বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ২০ হাজার ৭৭৩ জন দেশি পর্যবেক্ষককে অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কেন্দ্রীয়ভাবে ভোট পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়া হয়েছে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৫১৭ জনকে।
আর স্থানীয়ভাবে ৮৪টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ জন ভোট নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিবন্ধিত এসব সংস্থার পর্যবেক্ষকদের আসন বা এলাকা নির্ধারণও করে দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অনুমতি পাওয়া কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র ও গাড়ির স্টিকার সরবরাহ করে ইসি সচিবালয়।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র ও গাড়ির স্টিকার দেয় সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়।
তবে স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ শনিবার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "সময় স্বল্পতার কারণে অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের অভিজ্ঞতা যাচাই বাছাই করা সম্ভব হয়নি।"
বাংলাদেশের নির্বাচনে স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের শুরুটা কেমন ছিল?
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের পদ্ধতি চালু করা হয়।
বিষয়টি জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে সংযোজন করা হয় এবং ইসি একটি স্থানীয় পর্যবেক্ষক নীতিমালা তৈরি করে।
২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো ১৩৮টি সংস্থাকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি।
এর মধ্যে ৭৫টি সংস্থার ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন পর্যবেক্ষক নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
তবে এর আগেও দেশি–বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেতেন।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় ৬৯টি সংস্থার ২ লাখ ১৮ হাজার পর্যবেক্ষক, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
আর সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ছিল ৮১টি দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা।
ইসির একাধিক সূত্র ভয়েস অফ আমেরিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২০২৩ সালের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালায় কী আছে?
পর্যবেক্ষকের কাজ
নির্বাচন কমিশন মূলত সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোন ত্রুটিবিচ্যুতি সংঘটিত হয়ে থাকলে সে সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া; এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত বিভিন্ন নির্বাচনী উপকরণ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দক্ষতা সম্পর্কে অবহিত হওয়া, এগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন।
যাতে চিহ্নিত ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো ভবিষ্যতে সংশোধন করা যায়।
নির্বাচনী পরিবেশ এবং ব্যবস্থাপনাসহ পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছুই দেখা ও কথ্য সংগ্রহ করা নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মূল কাজ।
পর্যবেক্ষক-এর যোগ্যতা
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালায় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তির আট ধরনের যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে।
তার মধ্যে বয়স ২৫ বছর হতে হবে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম মাধ্যমিক উত্তীর্ণ।
যে কোন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হওয়া যাবে না।
কোন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা যাবে না বা কোন দলের সঙ্গে যুক্ত থাকা যাবে না।
এই পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত কোনো পর্যবেক্ষণ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।
নির্বাচনের সময় পর্যবেক্ষকদের করণীয়
কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সময় পর্যবেক্ষক পরিচিতি কার্ড সার্বক্ষণিকভাবে গলায় ঝুলিয়ে রাখবেন যাতে সবার কাছে দৃশ্যমান হয়।
পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সময় অবশ্যই ভোটারের ভোট দেয়ার অধিকারের প্রতি সচেতন থাকবেন এবং নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের কাজে যাতে বিঘ্ন না হয় সে বিষয়ে মনোযোগী থাকবেন।
পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
যেখানে অবস্থান করলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোন বাধার সৃষ্টি হবে না, ভোটকেন্দ্রের ভেতর এমন কোন জায়গায় স্বল্পসময়ের জন্য অবস্থান করে তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারিবেন।
কোন অবস্থাতেই কোন পর্যবেক্ষক ভোট প্রদানের গোপন কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না।
প্রত্যেক পর্যবেক্ষককে পর্যবেক্ষণ কাজের ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাত কিংবা অন্য পর্যবেক্ষক সংস্থার পর্যবেক্ষকের অসঙ্গত আচরণ সম্পর্কে তার নিয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করতে হবে।
পর্যবেক্ষকদের আচরণ
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করবার লক্ষ্যে সংবিধান, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি বিধান অনুসরণ।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কার্যে হস্তক্ষেপ হতে বিরত থাকা।
কোন প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করা হতে বিরত থাকা।
পর্যবেক্ষণের সময় সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং এমন কোন আচরণ প্রদর্শন না করা যাতে কোন পর্যবেক্ষক কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য বা প্রার্থীর সমর্থক হিসাবে চিহ্নিত হন।
নির্বাচনে প্রার্থী বা কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে পরিচয় বা চিহ্ন বহনকারী কোন কিছু পরিধান, বহন অথবা প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকা।
কোন রাজনৈতিক দল, প্রার্থী বা তার এজেন্ট, নির্বাচনের সাথে জড়িত কোন সংস্থা অথবা ব্যক্তির কাছ থেকে কোন উপহার নেয়া বা কেনার চেষ্টা, সুবিধা নেয়া বা সুবিধা নেয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা থেকে বিরত থাকা; এবং
নির্বাচন চলাকালীন মিডিয়ার সামনে এমন কোন মন্তব্য না করা যা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত বা প্রভাবিত করতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সময় ভোটকেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকায় কোন ধরনের অনিয়ম যা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য হুমকি হতে পারে, দেখতে পেলে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন কমিশনে রিপোর্ট করতে পারবে।
স্থানীয় পর্যবেক্ষেকরা যা বলছেন
২০০১ সাল থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন অধ্যাপক আবেদ আলি।
তিনি স্থানীয় নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান।
তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "অপ্রিয় সত্য কথা যে, এবার নির্বাচন রাজনৈতিকভাবে অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। তবে, ৭ জানুয়ারী যদি সাধারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে এবং সেটার পার্সেন্টেজ যদি অতীতের মতই হয়, তাহলে আমরা ধরে নেব জনগণের অংশগ্রহণে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে। সেজন্য আমাদের ৭ জানুয়ারী পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।"
তিনি বলেন, "আমাদের প্রত্যাশা পর্যবেক্ষণের কাজে কোন বাধা বিঘ্ন হবে না। সে ব্যাপারে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশ্বস্ত করেছেন প্রশাসনের দিক থেকে এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।আমরা এখনো প্রাথমিক যে কার্যক্রম গুলো করছি। স্মুথলি করতে পারছি বিধায় আমাদের মনে হচ্ছে আমরা নির্বিঘ্নে পর্যবেক্ষণ করতে পারব। বাকিটা তো নির্বাচনের দিন বোঝা যাবে।"
এদিকে দীর্ঘদিন থেকেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করলেও গত দুটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেননি রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক। এবার তিনি যশোর -৫ সংসদীয় আসনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। তিনি বলেন ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "আমাদের আশঙ্কা না থাকলেও প্রার্থীদের সুষ্ঠু ভোট নিয়ে নানা আশঙ্কা রয়েছে। ইলেকশন পিসফুল হলে সেরকম প্রতিবেদন উঠে আসবে। আবার অনিময় হলে সেটিও সত্য তুলে ধরবো।’’