আগামী ৭ জানুয়ারী বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি'র নেতৃত্বে ৩৬ টি রাজনৈতিক দল ও ইসলামী আন্দোলন সহ বেশ কিছু ইসলামপন্থী দল এই নির্বাচন বয়কট করেছে।
অতীতের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতায় দেখা যায় নির্বাচন বর্জনকারী এই দলগুলোর সম্মিলিত ভোট চল্লিশ শতাংশের কিছু বেশি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট দলগুলির অংশগ্রহণ ছাড়া, বিশেষ করে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দু'টি দলের একটি, বিএনপি'র অংশগ্রহণ ছাড়া এ নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হতে যাচ্ছে তা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশ্ন উঠেছে।
পাশাপাশি বিএনপি ও নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করলে তা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হতো কিনা এই প্রশ্নটিও জোরালোভাবে নানা মহলে আলোচিত হচ্ছে।
এসব বিষয় নিয়ে কী ভাবছেন বাংলাদেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা তা নিয়ে ভয়েস অফ আমেরিকা কথা বলেছে সুশীল সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের সাথে।
এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আদিত্য রিমন।
সাক্ষাৎকারঃ চলচ্চিত্র পরিচালক অমিতাভ রেজা
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোয়ন বৈধ হবার জন্য ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন জানিয়ে স্বাক্ষর জমা দেয়ার যে বিধান আছে তা কতটা যুক্তিসঙ্গত বা ন্যায্য?
অমিতাভ রেজাঃ আমার মনে হয় না এই বিধানটা খুব জরুরি। সে (স্বতন্ত্র প্রার্থী) যদি গণমানুষের ভোটে নির্বাচিত হতে না পারে সেটা তো পরে দেখাই যাবে। কিন্তু ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের যে গল্প এটা একটা জটিল বিষয়। ভোট প্রতিটি মানুষের নাগরিক অধিকার। আমি কাকে ভোট দেবো, সেটা আগে কেন প্রকাশ করবো? তাই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে আগেই ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিধানটা যুক্তিসঙ্গত মনে করি না।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ এই নির্বাচনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হলে কি অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু হতো?
অমিতাভ রেজাঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটাই একটা অসাংবিধানিক। এখানে দুঃখজনক ব্যাপার হলো দেশের স্বাধীনতার ৫২ বছরেও আমাদের নির্বাচন কমিশনকে স্বতন্ত্র, নির্ভরযোগ্য, কার্যকর, বিশ্বাসযোগ্য, কোনও ধরণের সমালোচনার ঊর্ধ্বে একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করতে পারিনি। শুধু এটা নয়, আমাদের প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন এইগুলো আমরা নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করতে পারি নাই। এটা আমাদের ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো একটা অসাংবিধানিক সরকার তৈরি করে প্রতিবারই নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটাকে দেখাতে চাওয়াটাই আমাদের ভুল। বরং আমাদের দাবি থাকা উচিত, নির্বাচন কমিশনকে কিভাবে দলীয় প্রভাব মুক্ত করে একদমই স্বতন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করা যায়।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ বিএনপিকে ছাড়া এ নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য?
অমিতাভ রেজাঃ আসলে এটা একটা পার্টিগত নির্বাচন নয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে-সব দলের জন্য এমন একটা গ্রাউন্ড, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে সরকার বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা পেরেছে কিনা? কিন্তু সেটা পারেনি তারা। আমি বিএনপির রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না, তারা নির্বাচনে অংশ নিলো কি নিলো না সেটা অন্য প্রশ্ন। কিন্তু সব দল যাতে কোনও সন্দেহ ছাড়া নির্বাচনে আসতে পারে, সেই রকম পরিবেশ তৈরি করতে না পারাই সরকারের ব্যর্থতা।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ কতদিন টিকে থাকবে? তিন মাস, ছয় মাস, এক বছর, পূর্ণমেয়াদ?
অমিতাভ রেজাঃ আমি জ্যোতিষ না, এটা তারাই বলতে পারে। আমি একজন সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে একটা নির্ভরযোগ্য সরকার চাই। গণমানুষের ভোটে নির্বাচিত সরকার চাই। সেটা করতে না পারলে আমাদের দুঃখ করার ছাড়া কিছুই করা নেই। কিন্তু একজন সচেতন সাংস্কৃতিক ব্যক্তি হিসেবে দাবি থাকবে যাতে দেশে একটা নির্ভরযোগ্য নির্বাচন হয়।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ আপনি এবার ভোট দিতে যাবেন?
অমিতাভ রেজাঃ কেন যেনি প্রতিবারই আমি খুব সুন্দর মতো ভোট দিয়ে আসছি। আমাদের উত্তরায় প্রতিবারই আমরা পরিবারের খুব সুন্দর মতো ভোট দিতে পেরেছি। এবার হয়তো ভোট দিতে যাবো। কিন্তু আমার এলাকায় যারা নির্বাচনে দাড়িয়েছেন তাদের সম্পর্কে আমি পরিষ্কারভাবে জানি না। জেনেই হয়তো ভোট দিতে যাবো।