মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যাকে তিনি ইহুদিবাদ বিরোধী ‘ভয়াবহ উত্থান’ বলে বর্ণনা করেছেন সেই প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন যেখানে তিনি তাঁর ভাব-গম্ভীর ভাষণে দু’টি নিষ্ঠুর ঘটনাকে এক সঙ্গে উত্থাপন করেন: হলোকস্টের বার্ষিক স্মৃতিতর্পণ এবং গাজায় সংঘাতের সপ্তম মাসে প্রবেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের হলোকস্ট মেমোরিয়াল মিউজামের বার্ষিক স্মরণ দিবসে বাইডেন মূল বক্তা হিসেবে বলেন, “ বিশ্বে এই ঘৃণা বহু মানুষের অন্তরের গভীরে গ্রথিত রয়েছে”।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে একদল বিধায়ক এবং নাৎসি জার্মানির হত্যাকান্ড থেকে প্রাণে রক্ষা পাওয়া কয়েকজন বয়ঃবৃদ্ধ লোকের সামনে ভাষণ দিচ্ছিলেন । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানি পরিকল্পিত ভাবে ৬০ লক্ষ ইহুদিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়।
তাঁর মন্তব্যে বাইডেন সেই ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের বিস্ময়কর হামলার যোগসুত্র স্থাপন করেন যেখানে ৭ অক্টোবর ১২০০ বেসামরিক ইসরাইলি প্রাণ হারান। এই আক্রমণের কারণে যে সংঘাতের সূচনা হয় তা আজ অবধি চলছে এবং এতে ৩৪,০০০ ‘এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন।
বাইডেন বলেন অক্টোবরের ঐ হামলার পর , “আমরা আমেরিকায় এবং গোটা বিশ্বেই ইহুদিবাদ বিরোধী ভয়াবহ উত্থান দেখেছি।এখন এই যে আমরা আছি, ৭৫ বছর পর নয়, সাড়ে সাত মাস পর আর জনগণ ইতোমধ্যেই ভুলে যাচ্ছে যে এই সন্ত্রাসের সূচনা করেছিল হামাস”।
আপনারা রয়েছেন
বাইডেন ইহুদি সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করে বলেন, “আপনারা আছেন, বরাবরই আছেন এবং বরাবরই থাকবেন....ইহুদি জনগণের সুরক্ষা, ইসরাইলের নিরাপত্তা এবং স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে তার টিকে থাকার অধিকার সম্পর্কে আমার প্রতিশ্রুতি লৌহদৃঢ়,এমন কি আমরা যখন দ্বিমত প্রকাশ করি, তখনও”।
জুইশ কাউন্সিল ফর পাবলিক অ্যাফায়র্স’এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যামি স্পিটালনিক বাইডেনের ভাষণের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এক বিবৃতিতে বলেন ইহুদিবাদ বিরোধীতা শুধু ইহুদিদের জন্য নয়, সকলের জন্যই সমস্যা।
স্পিটালনিক বলেন, “ ক্রমবর্ধমান ইহুদিবিরোধী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং ঘৃণা হচ্ছে এক ধরণের হুমকি যা প্রত্যেককে খাটো করে , প্রতিটি আমেরিকানের সুরক্ষা এবং আমাদের মূল গণতান্ত্রিক নিয়মনীতি ও মূল্যকে খর্ব করে। এই হুমকির মোকাবিলা করছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের যে স্পষ্ট নৈতিক নেতৃত্ব তার জন্য আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। আর এরই মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ইহুদিবাদবিরোধীতাকে মোকাবিলা করতে যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহাসিক জাতীয় কৌশল”।
তিনি আরও বলেন, “আমরা কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যাতে তারা দ্রতই ইহুদিবাদবিরোধীতা মোকাবিলার জন্য প্রস্তাবিত আইনের উপর ভোট গ্রহণ করে, জাতীয় কৌশল বাস্তবায়নে জোর সমর্থন দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দপ্তরের অফিস অফ সিভিল রাইটস’এর অর্থায়ন বৃদ্ধি করে যাতে তারা ইহুদিবাদবিরোধী কর্মকান্ডের– আর ক্যাম্পাসে সব ধরণের নাগরিক অধিকার লংঘনের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে পারে এবং তার মোকাবিলা করতে পারে। এখনই এটা পরিস্কার করার সময় যে ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমুলক সমাজই হচ্ছে এমন সমাজ যেখানে ইহুদি ও সকল সম্প্রায়ের লোক নিরাপদ ও মুক্ত থাকতে পারেন”।
যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ক্যাপাসগুলিতে ক্রবর্ধমান ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভে এই প্রশ্নও উঠছে গাজাকে ঘিরে রাখা বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্রের অব্যাহত সমালোচনাকে কি ইহুদিবাদবিরোধী বক্তব্য হিসেবে দেখা উচিত্।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারিন জ্যঁ-পিয়েরের কাছে ভয়েস অফ আমেরিকা জানতে চেয়েছিল বাইডেন প্রশাসন এ ব্যাপারে ঠিক কোথায় রেখা টানছে।
তাঁর উত্তর ছিল, “রেখা টানার ব্যাপারে আমাকে কিছু বলতে হবে না। এটা অত্যন্ত পরিস্কার। ইহুদিবাদ বিরোধী বক্তব্য হচ্ছে ঘৃণায় ভরা ভাষণ।এটি নিজেকে সব চেয়ে ঘৃণ্য ভাবে প্রকাশ করে। আমি এখানে দাঁড়িয়ে কোন উদাহরণ দিতে যাচ্ছি না। সেটাতো আমি করবো না , তা পরিস্কার”।