শুক্রবার গভীর রাতে মরক্কোতে একটি বিরল, শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে, আটলাস পর্বতমালার গ্রামাঞ্চল থেকে ঐতিহাসিক শহর মারাকেশ পর্যন্ত ৮০০ জনেরও বেশি লোক নিহত এবং অনেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উদ্ধারকারীরা শনিবার ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগায়, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভবনগুলির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সন্ধান করেছে জরুরী কর্মীরা। ভূমিকম্পের পর দেখা যায়, একটি বাড়ির পাশে বিশাল এক গর্ত তৈরি হয়েছে। স্থানীয় মিডিয়ায় সম্প্রচারিত অন্যান্য ছবিতে দেখা যায়, একটি ভবনের অংশ ধসে পড়লে, সেখানে রাখা একটি গাড়ি প্রায় চ্যাপ্টা হয়ে যায়।
মারাকেশে, দ্বাদশ শতকে নির্মিত বিখ্যাত কুতুবিয়া মসজিদটি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে ক্ষতির সঠিক পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। মসজিদটির ৬৯-মিটার মিনারটি " মারাকেশের ছাদ" নামে পরিচিত। ইউনেস্কো স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, এই পুরানো শহরের বিখ্যাত লাল দেয়ালের ক্ষতিগ্রস্ত কিছু অংশের ভিডিও পোস্ট করেছে স্থানীয় লোকজন।
মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক শনিবার সকালে জানিয়েছে, মারাকেশ এবং ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি পাঁচটি প্রদেশে অন্তত ৮০০ জন লোক মারা গেছে এবং আরও ৬৭২ জন গুরুতর আহত হয়েছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি একটি শহরের প্রধান, মরক্কোর নিউজ সাইট টুএম-কে বলেছেন, কাছাকাছি শহরের বেশ কয়েকটি বাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়েছে এবং কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ ও রাস্তা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
তালাত এন'ইয়াকুব শহরের প্রধান আবদেররহিম আইত দাউদ বলেছেন, কর্তৃপক্ষ আল হাউজ প্রদেশের রাস্তাগুলি পরিষ্কার করার জন্য কাজ করছে, যাতে অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াত করতে পারে এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সাহায্য করা যায়। তবে তিনি বলেন, দূরবর্তী পাহাড়ি গ্রামগুলোর ভিতরের ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে এখনো অনেক সময় লাগবে।
শনিবার সারা বিশ্ব থেকে সমর্থনের বার্তা আসতে শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) বিভাগ জানিয়েছে, (স্থানীয় সময়) রাত ১১টা ১১ মিনিটে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৬.৮। প্রচণ্ড ঝাঁকুনিসহ যা কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। ইউএস এজেন্সি জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি আঘাত হানার ১৯ মিনিট পর, ৪.৯ মাত্রার আরেকটি আফটারশক বা অনুকম্প অনুভূত হয়।
শুক্রবারের কম্পনের কেন্দ্রস্থল ছিল, মারাকেশ থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে, আল হাউজ প্রদেশের ইঘিল শহরের কাছে।
ইউএসজিএস আরও জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৮ কিলোমিটার নীচে। যদিও মরক্কোর সিসমিক এজেন্সি বলছে, কেন্দ্রস্থলটি ছিল ভূপৃষ্ঠের ১১ কিলোমিটার নীচে। সে যাই হোক, এই ধরনের অগভীর ভূমিকম্প আরও বিপজ্জনক।
উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে ভূমিকম্পের ঘটনা তুলনামূলকভাবে বিরল। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ জিওফিজিক্সের সিসমিক মনিটরিং অ্যান্ড ওয়ার্নিং বিভাগের প্রধান লাহচেন মাহনি টুএম টিভিকে বলেছেন, এই ভূমিকম্পটি ছিল পাহাড়ী অঞ্চলে রেকর্ড করা এ যাবৎ কালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।
এর আগে, ১৯৬০ সালে মরক্কোর আগাদির শহরের কাছে ৫.৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, এবং হাজার হাজার মানুষ এতে মারা যায়।
আগাদির ভূমিকম্পের পর ভবন নির্মাণ নিয়মে পরিবর্তন আনে মরোক্কো। কিন্তু এখনো অনেক ভবন, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার বাড়ি-ঘর, এই ধরনের কম্পন সহ্য করার জন্য নির্মিত হয়নি।
এছাড়া, ২০০৪ সালে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় শহর আল হোসেইমার কাছে ৬.৪ মাত্রার অপর একটি ভূমিকম্পে ৬০০ জনেরও বেশি লোক মারা গিয়েছিল।
জরুরি প্রতিক্রিয়া তত্ত্বাবধান কারী সংস্থা, পর্তুগিজ ইনস্টিটিউট ফর সি অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার এবং আলজেরিয়ার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, শুক্রবারের ভূমিকম্পটি পর্তুগাল এবং আলজেরিয়ার মতো দূরবর্তী দেশ থেকেও অনুভব করা হয়েছিল।