যুক্তরাষ্ট্রে ফেব্রুয়ারি মাসকে 'ব্ল্যাক হিস্টরি মান্থ' হিসাবে পালন করা হয়। এর মাধ্যমে এই দেশের ইতিহাসে যেসব কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক বা ঘটনা বিশেষ অবদান রেখেছে , সেগুলো তুলে ধরা হয়। এর অংশ হিসাবে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা এই দেশের বিখ্যাত কিছু কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকের অবদানের কথা তুলে ধরছে।
মার্টিন লুথার কিং
মার্টিন লুথার কিং। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত নাম। কিং ১৯৫০-এর দশকে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে অহিংস আন্দোলন শুরু করেন, তা দেশব্যাপী এবং বহির্বিশ্বে তাঁর নাম প্রতিষ্ঠা করে।
কিং-এর নেতৃত্বে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সাফল্য আসে ১৯৬৪ সালের সিভিল রাইটস অ্যাক্ট, ১৯৬৫ সালের ভোটিং রাইটস অ্যাক্ট এবং ১৯৬৮ সালের সিভিল রাইটস অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে পাস করা এই আইনগুলি দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অঙ্গনে আফ্রিকান-আমেরিকানদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করে।
মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন এবং একই বছর প্রভাবশালী সাময়িকী ‘টাইম’ তাঁকে ‘ম্যান অফ দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত করে।
কিং, যার পুরো নাম মার্টিন লুথার কিং, জুনিওর, ১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারী যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য জর্জিয়ার আটলানটায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর লক্ষ ছিল ধর্মশাস্ত্র পড়াশোনা করে ক্রিস্টিয়ান যাজক হওয়া।
তিনি পেনসিলভানিয়ার ক্রযের থিওলজিকাল সেমিনারি এবং বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্মশাস্ত্রে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। এর মধ্যেই কিং কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার নিয়ে লেখা-লেখির মাধ্যমে সোচ্চার হতে থাকেন। কিং-এর কাজ তাঁর জন্য বিপদ দেকে আনে – ১৯৫৬ সালের ৩০ জানুয়ারী তাঁর বাসায় বোমা হামলা হয়, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে আহত হন। কিন্তু তিনি তাঁর বিক্ষুব্ধ অনুসারিদের শান্ত থাকতে এবং অহিংস প্রতিবাদের পথ বেছে নেয়ার আহবান জানান।
পরের বছর, ১৯৫৭ সালের ১৭ মে কিং প্রথম জাতীয় পর্যায়ে ভাষণ দেন। আমেরিকার রাজধানি ওয়াশিংটনের লিঙ্কন মেমোরিয়ালের সমাবেশে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের ভোটের অধিকার দাবী করেন।
এই সময় তিনি রাজপথে প্রতিবাদ মিছিলে যেমন নেতৃত্ব দিয়েছেন, তেমনি ওয়াশিংটনের ক্ষমতার কেন্দ্রে শীর্ষ রাজনিতিকদের সাথে বৈঠক করে দাবী আদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তাঁর আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আসে ১৯৬৩ সালের ২৮ অগাস্ট। ওয়াশিংটনের লিঙ্কন মেমোরিয়ালে লক্ষ লক্ষ মানুষকে দেয়া এক ভাষণে কিং কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর ‘স্বপ্নের’ কথা বলেন, যে ভাষণ ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
মার্টিন লুথার কিং, জুনিয়র, মাত্র ৩৯ বছর বয়সে, ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল, টেনেসি রাজ্যের মেমফিস শহরে আততায়ীর গুলিতে মারা যান।