“নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন”। বুধবার (২ অগাস্ট) রংপুরের জিলা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় জনগণের কাছে এভাবেই ভোট চেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন। আমি আপনাদের উন্নতির জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত”।
রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের রংপুর মহানগর ও জেলা শাখা জনসভাটির আয়োজন করে। জনসভার মাঠ পূর্ণ হয়ে আশেপাশের প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকা আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও উৎসাহী জনতার ঢল নেমে জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
নৌকা আকৃতির বিশাল মঞ্চ থেকে বক্তব্য দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “নৌকা জিতলেই দেশের উন্নয়ন হয়। কৃষকদের অবস্থার পরিবর্তন আনে, প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়”।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি তার পরিবারের বাবা-মা, ভাইসহ সবাইকে হারিয়েছেন। তিনি অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, “প্রয়োজনে আমার বাবার মতো আমিও বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করব”।
শেখ হাসিনা ব্যানার-ফেস্টুন হাতে স্লোগানে-স্লোগানে মুখরিত জনতার কাছে জানতে চান, “আপনারা কি নৌকায় ভোট দেবেন? দয়া করে আমাকে বলবেন”।
জনতা ‘হ্যাঁ’ বলে তাদের হাত তুলে এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাদের সমর্থন জানান।
জনসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সড়কে খেলা হবে। আমরা আমরা রাজপথে এবং নির্বাচনে তাদের (বিরোধী দল বিএনপি) মোকাবিলা করব।
আওয়ামী লীগের শিকড় বাংলাদেশের মাটির গভীরে গেঁথে যাওয়ায় দেশ থেকে পালিয়ে যাবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জনসভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, আওয়ামী লীগের রংপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক এ কে এম সায়াদত হোসেন বকুল, আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশেকুর রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
রংপুরে ২৭ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা
রংপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারসহ ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা।
বুধবার বিকেলে রংপুর জিলা স্কুল মাঠের জনসভা থেকে সম্পন্ন হওয়া প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন। একই স্থান থেকে তিনি আরও ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
নতুন প্রকল্পগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে বাস্তবায়িত হবে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে রংপুর উপশহরে ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ একর জমির উপর নির্মিত হচ্ছে ১০ তলাবিশিষ্ট নভোথিয়েটারটি।
কর্মকর্তারা বলছেন, এটি রংপুর অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে পারবে এবং বিজ্ঞান পড়তে উৎসাহিত হবে।
ইতিমধ্যে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণ করেছে সরকার এবং বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও খুলনায় চারটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
রাজশাহীতে নভোথিয়েটারের কাজ প্রায় শেষ। এক-দুই মাসের মধ্যে সেটি চালু হতে পারে। সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগে একটি করে নভোথিয়েটার নির্মাণ করা হচ্ছে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেসব প্রকল্প উদ্বোধন করা হয় সেগুলো হলো-শেখ রাসেল মিডিয়া সেন্টার, শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিং পুল, রংপুর পালিচড়া স্টেডিয়াম, বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স।
রংপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রকল্পগুলো হলো-রংপুর সিটি সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাল, রংপুর সিটি অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট এবং স্টোর ইয়ার্ড।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পগুলো হলো-নলয়া নদী পুনঃখনন (১৯.১৪ কিলোমিটার), আলাইকুমারী নদী পুনঃখনন (১৯.২৪ কিলোমিটার), নয়মুল্লা বিল পুনঃখনন (১৪.৫৭ একর), চিকলি বিল পুনঃখনন (১৯.৬৩ একর), ভদ্রারাম বিল পুনঃখনন (২২.৮৯ একর)।
স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো-পীরগাছা উপজেলা চৌধুরানী জিসি থেকে শঠিবাড়ী আরঅ্যান্ডএইচ পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজ, পীরগাছা উপজেলা ভেন্ডাবাড়ী থেকে খালাশপীর জিসি পর্যন্ত রাস্তার সংস্কার কাজ, কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর জিসি থেকে পাওটানা সড়কের সংস্কার কাজ। মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালগঞ্জ ঘাটে ঘাঘট নদীর ওপর ৯৬ মিটার সেতু নির্মাণ, গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট জিসি-কাকিনা আরঅ্যান্ডএইচ সড়কে ৪০ মিটার সেতু নির্মাণ এবং কাউনিয়া উপজেলার পল্লীমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ কাজ।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো-রংপুর মেডিকেল কলেজ বহুমুখী ভবন, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় হেলেঞ্চা ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র, রংপুর বিভাগের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়, পীরগঞ্জে উপজেলার মাদারগঞ্জে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৪ নম্বর চতরা ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নে ১০ শয্যাবিশিষ্ট বেগম রোকেয়া আধুনিক হাসপাতাল এবং রংপুর জেলার পীরগঞ্জের খালাশপীরে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র।
অন্য প্রকল্পগুলো হলো-পীরগঞ্জ উপজেলার ২ হাজার ৫৪০ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং রংপুর কারখানা ও সংস্থার পরিদর্শনের অফিস ভবন।