জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের একটি প্রতিবেদন দেশটিতে কয়েক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সময় হাজার হাজার মানুষকে বলপূর্বক গুমের বিষয়টি স্বীকার করতে এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে শ্রীলঙ্কা সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে সশস্ত্র সংঘাতের সমাপ্তির পর থেকে প্রায় ১৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু, তারপরও তখন যে লঙ্ঘনগুলি ঘটেছিল এবং সেই সাথে “বলপূর্বক নিখোঁজ হওয়ার একদম প্রথম দিকের লঙ্ঘনগুলি” নিয়ে “শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ এখনও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে।”
প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে শুক্রবার জারি করা এক বিবৃতিতে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভল্কার টুর্ক বলেন, “জবাবদিহিতার দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। সফল হওয়ার সুযোগ পেতে আমাদের সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার আনতে হবে।”
১৯৮৩ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে সিংহলি-অধ্যুষিত সরকার এবং তামিল টাইগারদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৯৭০ সাল থেকে ২০০৯ সালে যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত, "প্রাথমিকভাবে শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা বাহিনী এবং অধিভুক্ত আধাসামরিক গোষ্ঠী দ্বারা মানুষদের ব্যাপকভাবে বলপূর্বক গুম করা হয়। তারা গুম করা ব্যক্তিদের বিরোধীদের “ভয় দেখানো এবং নিপীড়নের একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে।”
প্রতিবেদনের লেখকরা তামিল ইলমের লিবারেশন টাইগারদেরকে "অপহরণে জড়িত" থাকার কথা বলেও অভিযুক্ত করেছেন, যাকে জাতিসংঘের কার্যকরী বা অনিচ্ছাকৃত নিখোঁজ বিষয়ক গোষ্ঠী দ্বারা "বলপূর্বক নিখোঁজের সমতুল্য" হিসাবে বর্ণনা করা হয়।
মানবাধিকার কর্মীরা কয়েক ডজন ভুক্তভোগীদের, প্রধানত নারীদের সাথে ব্যক্তিগত এবং গোষ্ঠী সাক্ষাৎকার পরিচালনা করেছেন। একজন আত্মীয়ের জোরপূর্বক নিখোঁজ হওয়ার ফলে ধাক্কা, আতংক, রাগ, অসহায়ত্ব এবং অপরাধবোধের অনুভূতি সহ গভীর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়ে।
প্রতিবেদনটিতে জোরপূর্বক নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের উপর, বিশেষ করে নারীদের উপর স্থায়ী সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করেছে যে “অধিকাংশ নিখোঁজ ব্যক্তিরা পুরুষ হওয়ায়, নারীরা প্রায়শই একটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হয়ে উঠেছে, এমন একটি শ্রমমুখর পরিবেশে যা যৌন হয়রানি এবং শোষণের ঝুঁকি সহ নারীদের অংশগ্রহণে অনেক বাধা সৃষ্টি করে।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে অনেক নারী যারা সক্রিয়ভাবে তাদের প্রিয়জনের সাথে কী ঘটেছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন, তাদের “নিজেদেরই হয়রানি, ভয় দেখানো, নজরদারি, নির্বিচারে আটক রাখা, সেনাবাহিনী ও পুলিশের হাতে মারধর এবং নির্যাতন সহ নানাবিধ লঙ্ঘনের শিকার হতে হয়েছে।”
প্রতিবেদনে সরকারের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে, হাইকমিশনারের মুখপাত্র, রাভিনা শামদাসানি শুক্রবার জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন যে, “সাধারণত, এই বিষয়গুলির জবাবদিহিতা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে যে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, শ্রীলঙ্কার ধারাবাহিক সরকারগুলি নিখোঁজদের সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাধ্যতামূলক ভাবে নিখোঁজ হওয়া থেকে সকল ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনের অনুসমর্থন, নিখোঁজ ব্যক্তি বিষয়ক কার্যালয় এবং ক্ষতিপূরণের কার্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং বলপূর্বক গুমকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা।
তবে প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে “ব্যক্তিগত ঘটনাগুলি সামগ্রিকভাবে সমাধানের দিকে বাস্তব অগ্রগতি এখনও সীমিত রয়েছে।”
মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয়ের মতে, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে, রাষ্ট্রের একটি সুস্পষ্ট বাধ্যবাধকতা রয়েছে যে জোরপূর্বক নিখোঁজের ঘটনাগুলির নিস্পত্তি করা “যতক্ষণ না নিখোঁজদের ভাগ্য এবং তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা যায়।”