শুক্রবার মুক্ত সংবাদমাধ্যম দিবসে পাকিস্তানের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে একজন আঞ্চলিক সাংবাদিকের গাড়ির উপর বোমা আক্রমণে তিনি এবং দু জন পথচারির নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় পুলিশ বলেছে যে বালুচিস্তান প্রদেশের খুজদার জেলায় বিকেল বেলাকার এই হামলায় সাতজন আহত হয়েছেন যাদের বেশির ভাগই পথচারি। তারা এই নিহত সাংবাদিককে সিদ্দিক মেঙ্গেল বলে শনাক্ত করেছেন । তিনি জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন এবং মনে করা হচ্ছে তিনি তাদের লক্ষ্যবস্তুও ছিলেন।
ওই অঞ্চলের একজন পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম মুস্তাফা রিন্দ ভয়েস অফ আমেরিকাকে টেলিফোনে জানান যে ব্যস্ত রাস্তায় মেঙ্গেল ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন অচেনা এক মেোটর সাইকেল চালক তার গাড়িতে বাড়িতে তৈরি একটি চৌম্বক বোমা তার গাড়িতে আটকে দেয়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তিনি মেঙ্গেলের ”শহীদ হ্ওয়ায় গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেছেন”।
কোন গোষ্ঠীই তাত্ক্ষণিক ভাবে প্রাকৃতিক ভাবে সমৃদ্ধ বালুচিস্তানে এই বোমা আক্রমণের দায় স্বীকার করেনি। এই এলাকাটি এখন প্রায় প্রত্যেক দিনই বালুচ বিদ্রোহীদের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং বেআইনি ঘোষিত তেহরিকে তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি’র প্রতি অনুগত জঙ্গিরাও এই এলাকায় তত্পর রয়েছে।
পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে যে তারা ওই প্রদেশে বিদ্রোহ দমনের যে অভিযান চালাচ্ছে তার সমালোচকদের উপর তারা আক্রমণ চালায় এবং তাদের জোর করে গুম করে দেয়।
শুক্রবারের এই হামলা ছিল পাকিস্তানে কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা সরকার ও জঙ্গি উভয়ের কাছ থেকে যে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন তার আরেকটি দৃষ্টান্ত । রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস বা আরএসএফ বলছে যে পাকিস্তান হচ্ছে,“সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বে সব চাইতে বিপজ্জনক একটি দেশ যেখানে প্রতি বছর তিন থেকে চারটি হত্যাকান্ড ঘটছে যা প্রায়ই দূর্নীতি বা অবৈধ মানব পাচারের সংবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অথচ এ বিষয়গুলোর জন্য কোন শাস্তি প্রদান করা হয় না”।
শুক্রবার প্রকাশিত আরএসএফ’এর ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম সূচকে ২০২৪ সালে পাকিস্তানের স্থান ১৫০ থেকে ১৫২ তে নেমে এসেছে। এতে সে দেশে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার করুণ অবস্থার আভাস পাওয়া যায়। এই সূচকে বিভিন্ন দেশে সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতার স্তর মূল্যায়ন করা হয়।
হত্যার হুমকি
এ দিকে কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট বা সিপিজে শুক্রবার পাকিস্তানের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছে তারা যেন অবিলম্বে একজন প্রখ্যাত টেলিভিশন উপস্থাপক হামিদ মীরকে হত্যার হুমকি এবং অনলাইনে হয়রানির বিষয়টি তদন্ত করে দেখে।
বিশ্বব্যাপী সংবাদ মাধমের স্বাধীনতার পক্ষাবলম্বী এই গোষ্ঠীটি এক বিবৃতিতে বলেছে যে তিনি জিও নিউজ’এ যে একটি প্রখ্যাত রাজনৈতিক অনুষ্ঠান , ‘ক্যাপিটাল টক’ পরিচালনা করে থাকেন তিনি অন্তত দু বার তাঁকে হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে আসেন এবং তিনি সিপিজেকে বলেছেন যে তিনি সামাজিক মাধামে তাঁকে হত্যার অসংখ্য হুমকি পেয়েছেন।
সামাজিক মাধ্যম এক্স এ মীরের ৮৪ লক্ষ অনুসারী রয়েছেন। সেখানেই তিনি খুজদারের এই হামলার ভিডিও পোষ্ট করেছেন এবং তাতে এই মন্তব্যও করেছেন যে এই সহিংসতা পাকিস্তানে, “সকল স্বাধীন সাংবাদিকের জন্য একটি বার্তা দিচ্ছে”।
বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা দিবসে শেহবাজ শরিফ বলেন তাঁর সরকার পাকিস্তানি সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি এ কথাও বলেন যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হচ্ছে “গণতন্ত্রের ভিত্তি এবং জনগণের অধিকারের সুরক্ষা”।