দশ বছর আগে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়া মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের যাত্রীদের আত্মীয়রা রবিবার নতুনভাবে অনুসন্ধানের জন্য চাপ দেয়। তারা দীর্ঘস্থায়ী শোক এবং এর একটি অবসান পাওয়ার লড়াইয়ের মাঝে এ’কথা বলেন।
ফ্লাইট এমএইচ৩৭০, একটি বোয়িং ৭৭৭ বিমান যা ২৩৯ জন যাত্রী বহন করছিল, ৮ মার্চ, ২০১৪ তারিখে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার সময় রাডার স্ক্রীন থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।
এটি বিমান চলাচলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অনুসন্ধান হওয়া সত্ত্বেও, বিমানটিকে আর পাওয়া যায়নি।
রবিবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের কাছে একটি শপিং সেন্টারে প্রায় ৫০০ জন আত্মীয় এবং তাদের সমর্থক একটি "স্মরণ দিবস" এর জন্য সমবেত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে অনেকেই দৃশ্যত শোকে ভেঙ্গে পড়ছিলেন।
তারা ফ্লাইটে হারিয়ে যাওয়া প্রতিটি যাত্রীর জন্য একটি করে ২৩৯টি মোমবাতি জ্বালান।
কিছু আত্মীয় চীন থেকে আসেন, যেখান থেকে দুর্ভাগ্যগ্রস্ত বিমানের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ যাত্রী ছিলেন।
গ্রেস নাথান এএফপিকে বলেন, "গত ১০ বছর আমার জন্য ছিল অবিরাম একটি আবেগপ্রবণ রোলারকোস্টার।" তিনি একজন ৩৬ বছর বয়সী মালয়েশিয়ান আইনজীবী যার মা, ৫৬ বছর বয়সী অ্যান ডেইজি এই ফ্লাইটে ছিলেন।
দর্শকদের সাথে কথা বলার সময়, তিনি মালয়েশিয়া সরকারকে একটি নতুন অনুসন্ধান পরিচালনা করার জন্য আহ্বান জানান।
"এমএইচ৩৭০ ইতিহাস হয়ে যায় নি," তিনি বলেন।
চীনের হেবেই প্রদেশের ৬৭ বছর বয়সী লিউ শুয়াং ফং তার ২৮ বছর বয়সী ছেলে লি ইয়ান লিনকে হারিয়েছেন, যিনি বিমানের যাত্রী ছিলেন।
"আমি আমার ছেলের জন্য ন্যায়বিচার চাই। প্লেনটি কোথায়?" লিউ বলেন, যিনি বিমানে করে মালয়েশিয়ার সমাবেশটিতে যোগ দিতে এসেছেন।
"অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হবে," তিনি বলেন।
পরিবহন মন্ত্রী অ্যান্টনি লোক সাংবাদিকদের বলেন "মালয়েশিয়া বিমানটি খুঁজে পেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ... খরচ কোন সমস্যা নয়।"
নতুন অনুসন্ধান
তিনি সমাবেশে আত্মীয়দের বলেন, টেক্সাস ভিত্তিক সামুদ্রিক অনুসন্ধান সংস্থা ওশান ইনফিনিটির কর্মকর্তাদের সাথে একটি নতুন অপারেশন নিয়ে আলোচনা করার জন্য তাদের সাথে তিনি দেখা করবেন। তারা আগে একটি অনুসন্ধান চালিয়েছিল যেটা সফল হয় নি।
"আমরা এখন তাদের থেকে সুবিধাজনক তারিখ পাওয়ার অপেক্ষা করছি এবং আমি শীঘ্রই তাদের সাথে দেখা করার আশা করছি।"
ওশান ইনফিনিটি ২০১৮ সালে বেশ কয়েক মাস সমুদ্রতটে সন্ধান চালানোর পরে কোনও সফলতা ছাড়াই অনুসন্ধান শেষ করে।
এর আগে, ভারত মহাসাগরের ১,২০,০০০ বর্গ কিলোমিটার (৪৬,০০০ বর্গ মাইল) জুড়ে অস্ট্রেলিয়া-নেতৃত্বাধীন একটি অনুসন্ধানে প্লেনটির কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি, শুধুমাত্র ধ্বংসাবশেষের কিছু ছোট টুকরা পাওয়া গিয়েছিল।
বিমান চলাচলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হিসাবে বিবেচিত এই অনুসন্ধান ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে স্থগিত করা হয়।
বিমানটির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘিরে দীর্ঘকাল ধরে - বিশ্বাসযোগ্য থেকে অযৌক্তিক, বিভিন্ন ধরণের তত্ত্ব আলোচিত হয়েছে। এগুলোর একটি হচ্ছে যে, অভিজ্ঞ পাইলট জাহারি আহমদ শাহ দায়িত্ব ভঙ্গ করে ভিন্ন পথে গিয়েছিলেন।
এই ট্র্যাজেডির একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন যা ২০১৮ সালে প্রকাশ করা হয়, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে এবং বলে যে বিমানের গতিপথ ম্যানুয়ালি পরিবর্তন করা হয়েছিল।