মঙ্গলবার বেলজিয়ামের কাছ থেকে ৩০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহের প্রতিশ্রুতিসহ ১০০ কোটি ডলারের বেশি নতুন সামরিক সহায়তা নিশ্চিৎ করেছে ইউক্রেন।
২০২২ সালে শুরু হওয়া রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি তার ব্রাসেলস সফরকালীন সময় এই চুক্তিটি করেন।
জেলেন্সকি এক্স প্ল্যাটফর্মে বলেন, এই চুক্তিতে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী ও বিমান প্রতিরক্ষা চাহিদা পূরণের জন্য বেলজিয়ামের সময়োপযোগী নিরাপত্তা সহায়তা, আধুনিক সাঁজোয়া যান, সরঞ্জাম সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এতে সামরিক প্রশিক্ষণের নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া, ১০ বছরের এই চুক্তিতে গোয়েন্দা তথ্য, সাইবার নিরাপত্তা, মিথ্যা তথ্য মোকাবেলা এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে বেলজিয়ামকে সহযোগিতা করাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের এই নেতা।
সোমবার ইউক্রেন এবং স্পেন ১.১ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৭ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি সামরিক সহায়তার জন্য এই বছর একটি চুক্তি ঘোষণা করেছে। চুক্তি অনুযায়ী স্পেন ইউক্রেনকে লেপার্ড ট্যাঙ্ক এবং আর্টিলারি গোলাবারুদ সরবরাহ করবে।
মাদ্রিদের এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেন্সকি পশ্চিমের মিত্রদের কাছে তাদের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আত্মরক্ষার্থে রাশিয়ার অভ্যন্তরে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার অনুমতি চেয়েছেন। রাশিয়ার বিমান হামলা থেকে ইউক্রেনকে রক্ষা করতে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন উল্লেখ করেন জেলেন্সকি।
প্রতি মাসে ইউক্রেনের অভ্যন্তরে তিন হাজার রুশ বিমান হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন মিত্রদের মধ্যে যারা এই পরামর্শ দিতে ভয় পাচ্ছেন তাদেরও বোঝা উচিত যে এটি আক্রমণ নয় বরং বিমান প্রতিরক্ষা মাত্র।
নেটো প্রধান সোমবার বুলগেরিয়া সফরকালে বলেন, রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত হানার বিষয়টিতে তাদের দান করা অস্ত্র ব্যবহারের বিধিনিষেধ পুনর্বিবেচনা করা উচিত। “ইউক্রেনের বাইরে বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে” আঘাত হানাসহ আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে ইউক্রেনের।
নেটো এই সংঘাতের একটি পক্ষ নয় তবে এর মিত্রদের সামরিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ইউক্রেনের আত্মরক্ষার অধিকার বজায় রাখতে সহায়তা করার অধিকার তাদের রয়েছে বলে স্টলটেনবার্গ তার মত প্রকাশ করেন।
পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের ঝুঁকি নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ। তিনি আরও বলেন, পশ্চিমাদের অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনকে হামলা চালাতে দেয়া মানে হচ্ছে তারা পরবর্তী বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি নিচ্ছে।
রাশিয়ার সঙ্গে নেটো সংঘাতের দিকে যাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ বলেন, “সরাসরি না থাকলেও তারা এর মধ্যে যুক্ত রয়েছে।“
রাশিয়ার অভ্যন্তরে বেসামরিক এলাকা এবং রাশিয়ার পারমাণবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কিছু অংশে ইউক্রেনের হামলা উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছে বলে সতর্ক করেছেন রুশ কর্মকর্তারা।
তাছাড়া, রাশিয়া ও নেটোর মধ্যে ইউক্রেন নিয়ে সরাসরি এই সংঘাত বিশ্বকে যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোতে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইউরোপীয় নেতাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
রাশিয়ার ভেতরে আঘাত করতে ইউক্রেনকে আরও স্বাধীনতা দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। তাদের এই বিষয়ে আরও সতর্ক থাকতে হবে বলে তিনি রবিবার ইতালিয়ান টেলিভিশনকে বলেছেন।
তবে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন চলতি মাসে কিয়েভ সফরে গিয়ে তাদের অনুদানের অস্ত্র রাশিয়ায় ব্যবহারের অধিকারের সপক্ষে কথা বলেন।
কিছু তথ্য এপি, এএফপি প্রেস এবং রয়টার্স থেকে নেয়া।