অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

স্বতন্ত্রদের বিরোধী দল হতে অনীহা, ‘আসল’ বিরোধী দল জাপা?


সংসদ ভবন, ঢাকা
সংসদ ভবন, ঢাকা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য ও নতুন সরকারের মন্ত্রীসভার মন্ত্রীদের শপথগ্রহণ হয়ে গেলেও এখনও স্পষ্ট হয়নি কারা হচ্ছেন প্রধান বিরোধী দল।

কারণ, এবারের সংসদে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা।

তবে, বিজয়ী ৬২ জন স্বতন্ত্রদের মধ্যে ৫৮ জন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় বিরোধী জোট গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে সংখ্যায় কম হওয়ায় সংসদের দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল জাতীয় পার্টির বিরোধী দল হওয়া, না হওয়া নির্ভর করছে স্বতন্ত্রদের সিদ্ধান্তের ওপর।

আর এই জটিলতায় সংসদে প্রধান বিরোধী দল কারা হচ্ছেন এবং কে প্রধান বিরোধী নেতা হচ্ছেন তার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

দেশের প্রথম ও ষষ্ঠ সংসদে বিরোধী দল ছিলো না

বাংলাদেশের বিগত ১১টি সংসদের মধ্যে প্রথম সংসদে বিরোধী দল ছিল না।

তারমধ্যে ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসন পেয়েছিলো।

তখন সংসদীয় দল ও গ্রুপ সম্পর্কে সংসদের প্রথম অধিবেশনকালেই বিতর্ক ওঠে।

সরকার দলীয় একজন সদস্য সংসদে সরকারের বিরোধিতাকারী সদস্যদের ‘তথাকথিত বিরোধী দল’ হিসেবে আখ্যা দিলে সরকারের বিরোধিতাকারী গ্রুপের এক সদস্য আপত্তি তুলেন।

বলেছিলেন, "আমরা সরকার কর্তৃক স্বীকৃত বিরোধী দল"।

বিরোধী দলীয় নেতার অনুকূলে সংসদে একটি কক্ষ বরাদ্দ হওয়ার কথা বলেছিলেন।

ওই যুক্তিতে জাতীয় লীগের সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানকে বিরোধী দলীয় নেতার স্বীকৃতির দাবি তোলা হয়।

ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জানুয়ারি ১৪, ১৯৭১। (ছবি- মাইকেল লরেন্ট/ এপি)
ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জানুয়ারি ১৪, ১৯৭১। (ছবি- মাইকেল লরেন্ট/ এপি)

বিষয়টি নিয়ে সংসদে ২০ মিনিটের বিতর্কও হয়। এই নিয়ে সংসদের কার্যবিবরণীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি লিখিত বক্তব্য পাওয়া যায়।

সংসদ নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর যুক্তি ছিল, ২৫ জনের কম সদস্য নিয়ে গঠিত কোনও দলকে বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না।

তবে ২৫ জনের কম সদস্য নিয়ে কোনও দল গঠিত হলে এবং ওই দলে কমপক্ষে ১০ জন সদস্য থাকলে ওই দলকে পার্লামেন্টারি গ্রুপ বলা যেতে পারে। কিন্তু সংসদীয় দল বলা যাবে না।

যার প্রেক্ষাপটে প্রথম সংসদে কোনা বিরোধী দল ছিলো না।

এছাড়া ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদে বিএনপির বাইরে একটি রাজনৈতিক দলের একজন মাত্র সংসদ সদস্য থাকায় কোনও বিরোধী দল ছিলো না।

সংবিধান কী বলে?

বাংলাদেশর সংবিধান এবং সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে বিরোধী দল হতে হলেও কতজন সংসদ সদস্য লাগবে তার সংখ্যার উল্লেখ নেই।

তবে, কার্যপ্রণালি বিধির সংজ্ঞার ‘ট’ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে- ‘‘বিরোধী দলীয় নেতা’’ অর্থ স্পীকারের বিবেচনামত যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারী দলের বিরোধীতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত দল ও অধিসঙ্গের নেতা। এ ছাড়া ‘বিরোধী দলের নেতা এবং উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার)’ আইনেও একই সংজ্ঞা দেওয়া আছে।

সংবিধান বিশেজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানে বিরোধী দল নিয়ে কিছু বলা নেই।

কিন্তু সংসদের কার্যাপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সংসদের দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল হবে বিরোধী দল, তাদের মনোনীত ব্যক্তি হবে বিরোধী দলীয় নেতা।

সেইক্ষেত্রে এবারের সংসদে বিরোধী দল হওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রধিকার পাবে বিজয়ী ৬২ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা।

কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের জোট বা মোর্চা গঠন করে স্পীকারকে জানাতে হবে।

আর তারা জোট গঠন না করলে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জাতীয় পার্টিই বিরোধী দল হবে, তাদের মনোনীত ব্যক্তি হবেন বিরোধী দলীয় নেতা।

এই প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "আমাদের সংবিধানে বিরোধী দল নিয়ে কোনও বক্তব্য নেই। যেটা আছে, তা হলো সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি। সেখানে বলা আছে- সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হবেন সংসদের দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থেকে। সেটা কোনও সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থেকেও হতে পারে, আবার কোনও সংখ্যাগরিষ্ঠ জোট থেকেও। সুতরাং দল বা জোট যারা সংসদে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হবেন, তারাই বিরোধী দল হবেন। তাদের থেকে বিরোধী দলীয় নেতা হবে। এখন এককভাবে স্পীকারের সিদ্ধান্ত হবে, সংসদে কে সংখ্যাগরিষ্ঠ।"

সংসদে তো দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বতন্ত্ররা আর দল হিসেবে জাতীয় পার্টি, তাহলে কারা বিরোধী হবেন- জানতে চাইলে এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলেন, "স্বতন্ত্ররা যদি কোনও জোট বা মোর্চা না করে তাহলে তারা বিরোধী দল হতে পারবে না। কারণ তারা কোনও দলের প্রতীকে নির্বাচন করে নাই। এইক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির ১১ টি আসন নিয়ে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে বিরোধী দল হবে। তবে, স্বতন্ত্ররা ৬২ জন মিলে (যদি) কোনও জোট করে, বা যা জাপার ১১ জনের বেশি জোট হয় সেইক্ষেত্রে তারা বিরোধী দল হতে পারবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবিধানে বিরোধী দল হতে হলে কতজন সংসদ সদস্য লাগবে তা বলা না থাকলেও বঙ্গবন্ধুর একটি বক্তব্য আছে।

সেই বক্তব্য অনুযায়ী ১১ জন নিয়ে জাতীয় পার্টির বিরোধী দল হওয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

কারণ বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ছিলো বিরোধী দল হতে হলে নূন্যতম ২৫ জন সংসদ সদস্য লাগবে।

এই প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "আমি যতটুকু জানি- বঙ্গবন্ধুর আমলে বিরোধী দল হওয়ার জন্য ন্যূনতম একটা একটি সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। সেই সংখ্যাটা ছিলো ২৫ জন। যদিও আমি জানি না, তার আইনী কিংবা অন্য কোনও বৈধতা আছে কিনা। তবে, সেই কনভেনশন যদি ধরি তাহলে এই সংসদে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হতে পারবে না। তাহলে স্বতন্ত্রদের মধ্যে থেকে বা স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টি মিলে বিরোধী দল হতে হবে। এখন দেখার বিষয় এটা কি ঘটে।

বিরোধী দল হতে 'অনীহা' কেন স্বতন্ত্রদের?

বিএনপিবিহীন আসন সমঝোতার এই নির্বাচনে এবারই সর্বোচ্চ ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

তাদের মধ্যে ৫৮ জন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটিতে পদে এবং রাজনীতিতে জড়িত আছেন।

তারা বলছেন, বিএনপিবিহীন নির্বাচনকে প্রতিযোগিতা মূলক করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে দলের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো।

তাই যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে সাজা (দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি) দেওয়া হয়নি।

ফলে, এখন আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেই যাওয়া।

তবে, দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিরোধী দল হতে নির্দেশনা দেওয়া হলে স্বতন্ত্রের মধ্যে জোট করতে আপত্তি নেই।

আওয়ামী লীগের গঠতন্ত্রে বলা হয়েছে- জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হলে দল হইতে সরাসরি বহিষ্কার হবেন এবং যারা দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করবেন, তারা তদন্তসাপেক্ষ মূল দল বা সহযোগী সংগঠন হইতে বহিষ্কৃত হবেন।

কিন্তু এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রধানের বক্তব্যের পর যারা আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি।

গত ২৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে গণভবনে মত বিনিময় সভায় দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন- ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো কোনও আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাস দেখতে চান না। সব আসনেই যেন ‘ডামি (বিকল্প)’ প্রার্থী থাকে।

নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও একাধিকবার বলেছেন, "সময়ের প্রয়োজনে কৌশল পরিবর্তন করে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। নেত্রীর গাইডলাইন ফলো করে ডামি বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বাধা নেই।"

দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

বরিশাল-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন পঙ্কজ দেব নাথ। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "আমি দলের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিতে পারেন নাই। তবে, বলে দিয়েছেন চাইলে যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। তার জন্য দল তাকে কোনও শাস্তি দেবে না। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম।"

তিনি আরও বলেন, "আমি আওয়ামী লীগের লোক, বঙ্গবন্ধু ও নেত্রীর আর্দশে রাজনীতি করি। ফলে, কোনও বিরোধী জোট করার আমার লক্ষ্য নেই। আওয়ামী লীগের লোক হিসেবে দলে ফিরে যাওয়াই আমার লক্ষ্য।"

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে গাজীপুর-৫ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আখতারুজ্জামান।

তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "আমরা তো আওয়ামী লীগ করি। আওয়ামী লীগের এমপি ছিলাম। এখন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। দলের মনোনয়ন চেয়েছিলাম, তো সবাইকে তো দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু নেত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেলেন যে, সবাইকে তো মনোনয়ন দিতে পারি নাই। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হতে পারবে না। তাই বলে দিয়েছেন- দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে কারও কোনও সমস্যা নেই।"

তিনি আরও বলেন, "তখন আমার সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগের নেতারা এসে বললেন, যেহেতু নেত্রী নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে এবং বেশি সংখ্যাক ভোটার চাচ্ছেন, তাই আপনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন। তখন আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছি। ভোটারদের আমি শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা বলে ভোট চেয়েছি। তারা আমাকে ভোট দিয়েছে। কিন্তু, আমি তো আওয়ামী লীগের লোক। তাই আওয়ামী লীগ যতক্ষণ না পর্যন্ত বলছে, স্বতন্ত্র হিসেবে আমি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে চাই। অন্য কোনও বিরোধী জোট করতে চাই না। তবে, আওয়ামী লীগ থেকে যে নির্দেশ দিবে, সেই অনুযায়ী কাজ করবো।"

তিনি আরও বলেন, এ"খন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা নেই, বিরোধী দল হওয়ার জন্য। আশা করছি আমরা একটা দিক নির্দেশনা পাবো সেই অনুযায়ী কাজ করবো।"

দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে মাদারীপুর-৩ আসন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম।

তিনি ভয়েস অফ আমেরিকা বলেন, "বিরোধী দল নিয়ে চিন্তা করবে কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেই মোতাবেক কাজ হবে। আমি বিরোধী দলে যাবো না। বিশেষ নির্দেশ না আসলে আমি কখনও বিরোধী দলে যাবো না। প্রয়োজনে একাই স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত বিরোধী দলের যাওয়ার বিশেষ নির্দেশনা না আসে।"

হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন গত সংসদের আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী।

তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "আমি আওয়ামী লীগের লোক। গত সংসদে আওয়ামী লীগের এমপি ছিলাম। এখনও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ও জনগণ ভোট দিয়ে আমাকে এমপি বানিয়েছে। সংসদে স্বতন্ত্র হিসেবে জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।"

কোনও বিরোধী জোট বা দলে যাওয়ার আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছা নেই বলে জানিয়ে কেয়া চৌধুরী বলেন, "তবে, দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিরোধী দল বা জোট করার যদি কোনও নির্দেশনা আসে তখন সেই অনুযায়ী কাজ করবো।"

আমরা ‘আসল’ বিরোধী দলঃ জাতীয় পার্টির চুন্নু

নির্বাচনে জয়ী স্বতন্ত্ররা আলাদা জোট করে সংসদে বিরোধী দল হয়ে সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবে।

কিন্তু, তারা সরকারের সমালোচনা করতে পারবে না বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্ন।

তার দাবি, সংসদে তারা ‘আসল’ বিরোধী দল, "বিরোধী দলের আসনে আমরা বসবো। আমরা সরকারের সমালোচনা করবো।"

তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "সংসদে আমরাই বিরোধী দল। আমরা সরকারের সঙ্গে কিংবা মন্ত্রীসভায় যাইনি। তাহলে আমরা বিরোধী দল কিনা প্রশ্ন আসবে কেন? বিরোধী দল না হলে আমরা তো সরকারেই থাকতাম। আমরা তো আওয়ামী লীগের লোক এনে পাশ করি নাই।"

জাপা মহাসচিব আরও বলেন, "এখন স্পীকার কাউকে বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি দিলে তারা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। কিন্তু রিয়েল অপজিশন তা আমরা। একমাত্র বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।"

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা তো আওয়ামী লীগের পদধারী বলে উল্লেখ করে চুন্নু বলেন, "তারা যদি দল থেকে পদত্যাগ করে ৪০-৫০ জন মিলে কোনও জোট করে তাহলে স্বাগত জানাবো। কিন্তু তারা তো সেটা করবে না এবং সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্যও দেবে না।"

৭ জানুয়ারির নির্বাচন

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফলে ২৯৮ টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২২২ আসনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দলের বর্জন করা এ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের দেয়া দেয়া তথ্য মতে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। অফিসিয়াল এই ফিগার-এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে দেশে বিদেশে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ এর পর এটিই বাংলাদেশে হওয়া সবচেয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যদিও বিএনপি সহ, দেশি বিদেশী অনেকেই এই নির্বাচনকে "ডামি নির্বাচন " বলে দাবি করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তারা মনে করে, নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু ছিল না।

‘’রাজনৈতিক বিরোধীদলের হাজার হাজার সদস্যের গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন নানা অনিয়মের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।"

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘’অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সাথে যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে অভিন্ন মতামত পোষণ করে যে, এই নির্বাচন অবাধ, বা সুষ্ঠু ছিল না এবং আমরা দুঃখিত যে সব দল এতে অংশগ্রহণ করেনি।"

ব্রিটেনও তাদের বিবৃতিতে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের সময় সংঘটিত "ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার ঘটনার" নিন্দা জানিয়েছে এবং বিরোধী দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, "গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে বিশ্বাসযোগ্য, অবাধ এবং সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার উপর। মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এই মানদণ্ডগুলি ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি।"

XS
SM
MD
LG