বিশ্ব যখন গাজার যুদ্ধের উপর মনোযোগ দিচ্ছে তখন পশ্চিম তীরেও উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে গত সপ্তাহ ধরে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাত, গ্রেপ্তারি অভিযান এবং ইহুদি বসতিকারীদের আক্রমণে ৫৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের নজরদারি দল বলছে গত অন্তত ২০০৫ সালের পর থেকে ঐ অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি ছিল সব চেয়ে প্রাণনাশী সপ্তাহ।
ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের প্রাণনাশী প্রবেশ যেখানে জঙ্গিরা ১৩০০’র ও বেশি মানুষকে হত্যা এবং প্রায় ১৫০ জনকে আটক করেছে , তার পর থেকে ইসরাইলি সৈন্যরা পশ্চিম তীরকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছে । সেই অঞ্চলে প্রবেশের পথ, শহরগুলির মধ্যে তল্লাশি চৌকিগুলিও বন্ধ করে দিয়েছে । তারা বলছে আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য এই ব্যবস্থাগুলি নেয়া হয়েছে।
শুক্রবার ছিল সব চেয়ে মারাত্মক দিন । ঐ দিন পশ্চিম তীরে ১৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়।
সামরিক বাহিনী বলছে গত সপ্তাহান্তের হামলার পর তারা পম্চিম তীর জুড়ে অভিযানে ২২০ জনকে আটক করেছে, যাদের মধ্যে ১৩০ জন হামাস সক্রিয়বাদীরাও ছিল। হামাস জঙ্গিরা পশ্চিম তীরে রয়েছে তবে তারা ইসরাইলের কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে প্রধানত লুকিয়ে তাদের কাজ করে যাচ্ছে।
ইসরাইল নতুন করে এই অভিযান শুরু করেছে কারণ তারা এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে এই সংঘাত একাধিক দিকে যুদ্ধের সুত্রপাত ঘটাবে, বিশেষত লেবাননের হেজবুল্লাহ মিলিশিয়াদেরও এই লড়াইয়ে যুক্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ফিলিস্তিনিরা বলছে, পশ্চিম তীরে ইসরাইলের সর্বসাম্প্রতিক পদক্ষেপ নিরাপত্তা বাহিনী এবং উগ্রবাদী সহিংস বসতকারীদের মধ্যকার পার্থক্যকে আরও অস্পষ্ট করে তুলেছে। ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গিভির , যার আরব বিরোধী উত্তেজনা সৃষ্টির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং যিনি সেখানকার চরম ডানপন্থি বসতকারী, হামাস হামলার জবাবে সেখানকার বসতকারীদের আরও অস্ত্র শস্ত্র দেন এবং তাদেরকে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেন। এই বসতি স্থাপনকারীরা আগে থেকেই সশস্ত্র।
এ সপ্তাহে আরও আগের দিকে তিনি বলেন তার দপ্তর ইসরাইলি অসামরিক লোকজনের মধ্যে ১০,০০০ আগ্নেয়াস্ত্র বিতরণ করেছে। তা ছাড়া সংঘর্ষের পোশাক, সুরক্ষার পোশাক এবং হেলমেট ও দেয়া হচ্ছে। তারা বিশেষ ভাবে নজর দিচ্ছেন পশ্চিম তীরের ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের উপর।
শনিবার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারী বসতি স্থাপনকারীদের নিজেদের সংযত থাকার কথা বলেছেন, “বসতিতে এবং রাস্তাঘাটে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব হচ্ছে কেবলমাত্র সেনাবাহিনীর”।
কিন্তু ইহুদি বসতিকারীদের ওয়াটস অ্যাপ গ্রুপে বিভিন্ন রকম বার্তা আসছে। পশ্চিমতীরে তত্পরতার সমন্বয় সাধনের জন্য এ রকম গ্রুপ করা হয়েছে। ৮০০ জন অংশগ্রহণকারীর একটি চ্যাটিং গ্রুপে বাশিন্দাদের বলা হয়েছে, “সন্ত্রাসবাদীদের অবিলম্বে ধ্বংস করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযানের সম্ভাবনা রয়েছে”।
ঐ বার্তায় সেখানকার বসতকারীদের বলা হয়েছে তাদের বসতির দিকে এগিয়ে আসা যে কোন ফিলিস্তিনিকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করে ফেলতে হবে। সেখানে প্রশ্ন করা হয়, “ আপনারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছেনতো”?