বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। তবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। যার মাধ্যমেই বাংলাদেশের জনগণ তাদের পরবর্তী সরকার নির্বাচন করবে।
পিটার হাস বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি নির্বাচন যাতে অবাধ,সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় তা নিশ্চিতে সকলেরই ভূমিকা রয়েছে”।
বৃহস্পতিবার (৩ অগাস্ট) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পিটার হাস বলেন, সরকার, গণমাধ্যম, বিচার বিভাগ, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, নিরাপত্তা বাহিনী এবং অবশ্যই ভোটার—প্রত্যেকেরই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রয়েছে।
পিটার হাস বলেন, “অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য প্রত্যেককে তাদের ভূমিকা পালন করতে হবে এবং অন্যদেরকে ভূমিকা পালন করার সুযোগ দিতে হবে”।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অবস্থান নেই।
তিনি বলেন, “মূলত রাজনৈতিক দলগুলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা কোন পথ বেছে নেবে। আমরা কেবল সহিংসতামুক্ত অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন (নিশ্চিতে) নিয়ে উদ্বিগ্ন ও আগ্রহী”।
বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বেশি যোগাযোগ রাখছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, “আমি যখন আওয়ামী লীগের সদর দপ্তরে (কেন্দ্রীয় কার্যালয়) বসে আছি, সে সময় এই প্রশ্ন করাটা অদ্ভুত। না, আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই সাক্ষাৎ করি। আমরা পক্ষপাত করি না। আমি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করেছি, যারা আওয়ামী লীগের সদস্য। এ ক্ষেত্রে আমাদের কোনো অগ্রাধিকার নেই। আমরা সমাজের সব স্তরের মানুষের সঙ্গে সমানভাবে দেখা করি এবং পক্ষপাত করি না”।
পিটার হাস বলেন, “আমি অন্য রাজনৈতিক দলের (নেতাদের) সঙ্গেও দেখা করেছি। আমি নিয়মিত গণমাধ্যমগুলোতে যাই; নাগরিক সমাজ এবং পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গেও কথা বলি। আর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি যা করি এই কাজগুলো তার অংশ”।
পিটার হাস বলেন, “প্রতিটি বৈঠকে আমি একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছি। আর তা হলো—এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হচ্ছে, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করি। কোনো পক্ষই কোনো সহিংসতা করবে না”।
এর আগে পিটার হাস আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।
পিটার হাসের সঙ্গে ছিলেন দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা।
নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক কোনো চাপে নেই আওয়ামী লীগ—যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর জানালেন ওবায়দুল কাদের
ওদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ কোনো আন্তর্জাতিক চাপে নেই। তিনি বলেন, “কেন আমরা চাপ অনুভব করব? অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান আমাদের অঙ্গীকার। আপনারা যদি চাপের কথা বলেন, তাহলে এটা আমাদের বিবেকের চাপ”।
বৃহস্পতিবার (৩ অগাস্ট) রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমেরিকার সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখি। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আমাদের পার্টি অফিসে এসেছিলেন। তারা আগে কখনো আমাদের অফিসে আসেননি। তিনি এসেছেন ও দেখেছেন”।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছি। আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি। এটা দেশের মানুষের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার”।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “গণতন্ত্র রক্ষা করা আমাদের পবিত্র কর্তব্য। আমরা এই কর্তব্য পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আছে”।
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা কোনো অভিযোগ নিয়ে কথা বলিনি। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংসদ ভেঙে দেওয়া বা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কথা উল্লেখ করেননি। আমরাও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলেছি”।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, “আমেরিকানরা আমাদের কোনো পরামর্শ দেয়নি এবং সংলাপের বিষয়েও কোনো কথা হয়নি”।