ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দফতর থেকে সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) জানানো হয়েছে, রাফাহ-য় হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর আগে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ গাজা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা দেশের সামরিক বাহিনী মন্ত্রীসভাকে দিয়েছে। তবে তাদের সরিয়ে কোথায় নেয়া হবে, তার কোন ইঙ্গিত দেয়া হয় নি।
প্রায় পাঁচ মাস ধরে হামাসের বিরুদ্ধে চলা যুদ্ধে ইসরাইলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার আগে রাফাহ’য় স্থল অভিযান চালানোর বিরুদ্ধে ইসরাইলকে সতর্ক করেছে। গাজার সাথে মিশরের সীমান্তের একটু উত্তরে রাফাহ অবস্থিত, যেখানে ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছে। নেতানিয়াহু বলছেন, হামাসকে আক্রমণ করলে ইসরাইল কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধে জিতে যাবে।
ফিলিস্তিনিদের কোথায় নেয়া হবে, তার বিস্তারিত পরিকল্পনা সোমবারের বিবৃতিতে দেয়া হয় নি, আর মিশর বলেছে তারা সীমান্ত খুলে দেবে না। গত বছর ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হবার পর, ইসরাইলের ব্যাপক পাল্টা হামলায় গাজার বেশির ভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরাইলি হামলায় প্রায় ৩০,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার বেশির ভাগ নারী ও শিশু, জানিয়েছে গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইসরাইল বলছে, তারা ১২,০০০ হামাস যোদ্ধা হত্যা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করে।
জাতিসংঘের উদ্বেগ
যে এলাকায় মানুষজনের ইতোমধ্যে মানবিক সাহায্য প্রয়োজন, সে এলাকায় ইসরাইলের আক্রমণের পরিকল্পনা আর বেসামরিক লোকদের দক্ষিণ গাজা থেকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্টোনিও গুতেরেস সোমবার বলেন যে, গাজায় মানবিক সাহায্য এখনো ‘’একেবারে অপর্যাপ্ত’’ রয়ে গেছে, এবং রাফাহ’য় ইসরাইলি আক্রমণ সেই প্রচেষ্টা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
“শহরের উপর পূর্ণ মাত্রায় ইসরাইলি অভিযান যে শুধু সেখানে আশ্রয় নেয়া দশ লক্ষাধিক ফিলিস্তিনির জন্য ভীতিকর হবে, তাই না; এর ফলে ত্রাণ কর্মসূচি পুরোপুরি শেষ হয়ে যেতে পারে,” গুতেরেস বলেন।
ইসরাইলি সমরিক বাহিনী সোমবার জানায়, তারা লেবাননের ‘গভীরে’ জঙ্গি গোষ্ঠী হেজবোল্লাহকে লক্ষ করে হামলা চালাচ্ছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত সূত্র জানিয়েছে, হামলা বালবেক শহরের কাছে আঘাত করেছে। হেযবোল্লাহ বলেছে দু’জন নিহত হয়েছে।
ইসরাইলি ড্রোন ভূপাতিত
ইসরাইল এবং হামাসের মিত্র হেযবোল্লাহ গাজা যুদ্ধের পুরো সময় একে অপরের উপর গোলা বর্ষণ করেছে, যার ফলে সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার ইসরাইল জানায়, তাদের একটি ড্রোন লেবাননের আকাশে ওড়ার সময় ক্ষেপণাস্ত্রের কবলে পড়ে। হেযবোল্লাহ জানায়, তারা একটি ইসরাইলি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
চলমান যুদ্ধের মাঝে, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, মিশর এবং কাতারি কর্মকর্তারা যুদ্ধবিরতি এবং ১০০জন জিম্মিকে মুক্ত করার জন্য কাতারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। হামাস অক্টোবরের হামলায় যে ২৪০জনকে জিম্মি করে নিয়ে গিয়েছিল, তার মধ্যে ১০০ জনের মত এখনো তাদের হাতে আছে।
গত নভেম্বরে এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির সময় প্রায় ১০০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হয়ে হয়েছিল। বিনিময়ে ইসরাইলি জেল থেকে দু’শর বেশি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হয়। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলছে, তাদের বিশ্বাস হামাসের হাতে বন্দি ৩০ জনের মত জিম্মি পরবর্তীতে মারা গেছেন বা নিহত হয়েছেন।
এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এপি এবং এএফপি থেকে এসেছে।