বিশ্ব ব্যাঙ্ক সোমবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, এই শতকে প্রথমবারের মত উন্নয়নের এক ঐতিহাসিক বিপরীতমুখী পালাবদলে বিশ্বের ৭৫টি দরিদ্রতম দেশের অর্ধেকের সঙ্গে ধনীতম দেশগুলির আয়ের ব্যবধান ক্রমশ বাড়ছে।
এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে বিশ্বের দরিদ্রতম ও ধনীতম দেশগুলিতে মাথা পিছু আয় বৃদ্ধির মধ্যে পার্থক্য বেড়েছে। ।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের ডেপুটি চীফ অর্থনীতিবিদ ও এই প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক আয়হান কোজে রয়টার্সকে বলেন, এই প্রথমবারের মতো আমরা কোনও মিল দেখতে পাচ্ছি না। তারা আরও দরিদ্র হচ্ছে
তিনি বলেন, “আমরা ভীষণ গুরুতর অবকাঠামোগত পশ্চাদপসরণ, বিশ্বে এক বিপরীতমুখিতা দেখছি…এই কারণে আমরা বিপদ ঘন্টা বাজাচ্ছি এখানে।”
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭৫টি দেশ বিশ্ব ব্যাঙ্কের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে অনুদান ও বিনা-সুদের ঋণ পাওয়ার যোগ্য। নীতিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষী রদবদল ও গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সাহায্য না থাকায় এই দেশগুলি এক দশক উন্নয়নের সুফল হারিয়েছে।
কোজে বলেন, কোভিড-১৯ অতিমারির আগে অনেক আইডিএ দেশের প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যেই হ্রাস পেতে শুরু করেছিল। তবে, ২০২০-২০২৪ সালে এর হার মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। ১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে কম অর্ধ-শতকীয় প্রবৃদ্ধি। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ, জলবায়ু পরিবর্তন, সহিংসতা ও সংঘাতের বাড়বাড়ন্ত এই দেশগুলির সম্ভাবনার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
আইডিএ দেশগুলির অর্ধেকের বেশি রয়েছে সাব-সাহারা আফ্রিকায়; ১৪টি দেশ পূর্ব এশিয়ায় এবং ৮টি লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে। ৩১টি দেশে বছরে মাথা পিছু আয় ১৩১৫ ডলারের চেয়েও কম। এমন দেশের তালিকায় ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো, আফগানিস্তান ও হাইতি রয়েছে।
আইডিএ দেশগুলির মধ্যে প্রতি তিনটির মধ্যে একটি দেশ অতিমারির আগের তুলনায় এখন আরও দরিদ্র হয়ে পড়েছে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৯২ শতাংশ বাস করে আইডিএ দেশগুলিতে। তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাদ্য জোগাড় করতে পারে না। এই দেশগুলির মধ্যে অর্ধেকই দেনার দায়ে ভুগছে, অর্থাৎ তারা ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দারমিত গিল উল্লেখ করেছেন, বর্তমানের প্রধান অর্থনৈতিক ক্ষমতাধর দেশ চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া এক সময় বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলির মধ্যে ছিল, তবে তারা চরম দারিদ্র্য সামলাতে এবং জীবনযাপনের মান উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, “বিশ্ব আইডিএ দেশগুলি থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারে না।”