ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান আরও কয়েকজন কর্মকর্তাসহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলে রাষ্ট্রীয় গণ মাধ্যম নিশ্চিত করেছে। প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং অন্যান্যদের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হবার জায়গায় সোমবার মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
রাষ্ট্রীয় গণ মাধ্যম জানায়, দেশের উত্তরপশ্চিমের পাহাড়ি এলাকায় ঘন কুয়াশার মধ্য দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সন্ধানের পর সোমবার (২০ মে) ভোরে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের খোঁজ পাওয়া যায়।
এর আগে উদ্ধারকারী দল একটি হেলিকপ্টার খুঁজে পায়, যেটা প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের বহন করার সময় রবিবার বিধ্বস্ত হয়। তবে তারা সেখানে প্রাণের কোন চিহ্ন পায় নি বলে রাষ্ট্রীয় গণ মাধ্যম জানায়।
ইরান বলছে, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং অন্যান্য কর্মকর্তা বহনকারী একটি হেলিকপ্টার দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর রবিবার সারা রাত উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়।
আজেরবাইজান থেকে ইরানের পথে
এর আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, দেশের পূর্ব আজেরবাইজান প্রদেশের জোলফার কাছে রবিবার (১৯ মে) খারাপ আবহাওয়ায় হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
তারা জানায়, ঐ হেলিকপ্টারে প্রেসিডেন্ট রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান এবং আরও দুজন কর্মকর্তা আজেরবাইজান থেকে ইরানে ফিরছিলেন।
সীমান্তের ঠিক ওপারে তাঁরা আজেরবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সাথে একটি বাঁধ উদ্বোধন করেন।
ইরানের গণমাধ্যম জানায়, তিনটি হেলিকপ্টার অনুষ্ঠান শেষে ইরানি কর্মকর্তাদের নিয়ে ফিরছিল, যার একটি বিধ্বস্ত হয়।
তাঁরা ইরান এবং আজেরবাইজানের সীমান্তে আরাস নদীর উপর খোদা আফরিন এবং গিয গালাসি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।
নদীর যে অংশ আজেরবাইজানের জাব্রাভিল জেলা এবং ইরানের পূর্ব আজেরবাইজান প্রদেশের দুপাশ দিয়ে গেছে, সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে।
ইলহাম আলিয়েভের দোয়া
ইরানী গণমাধ্যম শনিবার খবর পরিবেশন করেছিল যে, রাইসি বাঁধ উদ্বোধনের জন্য সীমান্ত এলাকায় যাবেন। দুর্ঘটনার পর আলিয়েভ সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লেখেন যে, তিনি রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হবার খবর পেয়ে গভীর ভাবে বিচলিত।
তিনি দোয়া করছেন এবং “বন্ধুসুলভ ও ভাত্রিপ্রতিম দেশের” জন্য সহায়তার প্রস্তাব দেন।
ইরানি গণমাধ্যম বলছে, উদ্ধারকর্মীরা পায়ে হেঁটে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন, কারণ এলাকা কুয়াশায় ঢাকা থাকায় তাঁরা খুব বেশি দূর দেখতে পারছেন না।
ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট যদি মারা যান বা অক্ষম হয়ে যান, তাহলে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট তাঁর স্থলাশিভিক্ত হবেন, এবং ৫০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মোহাম্মাদ মোখবের বর্তমান প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট।
প্রেসিডেন্টের ভূমিকা এবং ক্ষমতা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নিচে, যিনি দেশ পরিচালনার কর্মকাণ্ডে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানকারী।
আতশবাজি আর দোয়া
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিও এবং ছবিতে দেখা গেছে দেশের কয়েকটি জায়গায় ইরানের ক্ষমতাসীনদের বিরোধীরা রাইসির সম্ভাব্য মৃত্যু ঘিরে আনন্দ করার জন্য আতশবাজি পুরাচ্ছে। ভিওএ ফার্সি বিভাগ ভিডিও এবং ছবিগুলোকে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ বলে যাচাই করেছে।
ভিওএ আতশবাজির পটভূমি স্বতন্ত্রভাবে নিশ্চিত করতে পারে নাই, যেহেতু তারা ইরানের ভেতর থেকে রিপোর্ট করা থেকে নিষিদ্ধ।।
রবিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলের ফুটেজে সরকার সমর্থকদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাইসির নিরাপত্তার জন্য দোয়া করতে দেখা গেছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেইনি বলছেন দেশ পরিচালনা ব্যাহত হবে না। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ খামেইনিকে উদ্ধৃত করে বলে, “ইরানি জাতির চিন্তিত হওয়া উচিত না। দেশ পরিচালনা কোনভাবে ব্যাহত হবে না।”
আইআরএনএ একটি ছবিও সরবরাহ করে যেখানে দেখানো হয়েছে ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মেদ মোখবের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা নিয়ে মন্ত্রীসভার এক জরুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন।
ভিওএ ফার্সি বিভাগের টেলিভিশনে রবিবার এক সাক্ষাৎকারে জার্মানি-ভিত্তিক ইরানি সাংবাদিক এবং গবেষক রেজা তালেবি বলেন, রাইসি যদি মারা যান তাহলে ইরানের ইসলামপন্থী শাসকরা তাঁকে একজন শহিদ ঘোষণা করে হয়তো বলবে যে তিনি তাদের প্রধান বৈদেশিক শত্রু ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হিংসাত্মক কাজের ফলে মারা গেছেন।
হিংসাত্মক কাজের কোন প্রমাণ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ষ্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ওয়াশিংটন ইরানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হবার খবর নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। “এই মুহূর্তে আমাদের কোন মন্তব্য নেই,” মুখপাত্র বলেন।
ভিওএ ফার্সি সার্ভিসের পায়াম ইয়াযদিয়ান, ফারহাদ পউলাভি এবং মাসুদ ফারাহমানদ, এবং ভিওএ আজেরবাইজান সার্ভিসের আসগার আযগারভ এই রিপোর্টে অবদান রেখেছেন