চট্টগ্রাম বিভাগের বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই, পানি বাড়ছে যমুনা নদীতে। এর ফলে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন; তলিয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলার নিচু এলাকা। আবহাওয়া অফিস বলছে আরো বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। উজানেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে যমুনা অববাহিকায় বন্যার ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন যমুনা তীরের মানুষ।
বাড়ছে যমুনা নদীর পানি
কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাড়ছে যমুনা নদীর পানি। এতে সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদ সীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
যমুনা তীরবর্তী ৫টি উপজেলা কাজিপুর, চৌহালী, শাহজাদপুর, বেলকুচি ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি, খেয়াঘাট, গাছপালা ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন নিয়ন্ত্রনে কাজ শুরু করছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (হেডকোয়ার্টার) রনজিৎ কুমার সরকার জানান, “রবিবার (১৩ আগস্ট) সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪৫ মিটার। অপরদিকে, কাজিপুরের মেঘাই পয়েন্টে পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ১৫ মিটার।
তিনি আরো জানান, “গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও মেঘাই পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা নদী।
উজানে ভারী বর্ষণের ফলে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পাবে এবং এ দফায় বিপদ সীমা অতিক্রম করবে। এতে সিরাজগঞ্জ জেলায় বন্যার আশংকা কম। একথা জানালো পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর স্থানীয় দপ্তর।
বজ্র-বৃষ্টি হতে পারে: আবহাওয়া অধিদপ্তর
এদিকে, মৌসুমী বায়ুর সক্রিয় থাকার কারণে, রবিবার (১৩ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে শুরু করে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকাসহ আট বিভাগে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, “রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।”
পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, “দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের এবং ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় সর্বোচ্চ ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে বলেও জানায় আবহাওয়া অফিস।
এদিকে, মৌসুমী বায়ুর প্রভাব বর্তমান অবস্থায় বিরাজ করলে আরো কয়েকদিন বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে অনুমান করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। এখন, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে বিরাজ করছ। এর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি নিম্নচাপ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি আকারে সক্রিয় রয়েছে।