কয়লা ও এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়িয়ে সরকার পরিচ্ছন্ন জ্বালানি রূপান্তরের বিপরীত পথে চলতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে 'বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বর্তমান পরিবর্তন' শীর্ষক ত্রৈমাসিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সহযোগী গবেষক হেলেন মশিয়াত প্রীতি।
খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কয়লা জীবাশ্ম জ্বালানির সবচেয়ে খারাপ উৎস। বাংলাদেশে এর ব্যবহার বাড়ছে কারণ সরকার জ্বালানি রূপান্তরের বিপরীত দিকে যাত্রা শুরু করেছে।
তিনি বলেন, “জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কয়লা নির্ভরতা কমানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কয়লার ব্যবহার ও কয়লার জন্য ব্যয় দিন দিন বাড়ছে”।
খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, “জুন, জুলাই ও অগাস্ট মাসে লোডশেডিং অব্যাহত ছিল। ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের ত্রুটির কারণে লোডশেডিং বাড়ছে। জ্বালানি খাতে অনেক বিল বকেয়া রয়েছে”।
অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদন পরিহার করে সরকার এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকছে এবং এলএনজি অবকাঠামো উন্নয়ন বাড়ছে। এর ফলে ঋণ ও বিল পরিশোধে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে বলে জানান খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, “দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও তা করা হচ্ছে না। গ্যাস ক্ষেত্র উন্নয়নে বরাদ্দকৃত অর্থ এলএনজি আমদানির জন্য ঋণ নেওয়া হচ্ছে। সরকারের ৪৬টি কূপ খননের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যা পূরণ করতে হবে”।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসঙ্গে খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে আগ্রহী হলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
তিনি বলেন, “দক্ষতা বৃদ্ধি না করলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে না। প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি না করলে বিদ্যুতের উচ্চ মূল্য গ্রাহকদের ওপর চাপ বাড়াবে”।
খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে লাভজনক হলেও গত তিন মাসে এর অগ্রগতি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম।
অন্যদিকে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে প্রতিনিয়ত ইউএস ডলার অপচয় হচ্ছে। এক ডলার সঞ্চয় রাখার লড়াইয়ে এলএনজি ও কয়লা আমদানিতে ডলার খরচ হচ্ছে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গ্যাস থেকে কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে কার্বন নিঃসরণও বেড়েছে। ১১ বছরে তা বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। বায়ুদূষণের কারণে মানুষের আয়ু কমে যাচ্ছে।