বুধবার পাকিস্তানের একটি বিশেষ আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতায় থাকার সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত গোপন তথ্য প্রকাশ করার একটি নজিরবিহীন ও বিতর্কিত অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।
এই অভিযোগের কারণে কারাবন্দি এই জনপ্রিয় নেতার জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার এবং ক্ষমতায় ফিরে যাওয়ার সুযোগে নতুন করে আঘাত লাগলো। পাকিস্তানে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবার কথা।
এই অভিযোগের অপর আসামি হচ্ছেন শাহ মোহাম্মদ কোরেশি, যিনি একজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এই ঘটনায় তাঁর কথিত ভূমিকার জন্য তাকে অভিযুক্ত করা হয়। এই আইনি কার্যক্রমের সময় বিদেশী সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি । তবে কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু স্থানীয় সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি আইনজীবি শাহ খাওয়ার রয়টার্সকে বলেন, “ আদালত কক্ষে এই সব অভিযোগ জোরে পড়ে শোনানো হয়”। তিনি আরও বলেন খান ও কোরেশি উভয়ই নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন।
খানের আইনজীবি, ব্যারিস্টার গওহর খান এই অভিযোগের বিরোধীতা করেন। শুনানির পর তিনি সংবাদদাতাদের বলেন , “ কোন অভিযোগ আমাদের সামনে গঠন করা হয়নি এবং অভিযুক্তরা তাতে স্বাক্ষরও করেননি।“ ঐ আইনজীবি আরও অভিযোগ করেন যে বিচার কাজটি “ খুব দ্রুত পরিচালনা করা হয় এবং তাতে কোন স্বচ্ছতা এবং ন্যায্যতা ছিল না”।
তিনি বলেন, “ বিচার কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে, আর যখনই তা দ্রুতগতিতে করা হয় , তখনই তা বিটর্যস্ত হয়”। বিবাদি পক্ষের উকিল দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে এই বিচার খোলাখুলি হচ্ছে না এবং অধিকাংশ বিদেশি ও স্থানীয় সংবাদ প্রতিবেদককে আদালতের এই কার্যক্রম শুনতে দেয়া হয়নি যা কীনা আইনের লংঘন।
তিনি বলেন, “ কাউকে রাজনৈতিক ভাবে হয়রানি করার জন্য, পাকিস্তানের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে । যথেষ্ট হয়েছে। এটা বন্ধ হতেই হবে”।
রুদ্ধ দ্বার বিচার কার্যক্রমে একই অভিযোগে প্রথমে অক্টোবর মাসে খান ও কোরেশিকে অভিযুক্ত করা হয় কিন্তু উচ্চতর আদালত এই প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয় এবং কর্তৃপক্ষকে খোলা বিচার নিশ্চিত করতে ও পরিবারের সদস্য ও সংবাদদাতাদের সেখানে থাকার অনুমতি দেয়ার কথা বলেন।
তবে সরকার বলছে নিরাপত্তার কারণে এবারও বিচার প্রক্রিয়া রাজধানী ইসলামাবাদের কারাগারের ভেতরেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হলে তার শাস্তি হবে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদন্ড কিংবা মৃত্যুদন্ড।
এই মামলার উৎপত্তি একটি গোপন তারবার্তা থেকে যাকে অভ্যন্তরীণ ভাবে সাইফার বলা হচ্ছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত এই তারবার্তাটি ইসলামাবাদে পাঠান।
ইমরান খান অভিযোগ করেছেন যে এই সাইফারে তার সরকারকে সেনাবাহিনীর সাহায্যে এক মাস পরে ক্ষমতাচ্যূত করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রমাণ পাওয়া যায়। ইউক্রেন আক্রমণের ঠিক আগের দিন তার মস্কো সফরের জন্যতাকে এই শাস্তি দেয়া হলো।
ওয়াশিংটন এবং পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী উভয়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।