অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

গাজা ইসরাইলঃ ফিলিস্তিনি নারীর যমজ শিশুর জীবন কেড়ে নিলো ইসরাইলি বিমান হামলা


গাজার রাফায় ইসরাইলি হামলায় নিহত দুই শিশুর মরদেহ দাফন করতে নিয়ে যাচ্ছেন শোকার্ত স্বজনরা। ফটোঃ ৩ মার্চ, ২০২৪।
গাজার রাফায় ইসরাইলি হামলায় নিহত দুই শিশুর মরদেহ দাফন করতে নিয়ে যাচ্ছেন শোকার্ত স্বজনরা। ফটোঃ ৩ মার্চ, ২০২৪।

ফিলিস্তিনি নারী রানিয়া আবু আনজা মা হয়েছিলেন দীর্ঘ ১০ বছর চেষ্টার পর। এর মধ্যে তিনি তিন দফা ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সন্তান ধারণের চেষ্টা করেছেন। এরপর তিনি জমজ দুই সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু ইসরাইলি বিমান হামলা মুহূর্তের মধ্যে কেড়ে নিয়েছে পাঁচ মাস বয়সী ঐ দুই সন্তানের জীবন।

দক্ষিণ গাজার রাফায় ইসরাইলের হামলায় তার দুই সন্তান, স্বামী এবং ১১জন আত্মীয় নিহত হয়। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আরও জানাচ্ছেন, ঐ হামলার পর তার পরিবারের আরও নয়জন নিখোঁজ আছে।

তিনি তার দুই সন্তান এবং স্বামীর সাথে রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ১১টার দিকে ইসরাইলি হামলায় তাদের বাড়ি বিধ্বস্ত হয়।

সন্তানের ব্যবহৃত একটি কম্বল বুকে জড়িয়ে রবিবার রানিয়া বলছিলেন, তিনি তার বাচ্চা এবং স্বামীর জন্য চীৎকার করে ওঠেন। তারা সবাই মৃত। সন্তানদের নিয়ে তাদের বাবা চলে গেছে।

গাজায় যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে ইসরাইল গাজার আবাসিক ভবনগুলোতেও নিয়মিত বিমান হামলা চালিয়েছে, এমনকি রাফাতেও। যদিও গত অক্টোবর মাসে ইসরাইল রাফাকে নিরাপদ জোন ঘোষণা করেছিল। এখন রাফাই হচ্ছে ইসরাইলের পরবর্তী স্থল অভিযানের টার্গেট।

গাজার রাফায় ইসরাইলি বিমান হামলায় বিধ্বস্ত একটি আবাসিক ভবন। ফটোঃ ৩ মার্চ, ২০২৪।
গাজার রাফায় ইসরাইলি বিমান হামলায় বিধ্বস্ত একটি আবাসিক ভবন। ফটোঃ ৩ মার্চ, ২০২৪।

হামাস সন্দেহে আক্রমণ

কোনো আগাম সংকেত না দিয়েই এইসব হামলা চালানো হয়, সাধারণত রাতে।

ইসরাইল বলে, তারা বেসামরিক মানুষের মৃত্যু এড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু হামাস জঙ্গীরা আবাসিক এলাকাগুলোতে অবস্থান নিয়েছে বিধায় তারা ঐ হামলা চালায়। এসব হামলায় প্রায়ই নারী এবং শিশুরা নিহত হচ্ছে।

ইসরাইলি সেনা ঐ হামলার ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

ঐ বাড়িতে যে ১৪জন নিহত হয়, তার মধ্যে ৬জন শিশু, ৪জন নারী, জানিয়েছেন স্থানীয় যে হাসপাতালে তাদের মরদেহ নেয়া হয় তার পরিচালক ডাঃ মারওয়ান আল-হামস। স্বামী সন্তান ছাড়াও রানিয়া তার বোন এবং কয়েকজন আত্মীয়কে হারিয়েছেন।

একজন আত্মীয়, ফারুক আবু আনজা বলেন, ৩৫জন ঐ বাসায় ছিলেন। এদের মধ্যে কয়েকজন বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে আশ্রয় নেয়। তিনি বলেন, এরা সবাই বেসামরিক মানুষ, বেশির ভাগ শিশু। এদের মধ্যে কোনো জঙ্গী ছিল না।

উনত্রিশ বছর বয়ষ্ক রানিয়া এবং তার স্বামী উইসাম গত এক দশক ধরে সন্তান নেবার চেষ্টা করছিলেন। তিন দফা আইভিএফ চিকিৎসার পর গত বছর তারা সফল হন। গত ১৩ অক্টোবর তাদের জমজ সন্তান হয়।

রানিয়া বলেন, তার স্বামী এত খুশি হয়েছিলেন যে তার নিজের নামে মেয়ের নাম রেখেছিলেন। রানিয়া বলেন তিনি তার সন্তানদের সাথে যথেষ্ঠ সময় কাটানোর সময় পাননি।

ইসরাইলি বিমান হামলায় বিধ্বস্ত ভবন। গাজার রাফা শহর। ফটোঃ ৩ মার্চ, ২০২৪।
ইসরাইলি বিমান হামলায় বিধ্বস্ত ভবন। গাজার রাফা শহর। ফটোঃ ৩ মার্চ, ২০২৪।

তাদের সন্তান জন্মের মাত্র কয়েকদিন আগে হামাস দক্ষিণ ইসরাইলে আকষ্মিক হামলা চালিয়ে ১২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে যাদের মধ্যে শিশুও ছিল।

ইসরাইল ঐ হামলার জবাবে সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহতম সেনা অভিযান চালায়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এই যুদ্ধে ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

গাজার ২৩ লক্ষ ফিলিস্তিনির ৮০ শতাংশ বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে, ২৫ শতাংশ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন। গত মাসে তারা বলেছে, এই যুদ্ধে ১২ হাজার ৩০০-র বেশি শিশু-কিশোর নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ নারী এবং শিশু। এই হিসাবে বেসামরিক এবং জঙ্গীর মধ্যে পার্থক্য করা হয়নি।

ইসরাইল বলছে তারা ১০ হাজার হামাস জঙ্গী হত্যা করেছে, কিন্তু এর পেছনে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি।

যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে।

'বিশ্বের চোখের সামনে শিশুর মৃত্যু'

জীবিত শিশুদের জন্য এই যুদ্ধ নারকীয় অবস্থা তৈরি করেছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, শিশুদের কেউ কেউ উত্তর গাজাতে আছে যারা সাহায্য পাচ্ছে না।

ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক আদিল খোদার রবিবার এক বিবৃতিতে বলেন, “যেখানে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা আছে, কিন্তু তা পাবার উপায় নেই, এটা বাবা-মা এবং চিকিৎসকদের জন্য অসহনীয় অসহায়তা এবং হতাশা তৈরি করে। তার চাইতেও খারাপ হলো সারা বিশ্বের চোখের সামনে এইসব শিশুরা তিলে তিলে মারা যাচ্ছে।”

গাজার সামান্য যতটুকু জায়গায় এখনও মানবিক সাহায্য দেয়া যাচ্ছে, রাফা তার অন্যতম।

কিন্তু ইসরাইল বলেছে, তাদের এবারের লক্ষ্য রাফা। সেখানে যে ১৫ লক্ষ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে, তারা কোথায় যাবে ইসরাইল তা বলেনি।

রানিয়া বলেন, "আমাদের কোনো অধিকার নেই। আমি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষদের হারিয়েছি। আমি এখানে থাকতে চাই না। আমি এই দেশ থেকে চলে যেতে চাই। আমি এই যুদ্ধে ক্লান্ত।"

XS
SM
MD
LG