যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় তবে আগামী নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা না ঘটার বা কম ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত।
সোমবার, ১৬ অক্টোবর ভয়েস অফ আমেরিকার সাথে এক সাক্ষাতকারে তিনি একথা বলেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন, হামলার ঘটনা না ঘটে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে এবং ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন তারা যেন নিরাপদে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে এটা নিশ্চিত করার জন্য হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে বলে ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানিয়েছেন এডভোকেট দাশগুপ্ত। এছাড়া, নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু নাগরিকদের মানবাধিকার কোনভাবেই যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সেজন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ-র নেতৃত্বাধীন কমিশনে ও পৃথকভাবে স্বারকলিপি দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
আগামী নির্বাচনে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুরা যাতে নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিতের জন্যে নির্বাচন কমিশনে ৭ দফা এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়, সেজন্য মানবাধিকার কমিশনে ৫ দফা প্রস্তাব তারা দিয়েছেন ।
গত ১২ অক্টোবর কুমিল্লাতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে যুবলীগের কর্মীরা ধাওয়া দিয়েছে, এ প্রেক্ষাপটে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল দুর্গাপূজার সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট আন্তরিক কিনা, ভয়েস অফ আমেরিকার এমন একটি প্রশ্নের জবাবে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, হামলার ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে ২ জন যুবলীগ কর্মীকে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ২টি সমাবেশ কুমিল্লায় স্থগিত করা হয়েছে, সরকারি দল ও প্রশাসনের এই উদ্যোগকে তারা ইতিবাচকভাবেই দেখছেন।
এডভোকেট দাশগুপ্ত আরো বলেন, মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের তরফ থেকে এবারের শারদীয় দুর্গাপুজোয় নিরাপত্তার পরিবেশ নিশ্চিতে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। "আমরা এ অঙ্গীকারের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। দুর্গাপূজার সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে (সরকার) যথেষ্ট আন্তরিক কি না তা সময়ই বলে দেবে।" চলতি বছরে দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার অন্তত ১ মাস আগে থেকে দেশের নানান মন্দিরে বিগ্রহ ভাংচুর ও আক্রমণের ঘটনা তাদের সামনের পরিস্থিতি নিয়ে অধিকতর উদ্বেগ তৈরী করেছে বলেও তিনি জানান।
সংখ্যালঘুদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোর মধ্যে একটি ঐকমত্য প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন কিনা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও উন্নতির লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে সামাজিক চুক্তি প্রয়োজন সে আলোচনায় বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জনাব রানা দাশগুপ্ত ইতিবাচক জবাব দেন। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোর মধ্যে একটি ঐকমত্য প্রয়োজন। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে তারা উদ্যোগ নিয়েছেন।
সাক্ষাৎকার
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ গত পহেলা অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে দুর্গাপূজার সময় নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আপনি বলেছেন, ২০২১ সালে পূজার সময় (হামলার) ঘটনা ঘটেছে, ২০২২ সালে ঘটেনি, তার মানে সরকার চাইলে (হামলার) ঘটনা ঘটবে না, না চাইলে ঘটবে, এটা এখনকার বাস্তবতা। ওই প্রেস কনফারেন্স-এ আপনি আরো বলেছেন এর মধ্যেই এবার মূর্তি ভাঙা শুরু হয়ে গেছে...এরপর গত ১২ অক্টোবর কুমিল্লাতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে যুবলীগের কর্মীরা ধাওয়া দিয়েছে, এ প্রেক্ষাপটে আপনি কি মনে করেন যে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল দুর্গাপূজার সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট আন্তরিক?
রাণা দাশগুপ্তঃ আপনার এ প্রশ্নের জবাবে বলতে চাই, কুমিল্লার স্থানীয় সরকারদলীয় এমপি বাহারের দুর্গাপুজো নিয়ে অশালিন উক্তি ও মন্তব্যের প্রতিবাদে গত ১২ অক্টোবর বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে হামলার ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে ২ জন যুবলীগ কর্মীকে গত ১৫ অক্টোবর গ্রেফতার করে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। এরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছে। তাছাড়া ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ২টি সমাবেশ কুমিল্লায় স্থগিত করা হয়েছে। আমরা সরকারি দল ও প্রশাসনের এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই। অতি সম্প্রতি ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় আসন্ন শারদীয় দুর্গাপুজোর সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়। এতে ২০২১ সালের দুর্গাপুজোর সময় সংগঠিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং ২০২২ সালের এই সময়ে শান্তিপূর্ণ সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে উৎসব অনুষ্ঠানের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে বলা হয়, সরকার চাইলে শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব। মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের পক্ষে এবারের শারদীয় দুর্গাপুজোয় নিরাপত্তার পরিবেশ নিশ্চিতে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। আমরা এ অঙ্গীকারের প্রতি আস্থা রাখতে চাই।
দুর্গাপূজার সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট আন্তরিক কি না তা সময়ই বলে দেবে। এ সময়ের জন্যে আমরা পূজার্থীরা সবাই অপেক্ষা করছি।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ দুর্গাপূজার সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কী কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার?
রাণা দাশগুপ্তঃ আমরা এ বিষয়ে মন্ত্রণলয়ের সভায় নানান প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছি যা গৃহীতও হয়েছে। এখন দেখা যাক, বাস্তবে এসব পদক্ষেপ কার্যকর হচ্ছে কি না।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ গত ৪ অক্টোবর কুমিল্লার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মদমুক্ত পূজা করার কথা বলেও সাম্প্রদায়িক কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়েছেন, কুড়িগ্রামে চারণকবি রাধাপদ রায়ের ওপর সম্প্রতি হামলা হয়েছে, মুন্সিগঞ্জের মেয়র ফয়সাল, স্থানীয় সংসদ সদস্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মৃনাল কান্তি দাসকে “মালা...”বলে গাল দিয়েছেন, ক্ষমতাসীন দলের অনেকের মধ্যে এই যে সাম্প্রদায়িক আচরণের প্রকাশ ঘটছে, আসন্ন দুর্গাপূজার প্রেক্ষাপটে আপনি কি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত বোধ করছেন?
রাণা দাশগুপ্তঃ ক্ষমতাসীন দলের কারো কারো মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক আচরণের প্রকাশ ঘটছে, সামনে নির্বাচন ও আসন্ন দুর্গাপূজার প্রেক্ষাপটে তাতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকা বোধ না করে উপায় নেই। তবে শুধু ক্ষমতাসীন দল নয়, নির্বাচন নিয়ে ১৯৯১ ও ২০০১ সালের পূর্বাপর নিয়ে যেসব সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সেসব বিবেচনায় রেখে আমরা নিস্বন্দেহে বিচলিত ও উদ্বিঘ্ন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সংগঠিত ঘটনাবলীর নানান তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক জেলা জজ শাহবুদ্দিন আহমেদ-এর নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের ২০১১ সালে সরকারের বরাবরে পেশকৃত রিপোর্টের সুপারিশের ভিত্তিতে আজো কোন আইনগত-প্রশাসনিক পদক্ষেপ অজানা কারণে দীর্ঘ ১২ বছর পরেও কার্যকর হয়নি।
ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচারের ক্ষেত্রে দায়মুক্তির সংস্কৃতি আজো অব্যাহত। যদি তা না হতো তাহলে সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে তা হতো বলে মনে হয় না। চলতি বছরে দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার অন্তত ১ মাস আগে থেকে দেশের নানান মন্দিরে বিগ্রহ ভাংচুর ও আক্রমণের ঘটনা আমাদের সামনের পরিস্থিতি নিয়ে অধিকতর উদ্বেগাকুল করে তুলেছে।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ গত ২২ সেপ্টেম্বর গণ-অনশন ও গণসমাবেশ কর্মসূচি থেকে আপনি অভিযোগ করেন, “মূর্তি ভাঙা শুরু হয়ে গেছে।” এই ভাঙচুর করতে গেলে একজনকে ধরা হয়েছিল, তারপর তাকে বলা হলো সে পাগল। অতীতেও এভাবে যাদের ধরা হয়েছিল, তাদের পাগল বলেছে। ফরিদপুরে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং নানা জায়গায় এমন ঘটনা ঘটছে অভিযোগ করে আপনি বলেছেন, এ ঘটনাগুলো যাতে না ঘটতে পারে, সে জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আপনারা বৈঠক করেছেন, তারপর ও সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলো ঘটেই চলেছে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, আপনি সম্প্রতি বলেছেন, "নির্বাচনের পূর্বাপর অবস্থা আমাদের জন্য সুখকর নয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল আমরা দেখেছি; ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পূর্বাপর কী হলো, আমরা ভুলি নাই। ১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসে কী হয়েছিল, আমরা এগুলো ভুলতে পারি না।" আপনি আরো বলেছেন, ২০১১ সালের পর থেকে আজকে যা চলছে, এটি হচ্ছে রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনি কি এবারের দুর্গাপূজায় বড়ধরণের সহিংসতার আশংকা করছেন?
রাণা দাশগুপ্তঃ এ প্রশ্নের উত্তর আমি ইতিমধ্যেই প্রদান করেছি। এ বিষয়ে আর নতুন করে কিছু বলার নেই।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন হামলার ঘটনা না ঘটে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে এবং ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন তারা যেন নিরাপদে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে এটা নিশ্চিত করার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার? বিশেষ করে নির্বাচন ব্যবস্থায় কী ধরণের সংস্কার করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
রাণা দাশগুপ্তঃ আমরা ইতিমধ্যে এ বিষয়ে জনাব কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু নাগরিকদের মানবাধিকার কোনভাবেই লঙ্ঘিত না হয় সেজন্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ-র নেতৃত্বাধীন কমিশনের সাথে সাক্ষাত করে পৃথক পৃথকভাবে স্বারকলিপি প্রদান করেছি। আগামী নির্বাচনে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুরা যাতে নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিতের জন্যে নির্বাচন কমিশনে ৭ দফা এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয় সেজন্যে মানবাধিকার কমিশনে ৫ দফা প্রস্তবনা তুলে ধরেছি। উভয় কমিশন আমাদের প্রস্তাবনাকে যৌক্তিক বলে স্বীকার করে নিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। আমরা একে ইতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়েছি।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ সংখ্যালঘুদের দেওয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে আপনি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এরপরও, আপনাদের দাবিগুলো, যেমন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বাজেটে সংখ্যালঘুদের জন্য আনুপাতিক হারে বরাদ্দ দেয়া, সংখ্যালঘুদের সঠিক শুমারি করার উদ্যোগ নেয়াসহ সংখ্যালঘুদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জীবনে একধরনের আশাহীনতা ও আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে বলে আপনি বলেছেন। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ যে আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে আপনাদের দাবিগুলো মানবে সে ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী।
রাণা দাশগুপ্তঃ বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করা ছাড়া বিকল্প আর কি কিছু আমাদের সামনে খোলা আছে। আমরা সুষ্পষ্টভাবে বলতে চাই, ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ, অধিকার ও অস্তিত্ব এবং সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার তাগিদে আমাদের নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক পন্থায় মানবাধিকারের লড়াই চলছে, চলবেই। এক্ষেত্রে কোন আপোস আমরা অতীতেও করিনি, ভবিষ্যতেও করবো না।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ সংখ্যালঘুদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোর মধ্যে একটি ঐকমত্য প্রয়োজন, কিন্তু আপনাদের তরফ থেকে বিএনপি বা সমমনা দলগুলোর সাথে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করার কোনো উদ্যোগ সেভাবে দেখা যায় না, কেন? আর আপনি কি মনে করেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও উন্নতির লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে সামাজিক চুক্তি প্রয়োজন তা বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে আলোচনার বাইরে রেখে করা সম্ভব?
রাণা দাশগুপ্তঃ আমরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি, সংখ্যালঘুদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোর মধ্যে একটি ঐকমত্য প্রয়োজন।
ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দেশে যাতে না হয় এবং সংখ্যালঘুরা নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে যাতে আগামী জানুয়ারী মাসে ভোট দিতে পারে তজ্জন্যে প্রয়োজনীয় ঐক্যমত্যে আসার জন্য প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতি আমাদের সভা-সমাবেশ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। আমরা খুশি হয়েছি, আগামী শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালীন সময়ে ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের যাবতীয় কর্মসূচি গ্রহণ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে এবং ঐ দিনগুলোতে যাতে কোনরূপ সহিংসতা কেউ যাতে করতে না পারে বা সহিংসতার উসকানি দিতে না পারে তজ্জন্যে সজাগ ও সতর্ক ভূমিকা পালনের জন্য বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলীয় নেতা ও কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা এজন্যে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।
সরকার দলীয় সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি গত জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে দুর্গাপুজোর দিনগুলোতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আশঙ্কা ব্যক্ত করে পূজার্থীদের সজাগ, সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। নির্বাচন এখনো প্রায় ৩ মাস বাকি। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা আমরা শুরু করেছি। ইতোমধ্যে সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান জনাব কবির বিন আনোয়ার, ১৪ দলীয় জোটের শরীক বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি জনাব রাশেদ খান মেনন এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি জনাব হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার এমপি, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জনাব জি এম কাদের, লিবারেল ইসলামিক জোটের সাথে বৈঠক হয়েছে। বিএনপি সহ অন্যান্য দলের সাথেও আলোচনার চিন্তাভাবনা আমাদের আছে।
আমরা মনে করি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও উন্নতির লক্ষ্য ও তা অর্জনের জন্যে সামাজিক চুক্তি প্রয়োজন যা বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে আলোচনার বাইরে রেখে করা সম্ভব নয়।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ আপনি নানা সময় আপনার বক্তব্যে নির্বাচনের সময় বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বিশেভাবে টার্গেট করা হয় এমন বলেছেন... যেখানে তাদের ভয় ভীতি প্রদর্শন, তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি ও তাদের উপর সহিংসতার নজির রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে (যার উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্র বলছে, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকা- ও সহিংসতা প্রতিরোধ করা”), তার ফলে আপনি কি মনে করেন, আগামী নির্বাচনে এই ধরনের ঘটনা ঘটবে না অথবা কম ঘটার আশংকা রয়েছে?