অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

গাজার উত্তরে নতুন করে ইসরায়েল-হামাসের লড়াই, রাফার উপর চাপ অব্যাহত


গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন হামলার পরে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যাচ্ছে। ফটোঃ ১২ মে, ২০২৪।
গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন হামলার পরে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যাচ্ছে। ফটোঃ ১২ মে, ২০২৪।

ইসরায়েল গাজার উত্তরাঞ্চল জাবালিয়ায় রবিবার সকালে ট্যাংক পাঠিয়েছে। এর আগে সারারাত ধরে ভারী বিমান ও স্থল বোমা হামলা চালায় তারা সেখানে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বোমাবর্ষণে ১৯জন নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়েছেন।

গাজার আটটি ঐতিহাসিক শরণার্থী শিবিরের মধ্যে জাবালিয়া বৃহত্তম। এই শিবির এক লাখেরও বেশি লোকের আবাস। তাদের বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি শরনার্থীদের বংশধর, যারা ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় বর্তমান ইসরায়েলের শহর ও গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন।

শনিবার রাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসকে তার সামরিক সক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বাধা দেয়ার জন্য ইসরায়েলি বাহিনী জাবালিয়ায় তৎপরতা চালাচ্ছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি সাংবাদিকদের বলেন, “গত কয়েক সপ্তাহে জাবালিয়ায় হামাসের সামরিক সক্ষমতা পুনরায় বাড়ানোর প্রচেষ্টা আমরা শনাক্ত করার পর তা নির্মূল করার জন্য সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, গাজা সিটির জেইতুন এলাকায় প্রায় ৩০ জন হামাস সদস্যকে হত্যা করেছে সেখানে কর্মরত ইসরায়েলি বাহিনী ।

গাজায় যুদ্ধে নিহত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন সদস্যর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া তেল আভিভে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফটোঃ ১২ মে, ২০২৪।
গাজায় যুদ্ধে নিহত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন সদস্যর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া তেল আভিভে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফটোঃ ১২ মে, ২০২৪।

গাজা সিটিতে ট্যাঙ্ক হামলা

জাবালিয়ার ৪৫ বছর বয়সী বাসিন্দা সাঈদ জানিয়েছেন, “জাবালিয়ায় গতকাল থেকে আকাশ ও স্থলে বোমাবর্ষণ চলছে। এমন কোথাও নাই যেখানে হামলা চালানো হয় নাই। এমনকি স্কুলের নিকটবর্তী আবাসস্থলগুলোও রেহাই পায়নি।”

“যুদ্ধ আবারও শুরু হয়েছে,” তিনি রয়টার্সকে একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে বলেন। “নতুন হামলা অনেক পরিবারকে এখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করবে।”

গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলীয় শহরতলী আল-জেইতুন এবং আল-সাবরাতেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নতুন করে ট্যাঙ্ক পাঠিয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা ভারী বোমা বর্ষণে বহুতল আবাসিক ভবনসহ বেশ কয়েকটি বাড়ি ধ্বংসের খবর জানিয়েছে।

এসব এলাকার বেশির ভাগ অংশই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে বলে মাসখানেক আগে দাবি করেছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

পূর্বাঞ্চলীয় দেইর আল-বালাহ শহরে ট্যাংক হামলা চালায়নি বলে জানায় স্থানীয় বাসিন্দা ও হামাসের গণমাধ্যম। তবে কিছু ইসরায়েলি ট্যাংক ও বুলডোজার শহরের প্রান্তে বেড়া অতিক্রম করলে হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয় বলে জানায় তারা।

শনিবার রাতে দেইর আল-বালাহ শহরে এক বিমান হামলায় দুই চিকিৎসক - বাবা ও তার ছেলে, নিহত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

হামাস ও ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা গাজার অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি এলাকায় ট্যাংক বিধ্বংসী রকেট ও মর্টার বোমা দিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা জানায়, যোদ্ধারা হামলা রাফাতেও চালিয়েছে যেখানে ১০ লক্ষরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

একটি ফিলিস্তিনি পরিবার তাদের শেষ সম্বল নিয়ে রাফা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ফটোঃ ১১ মে, ২০২৪।
একটি ফিলিস্তিনি পরিবার তাদের শেষ সম্বল নিয়ে রাফা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ফটোঃ ১১ মে, ২০২৪।

ভুতুড়ে শহর খান ইউনুস

রবিবার রাফায় ইসরায়েলি সামরিক চাপ আরও তীব্র হবার মাঝে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি এলাকা ছেড়ে চলে যেতে থাকে। ইসরায়েলি বাহিনী শহরের কয়েকটি জায়গা থেকে লোকজনকে চলে যাবার নির্দেশ দেয়। একই সময়, মিশরের সীমান্তে অবস্থিত রাফার বিভিন্ন এলাকায় ট্যাঙ্কের গোলা আঘাত হানে।

“আমি রাফা থেকে বের হয়ে যখন খান ইউনুস যাচ্ছি, তখন আমি কাঁদছিলাম। আমি জানিনা, আমি কেন কাঁদছিলাম – আমি যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি সেটার জন্য, এই অবমাননার জন্য, সব কিছু হারানোর বেদনার জন্য, নাকি আমি যা দেখছি, তার জন্য,” বলছিলেন গাজার অধিবাসী তামের আল-বুড়াই, যিনি রাফায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।

“আমি একটা ভুতুড়ে শহর দেখলাম, রাস্তার দুই ধারে দালান-কোঠা, সম্পূর্ণ মহল্লা ধ্বংস করা হয়েছে। মানুষ নিরাপত্তার জন্য পালাচ্ছে, যদিও তারা জানে কোথাও কোন নিরাপদ জায়গা নেই। কোন তাঁবু নেই, তাদের দেখা-শোনা করার জন্য কোন লোক নেই,” তিনি রয়টার্সকে বলেন।

ফিলিস্তিনি ব্যবসায়ী বুড়াই বলেন, বিশ্ব ফিলিস্তিনিদের পরিত্যাগ করেছে। বিশ্ব নেতারা সাত মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ থামাতে ব্যর্থ হয়েছে। যুদ্ধ বিরতির জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ইসরায়েল-হামাস বিরোধের কারণে ভেঙ্গে পড়ছে।

ইসরায়েলি হিসাব অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলায় তাদের প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত ও ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করা হয়।

অপরদিকে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ক্রমাগত বোমাবর্ষণে গাজা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে এবং গভীর মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং আরও কয়েকটি দেশ হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে।

XS
SM
MD
LG