দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২০টি দলের সব প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।
এ নির্বাচনে ২৯৮ আসনে ১৯৫৯ জন প্রার্থীর মধ্যে, গত সংসদের নির্বাচিত ৯ জন সংসদ সদস্য সহ ১৪৩৫ জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।
অর্থাৎ, প্রায় ৭৩ শতাংশ প্রার্থী তাদের জামানত রক্ষার জন্য নূন্যতম ভোট পাননি।
বিএনপিসহ ৬৩ দলবিহিনী আসন ভাগাভাগির এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৬৬ টি আসনে প্রার্থী দেন। তারমধ্যে ২২২ টি আসনে জয় লাভ করে।
তার বাইরে জাতীয় পার্টি ১১ আসনে, কল্যাণ পার্টি ১ টি, জাসদ ১ টি, ওয়ার্কাস পার্টি ১ টি এবং স্বতন্ত্র ৬২ জন প্রার্থী জয়লাভ করেন।
বাকি ১ টি আসনের প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ভোট স্থগিত রয়েছে।
জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় ২০ হাজার টাকা জামানত দিতে হয়।
কোনও প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের এক–অষ্টমাংশের কম ভোট পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিগত দুই সংসদে বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টির ২৬৫ প্রার্থীর মধ্যে ২৯ জন প্রার্থী জামানত রক্ষা করতে পেরেছেন।
অর্থাৎ ২৩৬ জনই জামানত হারিয়েছেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া ২৬ আসনের মধ্যে দলটির ১১ জন প্রার্থী জয়ী হয়েছে।
নির্বাচনের আগে নিবন্ধন পাওয়া ‘কিংস পার্টি’ নামে খ্যাত তৃনমূল বিএনপি প্রথমবার ভোটে অংশ নিয়ে ১৩৩ টি আসনে প্রার্থী দেয়।
দলটির চেয়ারম্যান-মহাসচিবসহ সব প্রার্থী জামানত হারান।
প্রথমবার ভোটে অংশ নেওয়া আরেক কিংস পার্টি খ্যাত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিএনএম ৫৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলো সাতক্ষীরা-৪ আসনের প্রার্থী এইচ এম গোলাম রেজা ছাড়া কারও জামানত রক্ষা হয়নি।
আর ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ১২২ প্রার্থীর সবাই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
নির্বাচনে ২৯৮ আসনের স্বতন্ত্র ৪৩০ প্রার্থীদের মধ্যে ২১৬ জন জামানত হারান। এর বাইরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের ৩ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেস, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং কল্যাণ পার্টির একজন ছাড়া সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
কেন এতো প্রার্থী জামানত হারালেন?
জাতীয় পার্টির বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "নানান অনিয়ম, প্রশাসনের অসহযোগিতা ও ভোট কারচুপির কারণে আমাদের অনেক প্রার্থী ভোটের আগে সরে দাড়িয়েছিলো। যার ফলে, এতো প্রার্থীর ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে।"
তবে, স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভোটের আগে জাপার ২৩ জন প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন দল থেকে আর্থিক সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে।
বিএনএম এর মহাসচিব মো. শাহজাহান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "এই নির্বাচন কারচুপির মহা-উৎসব ছাড়া আর কিছু হয়নি। নির্বাচনের পরিবেশ ভালো না থাকার কারণে ভোটরে আগেও আমাদের কিছু প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছিলো। ভোটের দিনও কিছু প্রার্থী ভোট বর্জন করেছিলো। যার কারণে এমন ফলাফল হয়েছে।"
প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন না হওয়ার এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ না থাকার কারণে নির্বাচনের এমন ফলাফল হয়েছে বলে মনে করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ও নির্বাচন বিশ্লেষক বদিউল আলম মজুদমদার।
তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "এই নির্বাচনে অনেকে ডামি প্রার্থী ছিলেন। আবার অনেকে চাপে পড়ে, করার খাতিরে করেছে।"
তিনি আরও বলেন, "জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কাস পার্টি এদের তো এখন আর কোনও জনসমর্থন নেই। এইগুলো এখন প্রায় বিলুপ্ত। আর কয়েকটি কিংস পার্টি, এইগুলোকে নির্বাচনের আগে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিলো। এদের কোনও জনসমর্থন নেই। এখন আমরা দ্বিদলীয় (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) ব্যবস্থায় চলে গিয়েছি। তারমধ্যে ২০১৮ সালে নির্বাচনে ২ দল অংশ নিলেও প্রতিযোগিতার মধ্যে ছিলো না। আর এবারের নির্বাচনে মাত্র ১ টি দল অংশ নিয়েছে।"
রাজনৈতিক লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "এটা নতুন কোনও প্রবণতা নয়। প্রত্যেকটি নির্বাচনে অনেক থাকে, যাদের কেউ জয়লাভ করতে পারে না। তারা জামানত হারায়। নাম সর্বস্ব দল তো প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নেয়। এটা কোনও অস্বাভাবিক কিছু না।"
তিনি আরও বলেন, "অন্যান্য নির্বাচনেও দেখা গেছে অনেক প্রার্থী ভোটে দাড়ায়। তারা এক-দেড়শত ভোটও পায় না। আগের নির্বাচনগুলোর ইতিহাস দেখলেও তা দেখা যায়। ১৯৭৩ সালের নির্বাচন থেকে প্রত্যেকটি নির্বাচনে এমন হয়ে আসছে। কিছু সাইনবোর্ড পলিটিক্যাল পার্টি নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু নির্বাচনে জয়লাভের তাদের কোনও সক্ষমতা নেই। এটা নিয়ে তাদের কোনও অনুশোচনা নেই। তবে, একটা বড় দলের মার্কা পেলে, সেই মার্কার কারণে অনেক সময় জিতে যায়।"
"এবার নির্বাচনেও বড় দলের মার্কা নিয়ে যারা জিতেছে, তারাও যদি নিজ দলের মার্কা নিয়ে নির্বাচন করতো অনেকের জামানত বাজেআপ্ত হতো"’ বলেন মহিউদ্দিন আহমেদ।
জামানত হারিয়েছেন যে আলোচিত প্রার্থীরা
এবারের নির্বাচনের আগে বিরোধী দল হওয়ার কথা বলে আসছিলো প্রথমবার ভোটে অংশ নেওয়া 'কিংস পার্টি' নামে খ্যাত তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএম এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি।
দলগুলো নির্বাচনের ঠিক আগে আগে ইসির নিবন্ধন পায়।
নির্বাচনের আগ মুহুর্তে তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএম-এ বিএনপির কিছু বহিষ্কৃত / নিষ্ক্রিয় নেতা সহ সাবেক কয়েক জন সংসদ সদস্যও যোগদান করেন।
কিন্তু, নির্বাচনে দলগুলোর চেয়ারম্যান-মহাসচিবসহ সব প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। প্রায় সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
নির্বাচনের কয়েক মাস আগে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে শীর্ষ পদে চলে আসেন বিএনপির সাবেক দুই নেতা শমসের মুবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকার।
সিলেট-৬ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন আলোচিত তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী। এ
ই আসনে ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ভোটে তার অবস্থান ছিলো তৃতীয়।
১০,৯৩৯ ভোট পেয়ে তিনি জামানত হারান।
তার মতো দলের মহাসচিব তৈমুল আলম খন্দকার নারায়গঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ভোটে তৃতীয় হন।
৩,১৯০ ভোট পেয়ে জামানত হারান তিনিও।
ভোটে চেয়ারম্যান ও মহাসচিব অবস্থান তৃতীয় হলেও দলের আরেক আলোচিত প্রার্থী নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা হুদার অবস্থান হয় চতুর্থ স্থানে।
মুন্সিগঞ্জ-১ আসন থেকে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ৬,৩৩৭ ভোট পেয়ে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
তৃনমূল বিএনপির মতো নির্বাচনে আলোচিত আরেক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো.আবু জাফর ফরিদপুর-২ আসন থেকে অংশ নেন।
এই আসনে ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় হলেও ২২ হাজার ৪৬৫ ভোট পেয়ে জামানত হারান তিনি।
আর দলের মহাসচিব মো. শাহজাহানের অবস্থা আরও খারাপ।
তিনি চাদপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে চতুর্থ হন। ১,০৭৪ ভোট পেয়ে জামানত হারান সাবেক এই সংসদ সদস্য।
দলটির আরেক আলোচিত প্রার্থী জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী।
পাবনা-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৮ প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় হলেও ৪,৩৮২ ভোট পেয়ে জামানত বাজেয়াপ্ত হয় তারও।
তবে ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার পরে অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও দল থেকে বহিষ্কৃত দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান ভোটের মাঠে খুব আলোচিত ছিলেন।
কিন্তু কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে ১৬ হাজার ১৯৯ ভোট পেয়ে জামানত বাজেয়াপ্ত হয় তার।
এবার নির্বাচনে আলোচিত নারী প্রার্থী ছিলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদের।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা হওয়া ২৬ টি আসনের মধ্যে ঢাকা-১৮ থেকে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি।
এই আসনের ১০ জন প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের হিসেবে তৃতীয় হলেও ৬,৪২৯ ভোট পেয়ে জামানত হারান।
বিএনএম এর মহাসচিব মো. শাহজাহান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "এটা কি কোনও নির্বাচন হয়েছে নাকি। ২০১৪ সালে বিনাভোটে, ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে হয়েছে। আর এবার নির্বাচনে দিনে ভোট ডাকাতি হয়েছে। ভোটের দিনের ১২ টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২ শতাংশের মতো। আর বিকালে সেটা কিভাবে ৪২ শতাংশ হয়, মানুষ বোঝে।"
তিনি আরও বলেন, "নির্বাচন আগে সরকার ও নির্বাচন কমিশন বলেছিলো ভোট সুষ্ঠু হবে। ভোটের পরিবেশ ভালো থাকবে। আমাদের দলে কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যও যোগ দিয়েছিলেন। তাই আমরা বলেছিলাম সংসদের বিরোধী দল হতে পারবো। কিন্তু ভোট শুরু পর থেকে প্রশাসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারা কেন্দ্র দখল করে ভোট চুরির মহাউৎসব বানিয়েছে।"
শাহজাহান বলেন, "তারপরও আমি দলের মুখপাত্র হিসেবে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত ছিলাম এই কারণে, যেন সরকার বলতে না পারে তোমরা যদি শেষ পর্যন্ত থাকতে, তখন দেখা যেত কি হয়। যেটা গতবার বিএনপিকে বলেছিল।"
তৃনমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "নির্বাচন নিয়ে এখন কোনও কথা বলতে চাই না। আগে দলীয় ফোরামে এই আলোচনা করবো। কেন সব প্রার্থী জামানত হারালো, সেটা খুঁজে দেখবো। তারপর নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য দিবো।"
তবে ভোটের দিন দলটির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার গণমাধ্যমকে বলেন, "এটা কোনও নির্বাচন হয়নি। নৌকার লোকজন রাতেই সব সিল মেরে দিসে। আর বাকিগুলো ভোরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানোর পরেই সব সিল মেরে দিসে। ’১৮-এর মতো সেইম। এক মুহূর্তও নির্বাচন ঠিকঠাক ছিল না।"
একাদশ সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শেরিফা কাদের ভয়েস অফ আমেরিকা বলেন, "ভোটের দিন বেলা ৩ টা পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্রে-কেন্দ্রে আমি ঘুরেছি। তখন ৫-৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু বিকালে সেটা কিভাবে ৪২ শতাংশ হলো। এই থেকে বোঝা যায় নির্বাচন কেমন হয়েছে।"
তবে, নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তার আসনে ভোট পড়েছে ২৩.০৮ শতাংশ।
একাদশ সংসদের ৯ সংসদ সদস্যের জামানত বাজেয়াপ্ত
একাদশ সংসদের ৯ জন সংসদ সদস্য দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামানত হারিয়েছেন।
তাদের মধ্যে গণফোরামের (ধানের শীষের প্রতীকের এমপি) সিলেট-২ আসনের মোকাব্বির খান।
তিনি পেয়েছেন ১ হাজার ৯২২ ভোট।
আওয়ামী লীগের ৩ জন সংসদ সদস্যও জামানত হারিয়েছেন।
এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে যশোর-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রণজিত কুমার রায় ৫৮৬ ভোট পেয়েছেন।
গাইবান্ধা-৪ মো. স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী ২৭ হাজার ৪৫০ ভোট পেয়েছেন।
নওগাঁ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ১১ হাজার ১৯০ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
আর জাতীয় পার্টির তিনজন সংসদ সদস্য জামানত হারিয়েছেন।
বরিশাল–৬ আসনে নাসরিন জাহান ৯ হাজার ১৮৮ ভোট, নীলফামারী–৩ রানা মোহাম্মদ সোহেল ১০ হাজার ২২৮ ভোট ও বগুড়া–৩ নুরুল ইসলাম তালুকদার ১০ হাজার ৫৭৩ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
এছাড়া মুন্সিগঞ্জ–১ আসনে বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীও ১৭ হাজার ৯৩৩ ভোট পেয়ে জামানত হারান।
তিনি গতবার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।
অন্যদিকে ভোটের তিন দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া চট্টগ্রাম-২ আসন নজিবুল বাশার মাইজভান্ডরী দলের প্রতীক ফুলের মালায় ২৩১ ভোট পড়েছে।
তারও জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
নজিবুল বাশার মাইজভান্ডরী ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলাম নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন করে। কিন্তু ব্যালট পেপারে আমার মার্কা থাকায় সেখানে কিছু ভোট পড়েছে।"
মোকাব্বির খান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "দিনে-দুপুরে ডাকাতি হয়েছে। আমি বর্তমান এমপি, সাবেক এমপিসহ আমরা ৪ জন নির্বাচন বর্জন করেছি। নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু দলদাস নির্বাচন কমিশন একটা কথাও বলে নাই। এই নির্বাচনে জামানত হারালে কি, আর না হারালে কি।"
বিগত নির্বাচনগুলোতে যত প্রার্থীর জামানত বাজয়াপ্ত হয়েছে
ইসির ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিসংখ্যান প্রতিবেদন অনুযায়ী- ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বতায় নির্বাচিত হয়েছিলো।
এই নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ৩৯০ জন প্রার্থী মধ্যে ১৬৩ জন জামানত হারান।
২০০৮ সালের নির্বাচনে মোট ১৫৫৭ প্রার্থীর মধ্যে ৯৪১ জন জামানত হারান, ২০০১ সালের নির্বাচনে ১৯৩৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১২৫৯ জন, ১৯৯৬ সালের ১২ জুনে নির্বাচনে ২৫৭৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৭৬০ জন এবং ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ২৭৮৭ প্রার্থীর মধ্যে ১৯৩৪ জন জামানত হারিয়েছেন।
আর গত ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে ইসি কোনও বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
এছাড়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি ছাড়া মাত্র ১ দল নির্বাচনে অংশ নেয়।
১২ দিনের সংসদের মেয়াদের এই নির্বাচনের বিস্তারিত কোনও প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি ইসি।
৭ জানুয়ারির নির্বাচন
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফলে ২৯৮ টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২২২ আসনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দলের বর্জন করা এ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের দেয়া দেয়া তথ্য মতে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। অফিসিয়াল এই ফিগার-এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে দেশে বিদেশে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ এর পর এটিই বাংলাদেশে হওয়া সবচেয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যদিও বিএনপি সহ, দেশি বিদেশী অনেকেই এই নির্বাচনকে "ডামি নির্বাচন " বলে দাবি করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তারা মনে করে, নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু ছিল না।
‘’রাজনৈতিক বিরোধীদলের হাজার হাজার সদস্যের গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন নানা অনিয়মের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।"
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘’অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সাথে যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে অভিন্ন মতামত পোষণ করে যে, এই নির্বাচন অবাধ, বা সুষ্ঠু ছিল না এবং আমরা দুঃখিত যে সব দল এতে অংশগ্রহণ করেনি।"
ব্রিটেনও তাদের বিবৃতিতে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের সময় সংঘটিত "ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার ঘটনার" নিন্দা জানিয়েছে এবং বিরোধী দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, "গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে বিশ্বাসযোগ্য, অবাধ এবং সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার উপর। মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এই মানদণ্ডগুলি ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি।"