অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সুদান বিপর্যয়কর সঙ্কটের মুখোমুখি, বিশ্বের উপেক্ষা; বলছে ত্রাণ সংস্থাসমূহ


অপুষ্টিতে ভুগছে সুদানের এমন শিশুদের সুদান সীমান্তের কাছে চাদের মেটচে ক্যাম্পের ডক্টরস উইদাউট বর্ডারের ক্লিনিকে চিকিত্সা করা হয়, ৬ এপ্রিল, ২০২৪।
অপুষ্টিতে ভুগছে সুদানের এমন শিশুদের সুদান সীমান্তের কাছে চাদের মেটচে ক্যাম্পের ডক্টরস উইদাউট বর্ডারের ক্লিনিকে চিকিত্সা করা হয়, ৬ এপ্রিল, ২০২৪।

জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি সতর্ক করেছে যে সুদানের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এ দেশটির যে বিশাল মানবিক সহায়তা দরকার তা উপেক্ষা করছে সারা বিশ্ব।

সুদান এক বছর ধরে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মানবিক সংস্থাগুলি সম্মত যে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবসৃষ্ট বিপর্যয়গুলির মধ্যে একটি সৃষ্টি করার জন্যে দায়ী এই যুদ্ধটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে, “এ যুদ্ধে একটি অবিশ্বাস্যরকম জীবনের মূল্য দিতে হয়েছে,” যাতে ১৫,০০০ জনেরও বেশি মারা গেছে এবং আনুমানিক ৩৩,০০০ জন আহত হয়েছে।

ডব্লিউএইচও-এর মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার শুক্রবার জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, “নিহতদের সংখ্যা সম্ভবত কম বলে মনে হচ্ছে।”

লিন্ডমেয়ার বলেন, “আমরা আশংকা করছি বাস্তুচ্যুতি, রোগের প্রাদুর্ভাব এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা, মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের চাহিদা এবং খাদ্য ও পানির অভাবের কারণে সমগ্র জনসংখ্যা জুড়ে আরও বেশি লোকের মৃত্যু ঘটতে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন(আইওএম) একটি নতুন প্রতিবেদন অনুসারে, সুদানে প্রতিদিন ২০,০০০ মানুষ, যাদের অর্ধেক শিশু, তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

আইওএম বলে, এক বছর আগে ১৫ এপ্রিল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৮৬ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে — সুদানের অভ্যন্তরে ৬৬ লক্ষ মানুষ এবং ১৮ লক্ষ মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলিতে শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় নিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও সতর্ক করে যে সুদান শীঘ্রই বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর খাদ্য সংকটাপন্ন দেশে পরিণত হতে পারে কারণ প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ তীব্র ক্ষুধায় ভুগছে এবং আরও ৫০ লক্ষ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

তারপরেও, ডব্লিউএইচও-এর মুখপাত্র লিন্ডমেয়ার বলেন, “এটি ক্রমবর্ধমান মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টির কেবল শুরু মাত্র”।

তিনি আরও বলেন, “মানবাধিকার গোষ্ঠীদের প্রবেশাধিকার বিশেষভাবে সীমাবদ্ধ। সুদানের অভ্যন্তর থেকে এর অর্ধেক রাজ্যেই প্রবেশ করা সম্ভব নয়। দারফুর এবং কর্ডোফান দুর্গম এবং মানবিক সাহায্যের নাগাল থেকে বিচ্ছিন্ন।”

সুদানের জাতীয় সেনাবাহিনী এবং প্রতিদ্বন্দ্বী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস মিলিশিয়া ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল যুদ্ধ শুরু করে। দুই পক্ষই দেশটির সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। দুই পক্ষই মানবিক সহায়তা গোষ্ঠী এবং ত্রাণসামগ্রী বেসামরিক মানুষের কাছে পৌঁছানো কঠিন করে তুলেছে।

এমএসএফ, যা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস নামেও পরিচিত, সারা বিশ্বকে অভিযুক্ত করেছে যে তারা “যুদ্ধরত পক্ষগুলির ইচ্ছাকৃতভাবে মানবিক প্রবেশাধিকার এবং সহায়তা বিতরণকে অবরুদ্ধ করার ব্যাপারটি উপেক্ষা করছে।” এর ফলে লক্ষ লক্ষ লোক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে৷

সুদানে সংঘাতের প্রথম বার্ষিকীর প্রাক্কালে, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি যুদ্ধরত পক্ষগুলিকে যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করার জন্য এবং “মানবতার স্বার্থে, দুর্ভোগের শিকার জনগণ এবং শিশু”দের জন্য সংলাপে সংযুক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানায়।

শুক্রবার জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি)’র একটি প্রতিবেদন গ্রামীণ সমাজের উপর সশস্ত্র সংঘাতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবগুলি মূল্যায়ন করেছে।

ইউএনডিপি সমীক্ষাটি সুদান জুড়ে ৪৫০০ টিরও বেশি গ্রামীণ পরিবারের উপর জরিপ করে প্রস্তুত করা হয়েছে। তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে দেশটি একটি ক্রমবর্ধমান খাদ্য নিরাপত্তা সংকটের মুখোমুখি।

এই সমীক্ষা মতে, খাদ্য উৎপাদন এবং সরবরাহ চেইন “চলমান যুদ্ধের কারণে ব্যাহত হয়েছে” এবং সতর্ক করে যে “সুদানে ২০২৪ সালে একটি দুর্ভিক্ষ আশংকা করা হচ্ছে।” বিশেষ করে খার্তুম এবং আল-জাজিরা রাজ্যে এবং দারফুর এবং কর্ডোফান অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।

XS
SM
MD
LG