সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার ১৩ বছরেরও বেশি সময় পরে, জাতিসংঘ বলেছে দেশটি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য আরও বিপজ্জনক জায়গায় পরিণত হয়েছে। তারা উল্লেখ করে যে সংঘাতটি শুরু করার জন্যে দায়ী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অত্যাচারী সরকার এখনও ক্ষমতায় আছে এবং একাধিক অঙ্গনে ক্রমাগত বৈরীতা বাড়িয়ে চলেছে।
শুক্রবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে সিরিয়ার বাসিন্দা এবং মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী অ্যাডাম আবদেলমৌলা বলেন, “সিরিয়ার সংকট বিশ্বের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনাগুলোর অন্যতম। সিরিয়ার বিভিন্ন অংশে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে এবং সম্প্রতি, বিশেষ করে উত্তরে এটি প্রচন্ড ভাবে বৃদ্ধি পেতে দেখা গিয়েছে।”
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় বিষয়ক কার্যালয় বা ওসিএইচএ-এর মতে, সংঘাতের কারণে ২০২৩ সালের প্রথম ১০ মাসে ৮৮ জন নারী ও ১১৫ টি শিশুসহ ৪৫৪জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
এই হতাহতের ঘটনাগুলি সিরিয়ার জনসংখ্যার উপর যুদ্ধের কারণে নিহতের সংখ্যার সর্বসাম্প্রতিক বহিপ্রকাশ। জাতিসংঘ অনুমান করে, ১৫ মার্চ, ২০১১ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৩ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে, ১ কোটি ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে — সিরিয়ার ভিতরে ৬৮ লক্ষ এবং পাঁচটি প্রতিবেশী দেশে শরণার্থী হিসাবে রয়েছে ৫৪ লক্ষ মানুষ।
রাজধানী দামেস্ক থেকে রাখা বক্তব্যে আবদেলমৌলা বলেন, “আজ সিরিয়ায় প্রায় ১ কোটি ৬৭ লক্ষ মানুষের যে কোনও ধরণের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ তীব্র ক্ষুধায় ভুগছে।
যদিও সিরিয়ার বেসামরিক জনসংখ্যার বিপর্যয়কর পরিস্থিতির জন্য মানবসৃষ্ট দুর্যোগগুলি মূলত দায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ুর প্রভাবগুলি এই দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ওসিএইচএ বলে, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিধ্বংসী ভূমিকম্পে প্রায় ৬,০০০ লোক মারা যায় এবং ১২,৮০০ জনেরও বেশি আহত হয়, যা "পরিষেবা ব্যবস্থাগুলির উপর চাপ বাড়ায়, বাস্তুচ্যুতি ঘটায় এবং ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।” তারা আরও উল্লেখ করে, “অনেক পরিবার তাদের প্রধান উপার্জনকারীকে হারিয়েছে, যখন অর্থনৈতিক অবস্থা ইতোমধ্যেই ভয়াবহ ছিল।”
ওসিএইচএ বলে, গত সপ্তাহে দুই দিনের প্রবল বন্যা ইদলিব এবং উত্তর আলেপ্পোর বেশ কয়েকটি শরণার্থী শিবিরে ১৫,৭০০ জনেরও বেশি লোককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এতে বলা হয়, এই বছর উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় ১০০ টিরও বেশি বন্যার ঘটনায় ৩,৩০০টিরও বেশি পরিবারের তাঁবু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৫০০টি ধ্বংস হয়েছে।
জাতিসংঘ এই বছর ১ কোটি ৬৭ লক্ষ সিরীয়দের মধ্যে ১ কোটি ৮ লক্ষ মানুষকে জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ৪০৭ কোটি ডলারের আবেদন করছে।
আবদেলমৌলা সতর্ক করেন যে, সিরিয়ার সাহায্যের আহ্বান উপেক্ষা করা এই অঞ্চলে এবং এর বাইরেও “সম্প্রতি দেখা সন্ত্রাসবাদের পুনরুত্থান” সহ একটি বিপজ্জনক, অস্থিতিশীল প্রভাব ফেলবে।
তিনি আরও সতর্ক করে দেন যে, সিরিয়ার দুর্দশা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার ফলে লেবানন এবং জর্ডানের মতো দেশে শরণার্থীদের একটি নতুন ঢেউ আসতে পারে। এই দেশগুলি ইতোমধ্যেই প্রচুর সংখ্যক সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার চাপে ভুগছে।
তিনি বলেন, “২০২৩ সালে আমরা ইউরোপে আশ্রয়ের জন্য ১ লক্ষ ৮১ হাজার নতুন আবেদন দেখেছি। এটি ২০২২ সালের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধির প্রকাশ ।