ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সরকারের দ্বিতীয় বছর শেষ হওয়ার সাথে সাথে, সারা দেশের মিডিয়া তাদের কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করছে। তারা সবাই মূলত এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে, কেবল অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যগুলিই অপূর্ণ হয়নি, সেই সাথে তারা অতীতের স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মতো "পশ্চাদপসরণমূলক পদক্ষেপ"ও নিয়েছে৷
তেহরান-ভিত্তিক সংবাদপত্র হাম-মিহান ৫ আগস্ট প্রকাশিত তাদের সর্বসাম্প্রতিক সংস্করণে, এই ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সরকার কর্তৃক "বেশিরভাগ প্রধান প্রতিশ্রুতি পূরণের অভাব" সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছে। সংবাদপত্রটি জোর দিয়ে বলেছে, "মূল সূচকে বিপরীতমুখী এবং নেতিবাচক প্রবণতা" অনেক কিছুর মধ্যেই স্পষ্ট।
সংস্কারপন্থী দল ইরান পার্টির কনস্ট্রাকশনের নির্বাহীদের সাথে যুক্ত এই সংবাদপত্রটি প্রেসিডেন্ট এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের স্লোগান এবং প্রতিশ্রুতির সাথে সরকারের কর্মক্ষমতা তুলনা করেছে। তারা দেশটির সরকারী পরিসংখ্যান উল্লেখ করে আলোকপাত করেছে, রাইসির সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এমন কোন অপ্রত্যাশিত বাহ্যিক প্রতিবন্ধকতা ছিল না, যা তার দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে বাধা হতে পারতো।
তাদের প্রতিবেদনে হাম মিহান বলছে দেশটি আগেকার সময়ের তূলনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে গেছে , বিশেষত মুদ্রাস্ফীতি, আয় এবং লোকজনের বেতনের বিষয়ে ।
২০২১ সালের জুন থেকে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণার সময়, রাইসি এবং তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বারবার ইরানে "দ্রুত ও বৈপ্লবিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি" অর্জন করার লক্ষ্যে, "৪০ লাখ বাড়ি নির্মাণ", "৪০ লাখ কর্মসংস্থান" সৃষ্টি এবং সমাজের মধ্যে "নিরঙ্কুশ দারিদ্র " দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
তবে, আলী খামেনির প্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত তেহরান ভিত্তিক সংবাদপত্র জোমহৌরি এসলামি শনিবার এক সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। ওই সম্পাদকীয়তে পত্রিকাটি রাইসি সরকারের বাগাড়ম্বর ও কর্মক্ষমতার সমালোচনা করে বলেছে: "আপনি আর কতদিন অতীতের ত্রুটিগুলিকে দায়ী করতে চান?"
নিবন্ধটি জোর দিয়ে বলেছে: "দুই বছর ক্ষমতা গ্রহণের পর, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কোনো প্রেসিডেন্ট 'বিগত সরকার'কে দোষ দিতে পারেন না, বিশেষ করে যখন বর্তমান সরকার অন্যান্য সামরিক ও দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পূর্ণ এবং ১০০% সমন্বয় এবং ঐক্য উপভোগ করে।"
"এমন পরিস্থিতিতে," জোমহৌরি এসলামি সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, "এমনকি এক বছর 'সমস্ত বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ এবং সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার' যথেষ্ট সময়; এইভাবে, দুই বছর পরে, সমস্যাগুলি অব্যাহত থাকার জন্য কোনও গ্রহণযোগ্য অজুহাত নেই।"
২০২১ সালের জুন থেকে, রাইসি এবং তার ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা ধারাবাহিকভাবে "মূল্য নিয়ন্ত্রণ" এবং "একক-সংখ্যার মুদ্রাস্ফীতির" প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া "চাপযুক্ত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য" বেশ কয়েকটি "অর্থনৈতিক প্যাকেজ" প্রবর্তন করেছেন। তা সত্ত্বেও, এই সমস্ত প্রচেষ্টার ফলে অসংখ্য পণ্য ও সরকারি পরিষেবার দাম আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বর্তমান সরকার যখন তৃতীয় বছরে পদার্পণ করছে তখনও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেওয়া প্রাথমিক ও প্রধান প্রতিশ্রুতি পূরণের বিষয়ে কোনো সরকারী পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়নি।
ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মদ রেজা ফারজিন এর আগে দাবি করেছিলেন, "সাম্প্রতিক মাসগুলিতে তারল্য সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে।" তিনি মুদ্রাস্ফীতির হার "৩০ শতাংশ" এ হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
তবে আল-জাহরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক হোসেইন রাগফার রাইসি সরকারের কর্মক্ষমতার সমালোচনা করে বলেছেন, "বর্তমানে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা ইরানের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।"