রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার বলেছেন, গত সপ্তাহে মস্কোর শহরতলীর এক কনসার্ট হলে ১৩৯ জনের হত্যাকারী বন্দুকধারীরা “ইসলামি উগ্রবাদী।”
সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে পুতিন বলেন, এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে চরমপন্থীরা “যাদের মতাদর্শের বিরুদ্ধে ইসলামি বিশ্ব কয়েক শতক ধরে লড়াই করছে।”
পুতিন সপ্তাহান্তে বলেছিলেন, ইউক্রেনে পালানোর চেষ্টা করার সময় চার হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হয়। তবে, ইসলামি স্টেট (আইএস)-এর সাথে সম্পৃক্ত যে গোষ্ঠী হামলার দায়িত্ব দাবী করেছে, পুতিন তাদের কথা উল্লেখ করেন নি। পুতিন তার সোমবারের মন্তব্যেও আইএসের নাম উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকেন।
এই হামলার নির্দেশ কে দিয়েছিল তা তিনি বলেন নি। তবে তিনি বলেন, “অপরাধ সংঘটিত করার পর সন্ত্রাসীরা কেন ইউক্রেনে পালানোর চেষ্টা করেছিল এবং সেখানে কে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল,” সেটা অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।
আইএসের সাথে সম্পৃক্ত গোষ্ঠী হামলার দায়িত্ব দাবী করার পর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগ সেই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, মস্কোতে হামলার জন্য “আইএসের কোনও শাখা” দায়ী বলে ফ্রান্সের গোয়েন্দা বিভাগ ইঙ্গিত দিয়েছে।
সোমবার সকালে ক্রেমলিনের মুখপাত্র ডিমিট্রি পেসকভ কাওকে দোষারোপ করতে অস্বীকার করেন এবং রাশিয়ার তদন্তের ফলাফল কী হয় তা জানার জন্য সংবাদদাতাদের অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র ৭ মার্চ মস্কোর কর্তৃপক্ষকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছিল বলে যে প্রতিবেদন উঠে এসেছে, তা নিয়েও তিনি মন্তব্য করেন নি। তিনি বলেন, এই ধরনের গোয়েন্দা তথ্য গোপনীয় বিষয়।
কঠোর শাস্তির আহবান
এই হামলার পিছনে যারা রয়েছে তাদের কঠোর শাস্তির জোরালো দাবি উঠেছে রাশিয়ায়।
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুসটিন বলেছেন, তদন্ত এখনও চলছে তবে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ যে, “দুষ্কৃতিদের শাস্তি দেওয়া হবে, তারা ক্ষমার অযোগ্য।”
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডিমিট্রি মেদভেদেভ “তাদের সকলকে হত্যা” করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মেদভেদেভ, যিনি ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং বর্তমানে সিকিউরিটি কাউন্সিলের সহ-সভাপতি, বলেন যে এই ঘটনায় জড়িত “সবাইকে হত্যা করতে হবে।”
“জড়িত সবাইকে হত্যা করো। সবাইকে। যারা অর্থ দিয়েছে, যারা সহানুভুতি দেখিয়েছে, যারা সাহায্য করেছে। সবাইকে হত্যা করো।”
রাশিয়ার মানবাধিকার সংগঠন আটক ব্যক্তিদের উপর নির্যাতনের নিন্দা করেছে।
পুলিশ নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করে এমন সংগঠন টিম এগেইন্সট টর্চার এক বিবৃতিতে বলেছে, অপরাধীদের অবশ্যই কঠোর শাস্তি পেতে হবে। “কিন্তু বর্বরতা দিয়ে বর্বরতার জবাব দেয়া উচিত না।”
বিবৃতিতে বলা হয়, নির্যাতন করে আদায় করা সাক্ষ্যর মূল্য “খুবই কম” হয় এবং, “সরকার যদি সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অনুমতি দেয়, তাহলে তারা অন্যান্য নাগরিকদের উপর বেআইনি সহিংসতার অনুমতিও হয়তো দিতে পাড়বে।”
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বিভাগ বলেছে, আরও সাতজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। এদের তিনজনকে সোমবার আদালতে হাজির করা হয়েছে। তাদের দেহে জখমের চিহ্ন নেই। সন্ত্রাসবাদী ক্রিয়াকলাপের অভিযোগে তাদের প্রাক-বিচারিক হাজতে রাখা হয়েছে। বাকিদের কী হবে তা এখনও অস্পষ্ট।
অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি
রাশিয়ার রাজধানীর কাছে এক কনসার্ট হলে আক্রমণের সাথে জড়িত সন্দেহে আটক চার ব্যক্তির তিনজন মস্কোর একটি আদালতে রবিবার (২৪ মার্চ) হামলার দায় স্বীকার করেছে।
ক্রোকাস সিটি হলে শুক্রবার ঐ হামলায় ১৩৭ জন নিহত হন।
রবিবার রাতে মস্কোর বাসমান্নি ডিসট্রিক্ট আদালত চারজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে।
আদালত চারজনকে বিচারের জন্য ২২ মে পর্যন্ত আটক রাখার নির্দেশ দেয়। তবে বিচারের তারিখের উপর নির্ভর করবে তাদের আটকাদেশ বাড়ানো হবে কি না।
মস্কোর বাসমান্নি ডিসট্রিক্ট আদালত জানিয়েছে, চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ আনা হয়েছে, যার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হতে পারে।
মস্কোর আদালত আনুষ্ঠানিক ভাবে দালেরযন মিরোযাইয়েভ, ৩২; সাইদাক্রামি রাখাবালিযোদা, ৩০; মুহাম্মাদসবির ফাইযভ, ১৯ এবং ২৫-বছর বয়স্ক শামসিদিন ফারিদুনির বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে অন্যের প্রাণহানি করার অভিযোগ গঠন করে।
চারজনই তাজিকিস্তানের নাগরিক বলে আদালতে বলা হয়।
মিরোযাইয়েভ, রাখাবালিযোদা এবং ফারিদুনি আদালতে অভিযোগ স্বীকার করেন। বাকি আরেকজন, ফাইযভকে সরাসরি হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হয়, এবং তিনি আদালতে পুরো সময় একটি হুইল চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে ছিলেন। আদালতে হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মী তার দেখাশোনা করছিলেন। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
অন্য তিনজন অভিযুক্ত আদালতে আসেন আঘাতের চিহ্নও এবং ফুলে যাওয়া মুখ নিয়ে। রাশিয়ার গণ মাধ্যমে বলা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের উপর নির্যাতন চালানো হয়।