অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বিএনপির লিফলেটে কী আছে?


বিএনপি'র লিফলেট বিলি, ঢাকা, ৪ জানুয়ারী।
বিএনপি'র লিফলেট বিলি, ঢাকা, ৪ জানুয়ারী।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ তাদের কয়েকটি মিত্র দল অংশগ্রহণ করলেও ভোট বর্জন করেছে বিএনপি ও সমমনারা। ভোট বর্জন করে অসহযোগ আন্দোলন ডেকে তা সফল করতে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে তারা।

বিএনপির দফতর সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে ১২ কোটি ভোটারের কাছে এই লিফলেট পৌঁছেছে। লিফলেট বিতরণে পুলিশি ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বাধা দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে দলটির। কী আছে ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে বিএনপির বিতরণ করা লিফলেটে?

লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি যেভাবে শুরু

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি মহাসমাবেশ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও তফশিল ঘোষণার পর তা বাতিলের দাবিতে বিএনপি টানা হরতাল-আর অবরোধ পালন করে।

১২ দফায় ২৪ দিন অবরোধ এবং ৫ দফায় ৬ দিন হরতাল পালনের পর গত ২০ ডিসেম্বর ভোট বর্জন করে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় দলটি।

এরপর গত ২১ ডিসেম্বর থেকে দলটি ভোট বর্জনের পক্ষে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। দুই থেকে তিন করে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করেছে আসছে দলটি।

পঞ্চম ধাপে ২, ৩ ও ৪ জানুয়ারি লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিতে কমাতেই দলটির এই তৎপরতা।

কী আছে বিএনপির লিফলেটে?

দলটি গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদের নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেছে এই লিফলেটে।

এতে বলা হয়েছে- আওয়ামী লীগ মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করেছে। যার ফলে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে।

এছাড়া খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি হওয়ায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের পথে।

কৃষক, শ্রমিক থেকে শুরু সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে অসহায় অবস্থা পড়ে গেছে। দেশে বর্তমানে ভোটাধিকার ও মানবাধিকার না থাকায় সর্বক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

আগামী ৭ জানুয়ারির ভোট একরফা ও পাতানো উল্লেখ করে লিফলেটে বলা হয়েছে- একটি দলের মনোনীত, স্বতন্ত্র এবং ডামি প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনের নামে খেলা হচ্ছে নিজেদের মধ্যে।

এটি কোন নির্বাচন নয়। তাই নির্বাচন ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকার আহবান জানানো হয়েছে। নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনে দলটির পক্ষ থেকে জনসাধারণকে ৫ আহবান জানানো হয়েছে।

১. ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচন বর্জন আহবান।
২. ভোটগ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ দায়িত্ব পালনে বিরত থাকার আহবান।
৩. সরকারকে সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা, ইউটিলিটি বিল, ও অন্যান্য প্রদেয় স্থগিত রাখার
আহবান।
৪. ব্যাংকগুলো সরকারের লুটপাটের অন্যতম মাধ্যম হওয়ায় ব্যাংকে লেনদের যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার আহবান।
৫. রাজনৈতিক মামলাসহ মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় অভিযুক্তগণ মামলায় হাজিরা দেয়া থেকে বিরত থাকার আহবান।


লিফলেট বিতরণের সংখ্যা ও বাজেট

গত প্রায় দুই সপ্তাহে বিএনপি কতসংখ্যক লিফলেট বিতরণ করেছে তা জানতে বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি ২০২৪) ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় দলটির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর সঙ্গে।

তিনি জানান, ইতিমধ্যেই ১২ কোটি ভোটারের প্রায় সবার কাছেই আমাদের লিফলেট পৌঁছে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি থাকলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে ভোটের আগ পর্যন্ত চলবে।

লিফলেট বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, "এখানে দলের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কোন বাজেট নেই। কারণ, আমরা কেন্দ্র থেকে এটি সব বিলি করছি না। আমরা লিফলেটের ডিজাইন করে দল ও অঙ্গসংগঠনের দায়িত্বশীলদের কাছে পাঠিয়েছি। তারা বিভিন্ন ভাবে ছাপিয়ে নিচ্ছে। ছাপিয়ে সেগুলো দল বা অঙ্গসংগঠনের ইউনিটগুলো দিচ্ছে। ইউনিটের নেতারা এলাকা ভাগ করে তা বিলি করছেন। এই প্রতিকূল মুহূর্তে এই কর্মসূচির বাজেট নির্ণয় করা সম্ভব না।"

আওয়ামী লীগ কী বলছে?

এদিকে বিএনপি ভোট বর্জনের পক্ষে ও অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে যে লিফলেট বিতরণ করছে সেটিতে ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশের পক্ষ থেকে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বিএনপির লিফলেট বিতরণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "দীর্ঘদিন পরে বিএনপির শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। তারা মানুষকে আহবান জানাচ্ছে ভোট না দিতে। ভোটকেন্দ্রে যাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার। মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে। বিএনপি সেখানে লিফলেট বিতরণ করে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছে। বিএনপির আহবানে মানুষ সাড়া দেবে না।"

তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশের মানুষ ভোটের মৌসুমে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে উৎসবের শামিল হবে এটাই তাদের জন্যে স্বাভাবিক ঘটনা। সেক্ষেত্রে বিএনপি অতীতের অগ্নি সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্বাচন বন্ধ করতে চেয়েছিল, বর্তমানে সহনশীল কর্মসূচি পালন করছে। এ ধরণের কর্মসূচিতে আমরা কোন বাধা দিচ্ছি না।"

XS
SM
MD
LG