অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইন্দোনেশিয়ার আচেহর সাবাং শহরে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে


ফাইল- ইন্দোনেশিয়ার উত্তর আচেহ প্রদেশে নৌকায় করে আসছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। ৩০ ডিসেম্বর ২০২১।
ফাইল- ইন্দোনেশিয়ার উত্তর আচেহ প্রদেশে নৌকায় করে আসছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। ৩০ ডিসেম্বর ২০২১।

দুই সপ্তাহ ধরে ১৩৯ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের ওয়েহ দ্বীপের সাবাং শহরে অবস্থান করছে।শরণার্থীদের দল একটি ভগ্নপ্রায় নৌকায় করে সেখানে পৌঁছেছিল। তারা এখন আচেহর সাবাং শহরের সাবাং ফ্রি ট্রাড জোন এবং ফ্রি পোর্ট অথরিটি (বিপিকেএস)-এর মালিকানাধীন সিটি-ওয়ান পিয়ার এলাকার একটি স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।স্থানীয় কর্তৃপক্ষ শরণার্থীদের অস্থায়ীভাবে থাকার জন্য এবং প্রচন্ড রোদ ও বৃষ্টি থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য চারটি সাদা তাঁবু স্থাপন করেছে। এছাড়া বসার বা ঘুমানোর জন্য ত্রিপল রয়েছে।

পর্যাপ্ত খাবার বা অন্যান্য সরবরাহ না থাকায় কিছু শরণার্থী বিশেষ করে শিশুরা অসুস্থ হতে শুরু করেছে। সবচেয়ে সাধারণ অসুস্থতার মধ্যে রয়েছে ত্বক ও মাথার চুলকানি; সেখানে ডায়রিয়ার প্রকোপও রয়েছে।

ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কিছু শরণার্থী বলেছেন, তারা জানেন যে, ২ ডিসেম্বর সাবাং-এর লে মেউলি বিচের তীরে উদ্বাস্তুদের একটি দলকে নিয়ে আসা ভাঙা নৌকাটি তীরে ভেড়ার পর থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের উপস্থিতি প্রত্যাখ্যান করেছিল। দিলওয়ার শা (৩০) নামে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী অনুবাদকের সাহায্যে ভয়েস অফ আমেরিকার সাথে কথা বলেছেন।

১৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা এখানে আসতে চেয়েছিলাম কারণ আমরা শুনেছিলাম আমাদের মতো অনেক রোহিঙ্গাকে আচেহর মানুষেরা বাঁচিয়েছে।”

তবে আপাতত এরপর কী হবে তা দেখার অপেক্ষায় আছে দিলওয়ার।

দিলওয়ার বলেন, “আমরা ইন্দোনেশিয়া আসার পর ইউএনএইচসিআর এসেছিল। ইউএনএইচসিআর আমাদের এটি (ব্রেসলেট) দিয়েছে। এটি দেয়ার পরে তারা (আর) আসেনি। তাই আমরা সবাই ইউএনএইচআরের জন্য অপেক্ষা করছি। আমরা সবাই আনন্দের সাথে তাদের জন্য অপেক্ষা করছি।”

দিলওয়ার বলেন, বাংলাদেশের ক্যাম্প ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি পাবার জন্য তাকে এবং অন্যান্য রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জাহাজের ক্যাপ্টেনকে কিছু টাকা দিতে হয়েছিল। তবে তিনি কত টাকা দিয়েছেন তা উল্লেখ করেননি।

দিলওয়ার বলেন, “তারা (জাহাজের ক্রু) প্রত্যেক ব্যক্তির কাছ থেকে আলাদা আলাদাভাবে টাকা নিয়েছে।”

দিলওয়ার ২০১৭ সালে সহিংসতা এবং জাতিগোষ্ঠীগত গণহত্যার কারণে মিয়ানমার থেকে পালিয়েছিলেন। তিনি প্রথমে বাংলাদেশের কক্সবাজারের এক শরণার্থী শিবির থেকে অন্য শরণার্থী শিবিরে চলে যান।তবে তিনি ও তার সাথে আরও মানুষ উন্নত জীবন খোঁজার উদ্দেশ্যে পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

সাক্ষাৎকারের শেষে তিনি বলেন, “আমরা জীবন বাঁচাতে ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমাদের স্কুলে পড়ার সুযোগ ছিল না, আমাদের কিছুই ছিল না।আমাদের কিছু ছিল না বলে আমরা ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারিনি।শেষ পর্যন্ত আমরা ইন্দোনেশিয়া আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

এই প্রতিবেদন তৈরি করার সময় পর্যন্ত সাবাং-এর মেয়র রেজা পাহলভি এবং সাবাং পুলিশ প্রধান একেবিপি এরওয়ান ভয়েস অফ আমেরিকার অনুসন্ধানের জবাব দেননি।

সিটি ওয়ান পিয়ারে আশ্রয় নেয়ার আগ পর্যন্ত, স্থানীয় বাসিন্দারা চলে যেতে বলার আগ পর্যন্ত শরণার্থীরা বলহানে আশ্রয় নেয়। কিন্তু প্রকাশ্যে এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি অপছন্দ প্রকাশ করা সত্ত্বেও সহানুভূতিশীল স্থানীয় কিছু উদ্বাস্তু এখনো তাদেরকে খাদ্য, পানীয়, পোশাক এবং ওষুধ দিয়ে সহায়তা করে।

এখন পর্যন্ত শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য বা নিবন্ধন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যাননি। ভয়েস অফ আমেরিকা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর কোনো কর্মকর্তাকে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আশ্রয়ে দেখেনি।উভয় আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা এখনো ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক, আইনি ও নিরাপত্তা বিষয়ক সমন্বয়কারী মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করছেন এবং তাদেরকে আরও সময় দেয়ার অনুরোধ করছেন বলে জানা গেছে।

XS
SM
MD
LG