আসন্ন নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন। শনিবার এক্স (টুইটারে)-এ প্রকাশিত এক বার্তায় বাইডেন দম্পতি এই শুভেচ্ছা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-এর এক্স হ্যান্ডেলের টুইটে বলা হয়, "বিশ্বব্যাপী যারা বৈশাখী, নবরাত্রি, সংক্রান এবং এই সপ্তাহে আসন্ন নববর্ষ উদযাপনে শরীক হবে তাদের জন্য জিল এবং আমি উষ্ণতা, সৌহার্দ ও আনন্দ কামনা করি।
শুভ বাংলা, খেম, লাও, মিয়ানমারিজ, নেপালি, সিংহলি, তামিল, থাই এবং বিষু নববর্ষ!"
বাংলা নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন
বাংলাদেশে রবিবার (১৪ এপ্রিল) উদযাপিত হবে বাংলা নববর্ষ। পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ হলো এই ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক ও সর্বজনীন উৎসব। দিনটি উদযাপনের জন্য সকল প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে বাংলাদেশ জুড়ে।
এবছর খ্রিস্টীয় সাল লিপইয়ার হওয়ায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে অভিন্ন দিনে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশে বাংলা বর্ষপঞ্জি শুরু হয় ১৪ এপ্রিলকে পহেলা বৈশাখ নির্দিষ্ট করে। আর, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা বাংলা নববর্ষ উদযাপন করেন প্রাচীন বাংলা বর্ষগণনার ঐতিহ্য মতে।
বর্ষবরণের মূল আয়োজন
বাংলাদেশে বর্ষবরণের চমকপ্রদ ও জমজমাট আয়োজন হয় রাজধানী ঢাকায়। এখানে বৈশাখী উৎসবের অনুষ্ঠানমালা এক মিলন মেলার সৃষ্টি করে। নববর্ষের প্রথম প্রভাতে রমনা উদ্যান ও এর চারপাশের এলাকায় উচ্ছল জনস্রোতে সৃষ্টি হয় জাতীয় বন্ধন।
ছায়ানটের উদ্যোগে জনাকীর্ণ রমনার বটমূলে রবীন্দ্রনাথের আগমনী গান ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’-এর মাধ্যমে নতুন বর্ষকে বরণ করা হয়। ১৩৭২ বঙ্গাব্দে (১৯৬৫) ছায়ানট প্রথম এ উৎসব শুরু করে। এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুলতলার প্রভাতী অনুষ্ঠানে নববর্ষকে সম্ভাষণ জানানো হয়।
এখানকার চারুশিল্পীদের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, নববর্ষের আহবানকে করে তোলে নয়ন মনোহর এবং গভীর আবেদনময়। এ শোভাযাত্রা উপভোগ করে সব শ্রেণীর মানুষ। দিনটিতে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ, টি.এস.সি এবং চারুকলা ইনস্টিটিউট সহ সমগ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিণত হয় বিশাল জনসমুদ্রে।
বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলায় শুরু হয়েছে বৈসাবি উৎসব
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জেলায় নদী-হ্রদে ফুল ভাসিয়ে শুক্রবার (১২ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে ৩ দিনের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি। চাকমা নৃগোষ্ঠীর বিজু উৎসব এবং ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর হারি বৈসু উদযাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো বৈসাবি।
দিনটিতে চাকমা জনগোষ্ঠীর মানুষ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করে থাকেন। ফুলের অধিক ব্যবহার হয় বলে চাকমারা বলে ‘ফুল বিজু’।
শুক্রবার ভোরে খাগড়াছড়ি সদরের খবংপুড়িয়া এলাকায় চেঙ্গী নদীতে ফুল উৎসর্গ করতে শত শত চাকমা শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, নানা বয়সী নারী-পুরুষ ভিড় জমান। সবাই দলবদ্ধ হয়ে কলা পাতায় ফুল সাজিয়ে সৃষ্টির উৎসের প্রতি উৎসর্গ করেন। ফুলে ফুলে বর্ণিল হয়ে উঠে চেঙ্গী নদীর দু’পাশ। সূর্যোদয়ের আগে, শিশু-কিশোররা হল্লা করে ফুল তুলতে বের হয়।
উৎসবে পাহাড়ি পল্লীর বিভিন্ন খাল ও প্রাকৃতিক ছড়া ফুলে ফুলে ভরে যায়। শিশুরা নদীতে আনন্দ উল্লাস করে নতুন বছরকে আহবান জানায়। পাহাড়ের মানুষ ফুল দিয়ে সাজিয়েছে ঘরবাড়ি, আঙ্গিনা।
শুক্রবার সকালে চেঙ্গী নদীতে ফুল পূজা করে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মানুষ ‘বৈসু’ উৎসবের সূচনা করে। আর পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হবে মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ উৎসব । এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়।
রাঙ্গামাটি রাজবাড়ি ঘাটে বৈসাবি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ভোরে তরুণ-তরুণীরা ফুল ভাসায়। এর মধ্য দিয়ে ৩ দিন উৎসবের সূচনা করা হয়।
বৈসাবির উৎসবকে কেন্দ্র করে, ৩ দিনে আনন্দ উৎসবে মেতে থাকবে পার্বত্য অঞ্চলের সব সম্প্রদায়ের মানুষ।