বাংলাদেশের নারীদের ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা দূর করার ক্ষেত্রে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতাই উল্লেখযোগ্য বাধা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অগ্রগতি সত্ত্বেও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতা নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা দূরীকরণের পথে উল্লেখযোগ্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতিসংঘের কান্ট্রি টিমের সাম্প্রতিক খুলনা ও বরিশাল বিভাগ সফরের ফলাফল তুলে ধরে গোয়েন লুইস বলেন, কান্ট্রি টিম এসব বাধার কথা খুলনা ও বরিশালের নারীদের কাছ থেকে শুনেছেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ভিশন অর্জনে আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন এবং এই পরিবর্তনে নারীদের সমান অংশীদার হতে হবে”।
জাতিসংঘের দলটি এই অঞ্চলে নারীরা যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন তা অনুসন্ধান করে এবং লিঙ্গ বৈষম্য মোকাবিলা ও নারীর ক্ষমতায়নে প্রচেষ্টার অগ্রগতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
সম্প্রতি বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলে সফর করে বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘ ও তাদের উন্নয়ন অংশীদারি সংস্থার একটি যৌথ প্রতিনিধিদল। সফরের পর তারা জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকল্পে অধিকতর কর্মসূচি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে জেন্ডার সমতা অর্জনে বাংলাদেশ উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্য অর্জন করলেও, জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাবের কারণে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের নারীরা অনেক সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
ইউএন উইমেনের বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ গীতাঞ্জলি সিং বলেন, “মিশনের প্রতিটি দিন আমরা নারী ও মেয়েদের কাছে থেকে তাদের সংকল্প ও সাহসিকতার কথা শুনেছি। এখানে দেখছি জেন্ডার নিয়ে নানা পুরোনো রীতি-আচার মেয়েদের রয়ে গেছে। এটি সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাধাগ্রস্ত করছে। জেন্ডার সমতার জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরিতে পরিবর্তনের অংশীদার হিসেবে, যুবক, তরুণ ও কিশোরদেরও একই সঙ্গে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি”।
আইএলওর বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পোটিআইনেন বলেন, “বাংলাদেশের নারীরা শ্রমবাজারের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে আছে। এটি শ্রমবাজারে তাদের কম অংশগ্রহণের জন্য দায়ী”।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহকারী প্রতিনিধি নুর আহমেদ খোন্দকার বলেন, “আগে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের কথা শোনা হতো না। কিন্তু এখন নারীরা কমিউনিটিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জলজ চাষ প্রকল্পের মালিকানা গ্রহণ করছেন। পাইকারি বাজার ব্যবস্থাপনাসহ সক্রিয়ভাবে মাছ চাষে অংশ নিচ্ছেন”।
তিনি আরও বলেন, “নারীদের ক্ষমতায়ন তাদের পারিবারিক অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনছে। সেই সঙ্গে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলায় সাহায্য করছে”।
জাতিসংঘের এ মিশনের মূল বিষয় ছিল জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা (জিবিভি) রোধে পদক্ষেপ নেওয়া এবং শিশু ও নারীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
এই প্রসঙ্গে, ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন,“বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের মতো ক্ষতিকর প্রথা প্রতিরোধে শিশু সুরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সহিংসতার মৌলিক কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সামাজিক রীতিনীতি”।
বাংলাদেশে নিয়োজিত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিসের তত্ত্বাবধায়নে তিন দিনব্যাপী জেন্ডার সমতা মিশনে জাতিসংঘের পাঁচটি সংস্থার প্রতিনিধি ও তাদের অংশীদাররা অংশ নেন।