অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ম্যালকম এক্স 


সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে ম্যালকম এক্স। মার্চ ২৬, ১৯৬৪।
সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে ম্যালকম এক্স। মার্চ ২৬, ১৯৬৪।

যুক্তরাষ্ট্রে ফেব্রুয়ারি মাসকে 'ব্ল্যাক হিস্টরি মান্থ' হিসাবে পালন করা হয়। এর মাধ্যমে এই দেশের ইতিহাসে যেসব কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক বা ঘটনা বিশেষ অবদান রেখেছে , সেগুলো তুলে ধরা হয়। এর অংশ হিসাবে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা এই দেশের বিখ্যাত কিছু কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকের অবদানের কথা তুলে ধরছে।

ম্যালকম এক্স

যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ বা আফ্রিকান-আমেরিকান জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যাদের নাম প্রথম সারিতে আসে, তাদের মধ্যে ম্যালকম এক্স অন্যতম। কৃষ্ণাঙ্গদের মুক্তি নিয়ে তাঁর চিন্তা-ভাবনা ১৯৬০-এর দশকে অনেকে ‘উগ্রবাদী’ হিসেবে দেখতেন, আবার অনেকে তাঁকে ‘বিপ্লবী’ হিসেবে গণ্য করতেন। তিনি আমেরিকার ইসলামি আন্দোলন, দ্য নেশন অফ ইসলাম-এর সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন, সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মাঝে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মারটিন লুথার কিং রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন ইন্সটিটিউট-এর মূল্যায়নে, ম্যালকম এক্স ছিলেন আমেরিকায় ‘কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদের’ সব চেয়ে পরিচিত প্রবক্তা।

ম্যালকম এক্স-এর জন্ম হয়েছিল ১৯২৫ সালের ১৯ মে, নেব্রাস্কা রাজ্যের ওমাহা শহরে। জন্মের সময় তাঁর নাম ছিল ম্যালকম লিটল। তাঁর বাবা-মা দু’জনই কৃষ্ণাঙ্গ অধিকারের সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন, যার জন্য তাদের অনেক হয়রানি এবং হুমকি সহ্য করতে হয়েছে। খুব অল্প বয়সে ম্যালকম বাবাকে হারান, মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর মা মনে করতেন তাঁর স্বামীকে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীরা হত্যা করেছে।

ম্যালকম লিটল’র শৈশব কাটে আত্মীয়-স্বজনের বাসা আর ফসটার হোমে। তিনি অপরাধ চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং ১৯৪৬ সালে ৮ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড পান। জেলখানায় তিনি ইসলামের সংস্পর্শে আসেন, এবং তাঁর নাম থেকে ‘লিটল’ বাদ দেন যেটাকে তিনি ‘ক্রীতদাস মালিকের’ নাম হিসেবে গণ্য করেন। তিনি ১৯৫০ সাল থেকে তাঁর নামে ‘এক্স’ যুক্ত করে বলেন, এটাই তাঁর আসল আফ্রিকান নাম।

ফাইল ছবি - ম্যালকম এক্স (ডানে) মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের সাথে কথা বলছেন।
ফাইল ছবি - ম্যালকম এক্স (ডানে) মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের সাথে কথা বলছেন।

জেল থেকে ১৯৫২ সালে ছাড়া পাওয়ার পর থেকে তিনি নেশন অফ ইসলাম (এনওআই)-এর একজন প্রভাবশালী নেতা হয়ে ওঠেন। তাঁর স্পষ্টবাদী ব্যক্তিত্ব এবং কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মুক্তি নিয়ে প্রথা-বিরোধী, র‍্যাডিকাল চিন্তা-ভাবনা ম্যালকম এক্সকে অনেক তরুণের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে। তাঁকে মূল ধারার আন্দোলনকারীরা ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে দেখতেন, যেহেতু তিনি কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক মুক্তির জন্য তাদের শ্বেতাঙ্গদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করার পক্ষপাতী ছিলেন।

ম্যালকম এক্স কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আন্দোলনের জনপ্রিয় নেতা মারটিন লুথার কিং-এর একজন সমালোচক ছিলেন, কারণ কিং শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে সমঅধিকারের ভিত্তিতে একীভূত করার পক্ষে অহিংস আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। ডঃ কিং-এর অহিংসতাকে কটাক্ষ করে ম্যালকম এক্স ১৯৬৩ সালে এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘’একমাত্র বিপ্লব যার লক্ষ্য হচ্ছে শত্রুকে ভালবাসা, তা হচ্ছে এই নিগ্রো বিপ্লব ... সেটা কোন বিপ্লবই নয়।’’

ম্যালকম এক্স ১৯৬৪ সালে নেশন অফ ইসলাম-এর সাথে তাঁর সম্পর্কের অবসান ঘটান। মক্কায় হজ্ব পালন করার পর তিনি ডঃ কিং এর মত একযোগে ধর্মীয় নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিকে মনোযোগ দেন। স্ট্যানফোর্ড ইন্সটিটিউট-এর তথ্যমতে, ১৯৬৪ সালে ম্যালকম এক্স-এর মূল্ লক্ষ্য ছিল র‍্যাডিকাল কৃষ্ণাঙ্গ রাজনৈতিক কর্মী, যারা ডঃ কিং এর চেয়ে জঙ্গি, তাদের নিয়ে কাজ করা। সে লক্ষ্যে তিনি অর্গানাইজেশন অফ আফ্রিকান আমেরিকান ইউনিটি (ওএএউ) গঠন করেন।

ম্যালকম এক্স ১৯৬৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। খুনিদের নেশন অফ ইসলামের সক্রিয় কর্মী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

XS
SM
MD
LG