অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

হামাসের কাছে আটক জিম্মিদের দ্বিতীয় দফায় বিলম্বে মুক্তি


ইসরাইলের পেটাহ টিকভায় শিশুদের হাসপাতালে মুক্তি প্রাপ্ত ইসরাইলিদের পারিবারিক মিলন । নভেম্বর ২৫,২০২৩।
ইসরাইলের পেটাহ টিকভায় শিশুদের হাসপাতালে মুক্তি প্রাপ্ত ইসরাইলিদের পারিবারিক মিলন । নভেম্বর ২৫,২০২৩।

হামাস জানিয়েছে যে তাদের সশস্ত্র শাখা ১৩ জন ইসরাইলি জিম্মি এবং ৪ জন বিদেশী নাগরিককে শনিবার রাতে গাজায় রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করেছে। কাতারের একটি সুত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে যে এই দলটি ছিঁটমহলটির অভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মিশরে যাচ্ছে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি এর আগেই সামাজিক মাধ্যমে দেয়া পোস্টে একই কথা জানিয়েছেন যদিও তাঁর সংখ্যা ছিল ভিন্ন। তিনি জানিয়েছিলেন যে ৪ জন ইসরাইলি নারী , ৮ জন শিশু ও ৭ জন বিদেশি গাজা ত্যাগ করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শনিবার বিকেলে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির সঙ্গে কথা বলেন। সানি তাঁকে জানান যে বন্দি বিনিময় আবার চালু হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি জিম্মিদের গ্রহণ করতে যাচ্ছে।

হোয়াইট হাউস জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, জিম্মি বিষয়ক চুক্তি বাস্তবায়নের সর্বসাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে শনিবার সারাদিন বাইডেনকে অবহিত করা হয় ।

এর আগে ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠীর সশস্ত্র শাখা হামাস শনিবার জানায় যে পর্যন্ত না ইসরাইল গাজার উত্তরাঞ্চলে ত্রাণবাহী আরও ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে সে পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় জিম্মি মুক্তি বিলম্বিত হবে।

হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান বলেন ৩৪০ টি ট্রাকের মধ্যে মাত্র ৬৫ টি ট্রাক শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত গাজার উত্তরাঞ্চলে পৌঁছেছে যা “ ইসরাইল প্রতিশ্রুত সংখ্যার অর্ধেকেরও কম”।

বন্দি বিষয়ক ফিলিস্তিনি কমিশনার কাদুরা ফারেস আরও বলেন যে ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি যে বয়স অনুযায়ী হবার কথা ইসরাইল সেই শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

তবে ইসরাইলের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী পরিষদের সদস্য আভি দিকটার চ্যানেল ১৩ নিউজকে বলেন “ইসরাইল হামাসের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি মেনে চলছে”।

ইসরাইলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ইসরাইলে ৪২ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তির বিনিময়ে শনিবার হামাসের হাতে জিম্মি ১৪ জন ইসরাইলির মুক্তি যখন আশা করা গিয়েছিল তখনই এই খবরটি আসলো। সাত সপ্তাহের যুদ্ধের পর এটি ছিল দ্বিতীয় দিনের অস্ত্র বিরতি । এই যুদ্বে হাজার হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছে।

সামজিক মাধ্যম এক্স’( সাবেক টুইটার)’এ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতেনিয়াহু লিখেছেন, পরিস্থিতি যাই-ই হোন না কেন, তিনি সকল জিম্মিকে ফিরিয়ে আনতে বদ্ধ পরিকর।

তিনি বলেন. “আমরা সবেমাত্র জিম্মিদের প্রথম পর্বের কয়েকজনের প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন করেছি: শিশুরা , তাদের মায়েরা এবং আরও নারী ফিরে এসেছেন। তারা প্রত্যেকেই একেকজন পূর্ণাঙ্গ বিশ্ব। কিন্তু আমি আপনাদের পরিবারবর্গকে এবং আপনাদেরও, ইসরাইলের নাগরিকদের জোর দিয়েই বলছি, আমরা সকল জিম্মিকে ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ । এটি হচ্ছে এই যুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য আর আমরা এই যুদ্ধের সব লক্ষ্য অর্জনে বদ্ধপরিকর”।

জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক মার্টিন গ্রিফিথস শুক্রবার আশা প্রকাশ করেন, “ মানবিক বিরতির এই প্রথম দিনের পর আরও এমন দিন আসবে আর তা দীর্ঘমেয়াদি অস্ত্র বিরতির দিকে যাবে যা কীনা গাজা, ইসরাইল ও তার বাইরের জনগণের উপকারে আসবে।

লড়াইয়ে এই বিরতির ফলে জাতিসংঘ গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়াতে পারছে। শুক্রবার নিতজানা থেকে রাফাহ সীমান্ত পেরিয়ে ২০০ টি ট্রাক প্রবেশ করে এবং ১৩৭টি ট্রাকের পণ্যগুলি ইউ এন রিলিফ এন্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর দ্য প্যালেস্টেনিয়ান রিফিউজিস ইন দ্য নিয়ার ্ ইস্ট ‘এর তত্বাবধানে গাজার প্রবেশ পথে নামানো হয়।

রাফাহ সীমান্ত দিয়েই চারটি জ্বালানির ট্যাংক এবং চারটি রান্নার গ্যাসের ট্যাংক মিশর থেকে গাজা ভূখন্ডের দক্ষিনাঞ্চলে জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সংস্থার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।

গাজার হাজার হাজার অধিবাসী তাদের নিজেদের বাড়ির অবস্থা দেখার জন্য অস্থায়ী আশ্রয়স্থল এবং তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসছেন।

গাজা ভুখন্ডের এই ছোট্ট স্থানে যে ২৩ লক্ষ লোক বসবাস করেন তাদের জন্য প্রায় অব্যাহত ভাবে বিমান ও সাঁজোয়া আক্রমণের এই বিরতি নরিাপদে বেরিয়ে আসার, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখার এবং মানবিক সহায়তা পাবার সুযোগ করে দিয়েছে।

ইসরাইল , ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী, কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার পর যে চুক্তি হয় তারই অংশ হিসেবে লড়াই থেমে থাকার সময়ে হামাস ৫০ জন জিম্মিকে এবং ইসরাইল ১৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে বলে কথা আছে।

.এদিকে শনিবার লন্ডনে ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে একটি বিশাল মিছিল হয়েছে। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন নামে এই মিছিলে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনের জন্য ডাকা হয়েছে। পার্ক হল থেকে হোয়াইট হল পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের মিছিল্ চলবে বলে জানা যায়।

ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এই সমাবেশ থেকে একজন বিক্ষোভকারীকে ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে । বর্ণবাদী ঘৃণা উস্কে দেয়া সন্দেহে তাকে আটক করা হয়। পুলিশ বলছে, “ পুলিশ তাকে নাৎসিদের প্রতীক বহনকারি একটি প্ল্যাকার্ডসহ দেখতে পায়।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে । ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।

XS
SM
MD
LG