পাকিস্তানের একাধিক মানবাধিকার গোষ্ঠী ও স্বাধীন পর্যবেক্ষকরা ৮ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য সংসদীয় নির্বাচনের সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সোমবার সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তারা মূলধারার একটি রাজনৈতিক দলের উপর সেনা বাহিনীর সাহায্যপুষ্ট সরকারের দমনপীড়ন ও গণমাধ্যমের ক্রমবর্ধমান সেন্সরশিপের কথা উল্লেখ করেছে।
কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআইকে লক্ষ্য করে এই দমন-কাজ চালানো হচ্ছে। এদিকে, জনসমীক্ষা অনুযায়ী, পিটিআই এই দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল।
পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের (স্বাধীন) সহ-চেয়ারপার্সন মুনিজায়ি জাহাঙ্গির ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আসন্ন নির্বাচন যে অবাধ, নিরপেক্ষ বা বিশ্বাসযোগ্য হবে তার প্রমাণ এই মুহূর্তে খুবই কম।”
পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে কিনা প্রশ্ন করা হলে জাহাঙ্গির বলেন, “আমার মনে হয়, কারও মনে কোনও সন্দেহ নেই যে, এই দেশের সমস্ত কলকাঠি নাড়ছে সামরিক বাহিনীই।”
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার-উল-হক কাকরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে সেনাপন্থী রাজনৈতিক দলগুলির হয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠছে বারবার। আসন্ন নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা সুনিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মুর্তাজা সোলাঙ্গি সোমবার সমস্ত অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, স্বচ্ছভাবে নির্বাচন আয়োজন করতে দেশের স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করার বিষয়ে তাঁর সরকার দায়বদ্ধ।
ইমরান খান ও তাঁর দলের সদস্যদের প্রার্থীতা “তুচ্ছ কারণে” বাতিল করার জন্য নির্বাচন কর্তৃপক্ষের সমালোচনাও করেছেন জাহাঙ্গির এবং “বেআইনিভাবে ” পিটিআই-এর বিরুদ্ধে দমনপীড়নের নিন্দা করেছেন।
ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইন্সটিটিউটের অধিকর্তা মাইকেল কুগেলম্যান নির্বাচনে পিটিআই-এর অংশগ্রহণ বাদ দেওয়া বা সীমায়িত করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছেন, এতে পাকিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না।
কুগেলম্যান ভিওএ-কে বলেন, “পশ্চিমা বিশ্ব-সহ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলির কোনও নির্বাচন নিয়ে প্রত্যাশা হল, তা হবে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ও সহিংসতা-মুক্ত।”
সংসদে বিরোধীদের নেতৃত্বে অনাস্থা প্রস্তাব এনে ক্রিকেটার থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া ইমরান খানকে ২০২২ সালের এপ্রিলে দফতর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। খান এই পদক্ষেপকে অবৈধ বলে নাকচ করেছিলেন।
অলাভজনক ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন নেটওয়ার্ক বা এফএএফইএন পাকিস্তানে সুশাসন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরে। নির্বাচনী স্বচ্ছতাকে জোরালো করার স্বার্থে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র নিয়ে নির্বাচন কমিশনের আপত্তি ও পরে তা প্রত্যাখ্যানের কারণগুলি জনসমক্ষে প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছে এই সংস্থা।