রাশিয়ার রাজধানীর কাছে এক কনসার্ট হলে আক্রমণের সাথে জড়িত সন্দেহে আটক চার ব্যক্তির তিনজন মস্কোর একটি আদালতে রবিবার (২৪ মার্চ) হামলার দায় স্বীকার করেছে।
ক্রোকাস সিটি হলে শুক্রবার ঐ হামলায় ১৩৭ জন নিহত হন।
রবিবার রাতে মস্কোর বাসমান্নি ডিসট্রিক্ট আদালত চারজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে।
আদালত চারজনকে বিচারের জন্য ২২ মে পর্যন্ত আটক রাখার নির্দেশ দেয়। তবে বিচারের তারিখের উপর নির্ভর করবে তাদের আটকাদেশ বাড়ানো হবে কি না।
মস্কোর বাসমান্নি ডিসট্রিক্ট আদালত জানিয়েছে, চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ আনা হয়েছে, যার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হতে পারে।
মস্কোর আদালত আনুষ্ঠানিক ভাবে দালেরযন মিরোযাইয়েভ, ৩২; সাইদাক্রামি রাখাবালিযোদা, ৩০; মুহাম্মাদসবির ফাইযভ, ১৯ এবং ২৫-বছর বয়স্ক শামসিদিন ফারিদুনির বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে অন্যের প্রাণহানি করার অভিযোগ গঠন করে।
চারজনই তাজিকিস্তানের নাগরিক বলে আদালতে বলা হয়।
মিরোযাইয়েভ, রাখাবালিযোদা এবং ফারিদুনি আদালতে অভিযোগ স্বীকার করেন। বাকি আরেকজন, ফাইযভকে সরাসরি হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হয়, এবং তিনি আদালতে পুরো সময় একটি হুইল চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে ছিলেন। আদালতে হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মী তার দেখাশোনা করছিলেন। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
অন্য তিনজন অভিযুক্ত আদালতে আসেন আঘাতের চিহ্নও এবং ফুলে যাওয়া মুখ নিয়ে। রাশিয়ার গণ মাধ্যমে বলা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের উপর নির্যাতন চালানো হয়।
অভিযুক্ত চারজনকে রবিবার রাতে আদালতে আনা হয়।
পুতিনের ভাষণে ইউক্রেন
শুক্রবারের হামলা ছিল গত কয়েক বছরে রাশিয়ার মাটিতে সব চেয়ে ভয়াবহ হামলা। ইসলামিক ষ্টেট গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত একটি গোষ্ঠী হামলার দায়িত্ব দাবী করেছে।
রুশ কর্তৃপক্ষ শনিবার চারজন সন্দেহভাজন হামলাকারীকে গ্রেফতার করে। আরও সাতজনকে হামলার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে আটক করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে দাবী করেন, তাদের ইউক্রেনে পালিয়ে যাবার সময় গ্রেফতার করা হয়। ইউক্রেন সরকার এ’কথা অস্বীকার করেছে।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলছেন, কর্তৃপক্ষ এই হামলা সূত্রে মোট ১১জন ব্যক্তিকে আটক করেছে।
ভাষণে পুতিন একে “একটি রক্তাক্ত, বর্বর জঙ্গি কার্যক্রম” বলে অভিহিত করেন এবং জানান, রুশ কর্তৃপক্ষ চার সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে সীমান্তের ইউক্রেনীয় অংশে তৈরি রাখা “পথের” মাধ্যমে পালানোর চেষ্টা চালানোর সময় আটক করে।
শুক্রবার ক্রাসনোগোরস্কে অবস্থিত ক্রোকাস সিটি হলে সংঘটিত হামলায় কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার দায় কিয়েভ প্রবলভাবে অস্বীকার করেছে। অপরদিকে, ইসলামিক স্টেট সংগঠনের আফগানিস্তানী অঙ্গসংগঠন এই হামলার দায় নিয়েছে।
রুশ গণমাধ্যমে কিছু ভিডিও প্রচার করা হয়েছে, যেখানে এই সন্দেহভাজন ব্যক্তিদেরকে আটক ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার দৃশ্য দেখানো হয়েছে। এসময় এক ব্যক্তি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলেন, এক ইসলাম ধর্মপ্রচারকের অজ্ঞাতপরিচয় সহকারী একটি মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং এই অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য অর্থ দেন।
রাশিয়ার গণমাধ্যম আক্রমণকারীদের তাজিকিস্তানের নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করে। আফগান সীমান্তে মধ্য এশিয়ার মুসলিম-প্রধান দেশ তাজিকিস্তান এক সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। প্রায় ১৫ লক্ষ্য তাজিক রাশিয়ায় কাজ করেন, যাদের অনেকের রুশ নাগরিকত্ব আছে।
তাজিকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গ্রেফতার নিয়ে তাৎক্ষনিক কোন প্রতিক্রিয়া দেয় নি। তবে হামলায় অন্যান্য তাজিক নাগরিকের সম্পৃক্ততা নিয়ে রাশিয়ার গণমাধ্যমের খবর তারা অস্বীকার করেছেন।
অনেক উগ্রপন্থী রাশিয়ান তাজিক অভিবাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানায়। তবে, পুতিন সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে মনে হচ্ছে। পুতিন বলেন, "কোন শক্তি আমাদের বহু সংস্কৃতির সমাজে অনৈক্যের বিষাক্ত বীজ বপন করতে পারবে না, এখানে আতঙ্ক বা বিভেদ ছড়াতে পারবে না।"
তিনি রবিবার জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে বলেন, সারা দেশে বাড়তি নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে।
ইউক্রেনের দায় অস্বীকার
শনিবার এই হলটি থেকে ধোঁয়া উঠছিল এবং এর সর্বত্র কালচে রঙ দেখা গেছে। ইতোমধ্যে রুশ কর্তৃপক্ষ চার সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেন, এই লোকগুলো ইউক্রেনে পালানোর সময় ধরা পড়েছে।
ভাষণে পুতিন আইএসের কথা উল্লেখ করেনি। কিয়েভ পুতিন ও অন্যান্য রুশ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে এই হামলার সঙ্গে ইউক্রেনকে জড়িয়ে দেশটির বিরুদ্ধে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধকে জোরদার করার প্রচেষ্টার অভিযোগ এনেছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ সম্প্রতি তৃতীয় বছরে পা রেখেছে।
আইএস এর অঙ্গসংগঠনের দাবিটি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন।
এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, “এই হামলার জন্য শুধু আইসিস দায়ী। এখানে ইউক্রেনের কোনো ধরনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”
এই হামলায় নিহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১৩৭। যার ফলে এটাই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার সবচেয়ে মারাত্মক হামলার ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। কর্তৃপক্ষ বলছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।