রবিবার জাতিসংঘের কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা আলোচনা শুরুর আগে এমন এক দৃশ্য দেখেন যা সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিরল —একটি বিক্ষোভ।
এবারের সম্মেলনের প্রাক্কালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেসব অধিকারকর্মীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে, তারা এই স্বৈরতান্ত্রিক দেশের নির্ধারণ করে দেওয়া কঠোর নির্দেশনা মেনে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ থেকে শুরু করে জলবায়ু সমস্যা পর্যন্ত, যেকোনো বিষয় নিয়েই বিক্ষোভে অংশ নিতে পারবেন।
এই দেশে দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ থাকা বেশ কিছু সংগঠনের সদস্যদেরও দেশটিতে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় পরে তারা প্রতিবাদের সুযোগ পেয়েছেন। তবে অনেকে স্বীকার করেন, তারা আর ভবিষ্যতে দেশটিতে ফিরে আসার সুযোগ নাও পেতে পারেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাত আবু ধাবির শাসকের নেতৃত্বে একটি ফেডারেশন, যেখানে সাতটি শেখ-শাসিত রাজ্য অন্তর্ভুক্ত। দেশটিতে রাজনৈতিক দল ও শ্রম ইউনিয়ন গঠন নিষিদ্ধ। শাসকরা উত্তরাধিকারসূত্রে ক্ষমতা পান এবং তাদের হাতেই থাকে সর্বময় কর্তৃত্ব।
আইনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং বেশিরভাগ বড় গণমাধ্যম হয় সরকার নিয়ন্ত্রিত অথবা সরকার সংশ্লিষ্ট।
বিদেশী শ্রমিকরা মাঝে মাঝে কাজের পরিবেশ ও পাওনা বেতন নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিলেও, এগুলো দেশটির আইনের দৃষ্টিতে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এসব বিক্ষোভের ফলে তারা কখনো আংশিক নিষ্পত্তি পেতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে তাদেরকে দ্রুত নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
দেশটির মোট জনসংখ্যা ৯২ লাখেরও বেশি, কিন্তু সেখানে আমিরাতীর সংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশ।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা
তবে কপ২৮ সম্মেলনের আগে জাতিসংঘ ও সংযুক্ত আরব আমিরাত একমত হয়, যে সম্মেলন চলাকালে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। অধিকারকর্মীরা জানান, তাদেরকে সম্মেলনের আয়োজকদের কাছ থেকে বিক্ষোভের অনুমোদন নিতে হয়েছে।
রবিবার দিনের শুরুতে এক ডজন বিক্ষোভকারী ব্যানার উঁচিয়ে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে বিরতির আহ্বান জানান। কোনো কোনো ব্যানারে গাজা ভূখণ্ডে নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের নাম ও বয়স উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসরাইলি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সম্মেলনস্থলের একটি প্যাভিলিয়ন থেকে এসে অল্প সময়ের জন্য এই বিক্ষোভ নিয়ে জাতিসংঘ নিয়োজিত পুলিশের সঙ্গে তর্ক করেন। পুলিশ কর্মকর্তারা ব্লু জোনের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।
ব্লু জোনটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে থাকে এবং এখানে সম্মেলনের বিষয়-বস্তু নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে।
বিক্ষোভস্থলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক পথচারী অল্প সময়ের জন্য ফিলিস্তিনি পতাকা উঁচিয়ে ধরেন। এ সময় বিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারীরা তাকে এই পতাকা সরিয়ে রাখার অনুরোধ করেন। জাতিসংঘের বিধি অনুযায়ী, বিক্ষোভে জাতীয় পতাকার ব্যবহার নিষিদ্ধ।