ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মস্কো ও বেইজিংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা করতে, সোম ও মঙ্গলবার চীন সফর করবেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ল্যাভরভ ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই'র মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা। এর পাশাপাশি, ইউক্রেন সংকট ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মতো “গুরুত্বপূর্ণ বিষয়” আলোচনায় স্থান পাবে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই'র আমন্ত্রণে ল্যাভরভ বেইজিং সফরে যাচ্ছেন।
রয়টার্স গত মাসে এক প্রতিবেদনে বলেছিলো, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মে মাসে চীন সফর করবেন। পুতিন চীন সফর করলে, এটা হবে তার নতুন মেয়াদের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ।
গত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, পুতিন বেইজিং সফর করেন। এই সফরের পর চীন ও রাশিয়া “সীমাহীন অংশীদারিত্ব” ঘোষণা করে। এর কয়েক দিন পর, ইউক্রেনে কয়েক হাজার সেনা পাঠায় রাশিয়া। এর মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে মারাত্মক স্থলযুদ্ধ শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্র, চীনকে তার বৃহত্তম প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। আর, রাশিয়াকে জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মনে করেন, গণতান্তিক রাষ্ট্র এবং স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে টিকে থাকার লড়াই অব্যাহত থাকবে এই শতাব্দী জুড়ে।
বিশ্ব ব্যবস্থার বিষয়ে পুতিন এবং শি একটি অভিন্ন ধারণা পোষণ করেন। তাদের ধারণা, পশ্চিমা শক্তিগুলো ক্ষয়িষ্ণু এবং পতনশীল। এমন ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে, জ্ঞানবিজ্ঞানে বিশেষ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং সিন্থেটিক বায়োলজজিতে চীন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বকে প্রতিনিয়ত চ্যলেঞ্জ করে যাচ্ছে।এ ছাড়া, গুপ্তচরবৃত্তি এবং বিস্তিৃত সামরিক শক্তিতেও প্রতিযোগিতা করছে তারা।
চীনা কাস্টমস বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে চীন-রাশিয়া বাণিজ্য রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪,০১০ কোটি ডলারে। আগের বছরের বাণিজ্যের তুলনায় এই বৃদ্ধির হার ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এই সময়ে রাশিয়ায় চীনের রফতানি বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৯ শতাংশ। আর রাশিয়া থেকে আমদানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য হ্রাস পেয়েছে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ, এর বর্তমান আকার ৬৬ হাজার ৪৫০ কোটি ডলার।
চীন ইউক্রেন সংকট নিরসনে যুদ্ধের এক বছর পর ২০২৩ সালে ১২ দফা অবস্থানপত্র প্রকাশ করে। চীনের অবস্থান যৌক্তিক বলে একমত প্রকাশ করে রাশিয়া।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির অনুরোধে সুইজারল্যান্ড গত জানুয়ারিতে শান্তি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করে। সেখানে জেলেন্সকি একটি শান্তির উপায় উপস্থাপন করেন। রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলো থেকে সম্পূর্ণভাবে রুশ সৈন্যদের প্রত্যাহারের আহবান জানান তিনি।
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিনের পক্ষ থেকে দেয়া ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে, মস্কো জেলেনস্কির প্রস্তাবকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দেয়। সুইজারল্যান্ডের প্রস্তাবিত বৈঠককে ইউক্রেনের পক্ষে গ্লোবাল সাউথের সমর্থন আদায়ের চেষ্টায় ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করে তারা।
এদিকে নিজ ভূখণ্ড থেকে শেষ রুশ সেনাকে বের না করে দেয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেবে না বলে জানিয়েছে ইউক্রেন।