হামাসের সাথে ইসরাইলের যুদ্ধ ছয় মাস পূর্ণ করেছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রবিবার ঘোষণা করেন যে, ইরাইল এ যুদ্ধে জয় লাভের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আর, গাজার বিভিন্ন অংশে "উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনাবাহিনী" রেখে গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নেতানিয়াহু তার মন্ত্রিসভাকে বলেন, "আমরা বিজয় থেকে এক পা দূরে রয়েছি। তবে, এর জন্য আমরা যে মূল্য দিয়েছি, তা বেদনাদায়ক এবং হৃদয়বিদারক।”
কায়রোতে, স্থগিত যুদ্ধবিরতি আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ার পরও নেতানিয়াহু অঙ্গীকার করেন, "জিম্মিদের ফেরত না দিলে কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি হবে না। এটি কখনোই ঘটবে না।"
ধারণা করা হয়, হামাস এখনো গাজার সুড়ঙ্গপথে অন্তত ১০০ জনকে জিম্মি করে রেখেছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা করার সময় হামাস যে ২৫০ জনকে জিম্মি করে, এরা তাদের মধ্যে ছিলেন। সেই হামলায় ১২০০ জন নিহত হন।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত,১১২ জন জিম্মিকে মুক্ত করা হয়।
এদের বেশিরভাগই নভেম্বরে একসপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চলা কালে মুক্তি পান। আর, ধারণা করা হয়, গাজায় ছয় মাস ধরে চলা যুদ্ধের সময় ৩৬ জন মারা গেছেন; বা তাদের হত্যা করা হয়েছে।
গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইলের পাল্টা আক্রমণে অন্তত ৩৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের দুই-তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলছে, মোট নিহত-সংখ্যার মধ্যে কয়েক হাজার জঙ্গি রয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে চাপ থাকা সত্ত্বেও, ইসরাইল গাজার ইসলামপন্থী শাসক হামাসের "চরম" দাবিগুলোর প্রতি নতিস্বীকার করবেন না। হামাসের দাবি হলো, ইসরাইল যেন ভূমধ্যসাগরের এই ছোট অঞ্চল থেকে তাদের সকল সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়।
নেতানিয়াহু চারটি হামাস ব্যাটালিয়নকে ধ্বংস করার জন্য রাফায় একটি স্থল আক্রমণ শুরু করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তিনি এই প্রতিশ্রুতি তখন উচ্চারণ করলেন, যখন সেখানে অন্তত দশ লাখ ফিলিস্তিনি নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। হামলার সময় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় কোথায় সরিয়ে নেয়া হবে, সে বিষয়ে ইসরাইল প্রকাশ্য কোনো বিবৃতি দেয়নি।
ইসরাইল রবিবার খান ইউনিস শহরসহ গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করেছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং ইসরাইলি গণমাধ্যম বলেছে, কয়েক মাস ধরে হামাস বিদ্রোহীদের সাথে চলা প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর, এই এলাকার বেশিরভাগ অবকাঠামো মাটিতে মিশে গেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, "১৬২তম ডিভিশন এবং নাহাল ব্রিগেডের নেতৃত্বে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সৈন্য গাজা ভূখন্ডে কাজ করে চলেছে। তারা আইডিএফ-এর কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা পাবে এবং সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য ভিত্তিক অপারেশন পরিচালনা করার ক্ষমতা ভোগ করবে।" ইসরাইলি পত্রিকা হারেৎজ বলেছে, সেনা প্রত্যাহার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির জন্য নতুন করে আলোচনা শুরু করতে, শনিবার থেকে মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তিরা কায়রোতে পৌঁছাতে শুরু করেছেন। হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা গাজায় তাদের ডেপুটি চিফ খলিল আল-হাইয়াকে আলোচনার জন্য পাঠাবে।
হামাস আবারো তাদের মূল দাবিগুলো উত্থাপন করেছে। তাদের দাবি হলো; গাজায় সম্পূর্ণ যুদ্ধ হলো; গাজায় সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা এবং ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার।