং সেখানে তিনি অন্যান্যদের মধ্যে তালিবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে ৩০ জুনের বৈঠক নিয়ে আলোচনা করেন ।
দোহায় দ্বিতীয় বৈঠকের আগে তালিবান জাতিসংঘের কাছে জানতে চেয়েছিল যে তাদের প্রতিনিধিদেরই সে দেশের একমাত্র সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে যেন গ্রহণ করা হোক , তার মানে আফগান নাগরিক সমাজের সক্রিবাদীরা এবং বিরোাধী গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিরা সেখানে যেন উপস্থিত না থাকে। তবে গুতেরেস দ্বিতীয় দোহা বৈঠকের শেষে সংবাদদাতাদের অবহিত করতে গিয়ে তালিবানের শর্তগুলি প্রত্য়াখ্যান করেন।
তবে এবার আসন্ন এই দোহা বৈঠকে তালিবানকে আমন্ত্রণ জানানোর ব্যাপারে আফগান অধিকার গোষ্ঠীগুলি এবং সক্রিয়বাদীরা জাতিসংঘের সমালোচনা করে বলেছেন যে এর ফলে তালিবান নারীদের উপর আরও কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপে সাহস পাবে।
তবে এই সমালোচনার জবাবে জাতিসংঘের মুখপাত্রী স্টেফেনি দুজারিচ নিউ ইয়র্কে সংবাদদাতাদের বলেন যে তাদের সংগঠন তালিবানের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে চলেছে কারণ “ তারাই আফগানিস্তানের প্রকৃত কর্তৃপক্ষ”।