যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ এক মাস-ব্যাপী ক্রিকেট উৎসবে মেতে উঠবে ১ জুন থেকে, সাথে যোগ দেবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে লক্ষ লক্ষ ক্রিকেট-প্রেমী মানুষ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি আয়োজিত পুরুষদের নবম টি-২০ বিশ্বকাপ চলবে ২৭ জুন পর্যন্ত।
এ’বছরের টুর্নামেন্টে ২০টি টিম নেয়ার জন্য আইসিসি ফরম্যাট বদলেছে। প্রথম রাউন্ডে থাকবে চারটি গ্রুপ, প্রতি গ্রুপে পাঁচটি করে দল। গ্রুপের ভেতর প্রতিটি টিম একে অপরকে একবার করে খেলবে।
প্রথম পর্বে ১ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত মোট ৪০টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দুটি টিম দ্বিতীয় পর্ব বা সুপার ৮ পর্বে অগ্রসর হবে, যেখানে মোট ৮টি দলকে দুটি গ্রুপে ভাগ করা হবে। গ্রুপের ভেতর প্রতিটি দল একে অপরের সাথে একবার করে খেলবে। সুপার ৮ পর্বে ১৯ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ১২টি ম্যাচ হবে।
সুপার ৮-এর প্রতি গ্রুপের শীর্ষ দুই দল সেমি-ফাইনাল পর্বে অগ্রসর হবে। শেষ দুটি টিম ২৯ জুন বারবেডসের ব্রিজটাউনের কেনজিংটন ওভাল মাঠে টি-২০ শিরোপার জন্য লড়াই করবে।
জুন মাসের ২৯ দিন ধরে ক্রিকেট-প্রেমী বিশ্ব মোট ৫৫টি ম্যাচ উপভোগ করতে পাড়বে। যে দুটি দল ফাইনালে পৌঁছাবে তারা সর্বোচ্চ ৯টি ম্যাচে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে।
কোন গ্রুপে কে?
- গ্রুপ এঃ যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ভারত, আয়ারম্যান্ড, কানাডা।
- গ্রুপ বিঃ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড, ওমান।
- গ্রুপ সিঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউ জিল্যান্ড, আফগানিস্তান, উগান্ডা, পাপুয়া নিউ গিনি।
- গ্রুপ ডিঃ বাংলাদেশ, শ্রী লঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস, নেপাল।
যুক্তরাষ্ট্রের কোথায় হবে ..
স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পুরুষদের নবম আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপ এক ধরনের আশীর্বাদ বলা যেতে পারে। এই আয়োজনে তারা প্রমাণ করতে পাড়বে বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন শক্তি হিসেবে উঠে আসার সম্ভাবনা তাদের কতটুকু।
টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজনে অংশ নেবার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ বাড়তে পারে – ঠিক যেভাবে ১৯৯৪ সালের ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করার ফলে এ’দেশে ‘সকার’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়ামোদীরা ইতোমধ্যে ব্যাট-বল নিয়ে খেলা বেজবল নিয়ে পাগল। কাজেই অনেকের ধারনা ক্রিকেট, বিশেষ করে টি-২০’র মত গতি সম্পন্ন, ব্যাট দিয়ে বেধড়ক বল পেটানোর খেলা আমেরিকানদের মনঃপুত হতে পারে।
প্রথম পর্বের ৪০টি ম্যাচের ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি জায়গায় অনুষ্ঠিত হবে – নিউ ইয়র্কের ঝকঝকা নতুন নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৮টি; টেক্সাসের ডালাসে, গ্র্যান্ড প্রেইরি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৪টি; আর ফ্লোরিডার লডারহিলের সেন্ট্রাল ব্রাওয়ারড পার্ক অ্যান্ড ব্রাওয়ারড কাউন্টি স্টেডিয়ামে ৪টি।
.. আর বাকি সব ওয়েস্ট ইন্ডিজে
প্রথম পর্বের বাকি ২৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে, যাদের নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড এবং দল গঠন করা হয়।
গায়ানার দ্য প্রভিডেন্স স্টেডিয়াম আর বারবেডসের ব্রিজটাউনের কেনজিংটন ওভালে পাঁচটি করে খেলা হবে।
অ্যান্টিগা এবং ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবেগোতে ৪টি করে খেলা হবে। এই ম্যাচগুলোর ভেন্যু দুটির নামকরণ হয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল ব্যাটারদের মধ্যে অন্যতম দুজনের নামে – অ্যান্টিগার নর্থ সাউন্ডে দ্য স্যার ভিভিয়ান রিচারডস স্টেডিয়াম এবং ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবেগোর দ্য ব্রায়ান লারা ক্রিকেট একাডেমী।
সেইন্ট লুসিয়ার গ্রস আইলেটে ৩টি খেলা হবে, যে মাঠের নামকরণ হয়েছে আরেকজন, তুলনামূলক সাম্প্রতিক তারকার নামে, দ্য ড্যারেন স্যামি ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সেইন্ট ভিন্সেন্ট-এর আরনস ভেল গ্রাউন্ডেও হবে ৩টি।
সকল অ্যাকশন ক্যারিবিয় সাগরে
এই গেল প্রথম পর্ব।
সুপার ৮ পর্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্যুগুলোর আর কোন ভূমিকা থাকবে না, এবং মাঠের সব অ্যাকশন হবে ক্যারিবিয় সাগর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা দেশগুলোতে। টুর্নামেন্ট দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় গিয়ারে উঠে যাবে ১৯ জুন, যখন সুপার ৮-এর প্রথম খেলা শুরু হবে।
এই পর্বের ১২টির মধ্যে ৪টি অনুষ্ঠিত হবে অ্যান্টিগায়, আর বারবেডস এবং সেইন্ট লুসিয়ায় হবে ৩টি করে। সেইন্ট ভিন্সেন্টে হবে ২টি ম্যাচ, যার মধ্যে থাকবে ২৪ জুন সুপার ৮-এর শেষ খেলা।
দ্বিতীয় পর্ব শেষে টিকে থাকা চারটি দল নক-আউট পর্ব, অর্থাৎ সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি হবে। দুটি সেমি-ফাইনালের প্রথমটি হবে ২৬ জুন ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবেগোতে, আর দ্বিতীয় সেমি –ফাইনাল ২৭ জুন অ্যান্টিগায়।
ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ২৯ জুন বারবেডসে, যেখানে সূর্য, সমুদ্র আর সীমাহীন ফুর্তির জন্য লক্ষ লক্ষ পর্যটক প্রতি বছর বেড়াতে আসেন।
জ্যামাইকা কোথায়?
তবে এখানে ভেন্যু হিসেবে একটি দেশের অনুপস্থিতি চোখে পরার মত – জ্যামাইকা।
যদি যুক্তরাষ্ট্রকে যৌথ-স্বাগতিক হিসেবে দেখে অনেকে ভ্রু কুঁচকিয়ে থাকেন, তাহলে জ্যামাইকায় একটি খেলাও না থাকায় তাদের রীতিমত বিস্মিত হবার কথা।
জ্যামাইকার রাজধানী কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কের নাম বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট প্রেমীদের মনে গেঁথে রয়েছে। ক্রিকেটের ইতিহাসে অনেক আলোড়ন সৃষ্টিকারী ম্যাচ হয়েছে এই মাঠে।
স্যাবাইনা পার্ক ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বহু তারকার নিজস্ব মাঠ – জর্জ হেডলি, আলফ ভ্যালেন্টাইন, লরেন্স রো, মাইকেল হোল্ডিং, কোর্টনি ওয়ালশ, ক্রিস গেইল।
কিন্তু দেখা গেল, জ্যামাইকা সরকার কয়েকটি ম্যাচের আয়োজন করার খরচ আর মুনাফার হিসেব কষে সিদ্ধান্ত নিলো, এটা তাদের পোষাবে না।
কারা খেলছে এবং কেন
আইসিসির লক্ষ্য হচ্ছে আরও কিছু দেশকে ক্রিকেটের প্রান্ত থেকে কেন্দ্রে নিয়ে আসা। সেজন্য এই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা ১৬ থেকে বাড়িয়ে ২০ করা হয়েছে।
এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আইসিসি টুর্নামেন্টে কোয়ালিফাই করার জন্য নতুন পদ্ধতি নিয়ে আসে।
নতুন এই কোয়ালিফিকেশন পদ্ধতি ২০২১ সালে ঘোষণা করা হয়, এবং তা পরের বছর কার্যকর করা হয়। পদ্ধতির ফর্মুলা ছিল নিম্নরূপ:
- আগের বিশ্বকাপ (২০২২)-এর শীর্ষ ৮টি দল এমনিতেই কোয়ালিফাই করবে।
- স্বাগতিক দুই দেশ।
- আইসিসি টি-২০ তালিকায় ৮ এবং ৯ নম্বরে থাকা টিম।
- আঞ্চলিক কোয়ালিফিকেশন পদ্ধতিতে আরও ৮টি দেশ।
সর্বশেষ ২০
যে পথ দিয়ে ২০টি দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্দেশ্যে তাদের বিমান যাত্রা বুক করতে পেরেছে , তা হল নিম্নরূপ:
- স্বাগতিক দেশ: যুক্তরাষ্ট্র আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
- শীর্ষ ৮, ২০০২ বিশ্বকাপঃ অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নেদারল্যান্ডস, নিউ জিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রী লঙ্কা।
- আইসিসি টি-২০ র্যাঙ্কিংঃ আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ।
- ইউরোপ অঞ্চল: আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড।
- পূর্ব এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল: পাপুয়া নিউ গিনি।
- আমেরিকা অঞ্চল: কানাডা।
- এশিয়া: নেপাল এবং ওমান।
- আফ্রিকাঃ উগান্ডা এবং নামিবিয়া।
ক্রিকেটের এই ফরম্যাট ব্রিটেনের প্রাক্তন উপনিবেশগুলোতে বেশ জেঁকে বসেছে – ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড থেকে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং শ্রী লঙ্কা।
আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশেও ক্রিকেটের কদর বাড়ছে।
এখন শুধু আমেরিকা জয়ের অপেক্ষায় থাকলো ৪০০ বছর পুরানো এই খেলা।