অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইরানঃ রাইসির মৃত্যুর পর কে হতে পারেন প্রেসিডেন্ট?


ইরানের রাষ্ট্র-সমর্থিত গণমাধ্যম 'আসর ইরান'-এ ২০০৮ সালে প্রকাশিত ছবিতে আলী লারিজানি (বাঁয়ে) এবং সাঈদ জালালিকে আলাপ করতে দেখা যাচ্ছে।
ইরানের রাষ্ট্র-সমর্থিত গণমাধ্যম 'আসর ইরান'-এ ২০০৮ সালে প্রকাশিত ছবিতে আলী লারিজানি (বাঁয়ে) এবং সাঈদ জালালিকে আলাপ করতে দেখা যাচ্ছে।

ইরানে এক মাসের মধ্যেই হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। উনিশে মে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হবার পর তার পদ পূরণেরে জন্য এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এরই মাঝে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেবলমাত্র রক্ষণশীল প্রার্থীরাই যে অনুমোদন লাভ করতে পারে তার একটি সুস্পষ্ট পরিষ্কার চিত্র উঠে এসেছে।

ইরান সরকার ২৮জুন নির্বাচনের দিন ধার্য করেছে। বৃহস্পতিবার থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম রেজিস্টার করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে ৫ দিন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অনুগতদের নিয়ে গঠিত সংস্থা গার্ডিয়ান কাউন্সিলের সদস্যরা প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই করবেন। গার্ডিয়ান কাউন্সিলের সদস্যরা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত নন।

রবিবার প্রকাশিত খবরে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে যে নির্বাচনের প্রায় দু’সপ্তাহ আগে কাউন্সিল অনুমোদিত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

রাইসি ২০২১ সালের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক কম ভোটারদের অংশগ্রহণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। গার্ডিয়ান কাউন্সিল রাইসির সবচেয়ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ নিষিদ্ধ করার ফলে অনেক ইরানিয়ান নির্বাচন সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

কিছু পর্যবেক্ষকের মতে, ঐ নির্বাচনটি ছিল ৮৫ বছর বয়সী খামেনির শিষ্য রাইসীকে উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নেয়া যা তাঁর সর্বোচ্চ নেতার হওয়ার লক্ষণ হিসেবে দেখা হয়।

ইরানের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মোখবার সংসদের নতুন অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছেন। ফটোঃ ২৭ মে, ২০২৪।
ইরানের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মোখবার সংসদের নতুন অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছেন। ফটোঃ ২৭ মে, ২০২৪।

মোহাম্মদ মোখবার

আগামী মাসের নির্বাচনে একজন সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার। তিনি প্রয়াত প্রেসিডেন্ট রাইসির প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং ইরানের ইসলামপন্থী সংবিধানের শর্তানুসারে, রাইসির মৃত্যুর পর তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম সারির একজন ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক প্রচারণা সংস্থা ইউনাইটেড এগেনস্ট নিউক্লিয়ার ইরানের (ইউএএনআই)এর পলিসি ডাইরেক্টার এবং ইরানের রাজনীতি বিষয়ক দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষক জেসন ব্রডস্কি বলেন, মোখবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধন করবেন কিনা সে সম্পর্কে তিনি মিশ্র সংকেত দেখতে পাচ্ছেন।

সোমবার ভয়েস অব আমেরিকার “ফ্ল্যাশপয়েন্ট গ্লোবাল ক্রাইসিস” প্রোগ্রামকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অন্যান্য সম্ভাব্য প্রতিযোগীদের নিয়েও আলোচনা করেন।

এই সাক্ষাৎকারটি স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা এবং সংক্ষিপ্ত করার জন্য এডিট করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সাঈদ জালিলি। ফাইল ফটোঃ ৮ জুন, ২০২২।
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সাঈদ জালিলি। ফাইল ফটোঃ ৮ জুন, ২০২২।

ভিওএঃ সর্বোচ্চ নেতা খামেনি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাকে দেখতে চান, সে বিষয়ে কিধরণের লক্ষণগুলোর দিকে আমাদের নজর দেওয়া উচিত?

জেসন ব্রডস্কিঃ গার্ডিয়ান কাউন্সিল কোন প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণা করে তা আমাদের দেখতে হবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই রাউন্ডে ইরানের প্রচার মধ্যমে কয়েকজন ঘোষিত এবং সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন যাদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে। আমি তাদের তালিকা সংক্ষেপে তুলে ধরছি।

একজন হলেন সাঈদ জালিলি। কট্টরপন্থী জালিলি সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সাবেক সেক্রেটারি ছিলেন এবং বর্তমানে কাউন্সিলে খামেনির প্রতিনিধি। জালিলি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এগিয়ে নিতে জোরালো পদক্ষেপ সমর্থন করে আসছেন [যাকে তেহরান বলছে শান্তিপূর্ণ এবং পশ্চিমা শক্তিগুলো ভয় পায় যে ইরান একে পারমাণবিক অস্ত্র বিকাশের লক্ষ্যে করা হচ্ছে]। জালিলি ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট পদে তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।

আলি লারিজানি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক। ফাইল ফটোঃ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০।
আলি লারিজানি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক। ফাইল ফটোঃ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০।

আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হচ্ছেন আলি লারিজানি। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণে ইচ্ছুক বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে তিনি ক্ষমতাসীন সরকারের কাছ থেকে প্রার্থী হওয়ার সবুজ সংকেত পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত নন।

তিনি ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।

লারিজানি সম্ভবত সবচাইতে যোগ্য সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী যিনি ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের আমলাতন্ত্রের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল ছিলেন।

তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রী, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরান ব্রডকাস্টিং (আইআরআইবি-র) প্রধান এবং সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি এবং সংসদের স্পিকার ছিলেন।

Mourners attend a burial ceremony of the late Iran's President Ebrahim Raisi in Mashhad
ইরানের মাশদাদ শহরে রাইসির জানাজায় উপস্থিত ভক্ত। ফটোঃ ২৩ মে, ২০২৪।

মেহেরদাদ বাজরপাশ

ইরানের সড়ক ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী মেহেরদাদ বাজরপাশকেও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের প্রশাসনের সাবেক এক কর্মকর্তা। এর আগে বাজরপাশ বাসিজ মিলিশিয়া সংগঠনের সদস্য ছিলেন।

তিনি ‘হেজবল্লাহি’ ( ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের একনিষ্ঠ সমর্থক) বলে পরিচিত তরুণ প্রজন্মের সদস্য, যাদের খামেনী গড়ে তুলেছেন।

পারভিজ ফাত্তাহ

আরেক জন প্রার্থী হচ্ছেন পারভিজ ফাত্তাহ। তিনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এক্সিকিউশন অফ ইমাম খামেনিজ অর্ডারের (ইআইকেও)প্রধান।

তিনি ইরানের শীর্ষ সামরিক বাহিনী, ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)সাবেক কর্মকর্তা এবং বেশ কয়েকটি অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান।

যেমন, ফাত্তাহ মোস্তাজাফান ফাউন্ডেশন দাতব্য সংস্থা এবং আইআরজিসি কো-অপারেটিভ ফাউন্ডেশনের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তার ওপরে যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত একাধিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

ভিওএঃ খামেনি তার পরবর্তী প্রেসিডেন্টের মাঝে কি ধরণের গুণাবলী বা যোগ্যতা দেখতে চান বলে আপনি মনে করেন?

ব্রডস্কিঃ আমি মনে করি, খামেনি ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের উত্তরাধিকারী কে হবেন তার ওপরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছেন। এটাই তার সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার।

ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসের এক স্পর্শকাতর মুহূর্তে তিনি এমন কাউকে প্রেসিডেন্ট পদে বসাতে চান যিনি হবেন অত্যন্ত বিশ্বস্ত।

এটা ভুলে গেলে হবে না যে ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট চার বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকবেন। সুতরাং, খামেনি লম্বা সময়ের জন্য এই পদটি পূরণ করছেন এবং তিনি নিশ্চিত করতে চান যে, প্রেসিডেন্ট পদে যিনিই নির্বাচিত হবেন তিনি যেন তার উত্তরাধিকারী নির্বাচন প্রক্রিয়ার অগ্রাধিকারগুলোর ক্ষেত্রে কোন সমস্যা সৃষ্টি না করেন।

XS
SM
MD
LG