অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইসরাইলি হামলায় গাজায় সাত ত্রাণকর্মী নিহত হবার ঘটনায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন 'ক্ষুব্ধ'


গাজার দেইর আল-বালাহ তে ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন কর্মীদের নিহত হবার স্থান দেখা যাচ্ছে। (২ এপ্রিল, ২০২৪)
গাজার দেইর আল-বালাহ তে ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন কর্মীদের নিহত হবার স্থান দেখা যাচ্ছে। (২ এপ্রিল, ২০২৪)

ইসরাইলি বিমান হামলায় ত্রাণ সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাতজন কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি “ক্ষুব্ধ ও আহত”

এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, “এই কর্মীরা যুদ্ধের মাঝখানে ক্ষুধার্ত বেসামরিক লোকজনের মাঝে খাবার সরবরাহ করছিলেন। তারা সাহসী ও নিঃস্বার্থ ছিলেন। তাদের মৃত্যু দুঃখজনক।"

তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবারের এই হামলা বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। ইসরাইল নিশ্চিতভাবেই “বেসামরিক মানুষের প্রয়োজনীয় সরবরাহ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসা ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি।”

গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য সব চেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং এ ব্যাপারে ইসরাইলের উপর চাপ অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান তিনি। তাছাড়া জিম্মি চুক্তির অংশ হিসেবে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্যও ক্রমাগত চাপ দেয়ার কথা বলেন তিনি।

এদিকে, ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন জানিয়েছে, হামলার পর ওই অঞ্চলে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করেছে তারা।

এক বিবৃতিতে ডব্লিউসিকে জানায়, তারা দেইর আল-বালাহর একটি গুদামে ১০০ টন খাদ্য সহায়তা সরবরাহ সম্পন্ন করে তাদের লোগো সম্বলিত দুটি সাঁজোয়া গাড়ির বহর নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করছিল। তারা অভিযোগ করেছে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আগে থেকেই তাদের গতিবিধি সমন্বয় করা ছিল। তা সত্ত্বেও এই বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার বাহিনী নিরীহ মানুষের উপর হামলার কথা স্বীকার করে এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেন,

“দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে যেখানে আমাদের বাহিনী অনিচ্ছাকৃতভাবে গাজায় নিরীহ মানুষের উপর হামলা চালিয়েছে। যুদ্ধে এমন ঘটে। আমরা বিষয়টির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করছি এবং অন্যান্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আর এ ধরণের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একজন ফিলিস্তিনি, অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ড ও ব্রিটেনের নাগরিক এবং যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার দ্বৈত নাগরিক ছিলেন বলে জানিয়েছিল ত্রাণ সংস্থাটি।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানায় , মঙ্গলবার তারা “কয়েক ঘন্টার কঠিন অভিযানে” সাতটি মৃতদেহ উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। পরে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে যাতে দক্ষিণ গাজার রাফা ক্রসিং দিয়ে সরিয়ে নেয়া যেতে পারে।

এই হামলাকে “ক্ষমার অযোগ্য” বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের প্রধান নির্বাহী এরিন গোর। তিনি আরও বলেন, এই যুদ্ধে কেবল আমাদের উপরই নয় সমস্ত মানবিক সংস্থাগুলোর উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। এই যুদ্ধে খাদ্যকে যুদ্ধের অস্ত্রের মতন ব্যবহারের ভয়ংকর অমানবিক ঘটনা ঘটছে।

ডব্লিউসিকে'র প্রতিষ্ঠাতা হোসে আন্দ্রেসও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, গাজায় আইডিফের হামলা হৃদয়বিদারক এবং তিনি এতে তার প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের হারিয়ে শোকাহত ।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে বলেন , আন্দ্রেসকে ফোন করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন “গভীর সমবেদনা” জানান। তাছাড়াও “ তিনি পুরো ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন পরিবারের সাথে শোক প্রকাশ করছেন।”

এদিকে মঙ্গলবার ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, তিনি আন্দ্রেসের সাথে কথা বলেছেন সেনাবাহিনীর "গভীর সমবেদনা" প্রকাশ করেছেন। সেই সাথে তারা কিভাবে কি ঘটেছে তা “সর্বোচ্চ পর্যায়ে” তদন্ত করে দেখছেন।

সেদিনই জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, তিনি এই হামলায় “ক্ষুব্ধ”। তাছাড়া এ ব্যাপারে দায়ীদের কর্মকাণ্ডকে “সমর্থনযোগ্যনয়” বলে অভিহিত করেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ান ত্রাণকর্মী লালজাওমি "জোমি" ফ্রাঙ্ককমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, তার সরকার "সম্পূর্ণ জবাবদিহিতা" আশা করছে। তিনি এটিকে মানবিক বিপর্যয় এবং সম্পূর্ণভাবে অগ্রহনযোগ্য বলে সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেন।

পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লো সিকোরস্কিও পোল্যান্ডে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতের কাছে জরুরি ব্যাখ্যা চেয়েছেন বলে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন।

এদিকে হামলায় মঙ্গলবার ব্রিটিশ নাগরিকদের মৃত্যুর খবর যাচাইয়ের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল এ হামলার নিন্দা জানিয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

ইসরাইলের হিসাব অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলায় ১২০০ মানুষ নিহত হওয়ার পর হামাসকে চিরতরে নির্মূল অভিযান শুরু করে তারা।

হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গাজায় ইসরাইলের এই পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত ৩২ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। যাদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু। যদিও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভাষ্যমতে, নিহতদের এক-তৃতীয়াংশই হামাস জঙ্গি।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।

XS
SM
MD
LG