সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে গিয়ে গ্রেপ্তার বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩২ জনকে বুধবার (২ অগাস্ট) জামিন দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৪–এর বিচারক মোহাম্মদ ফারহান সাদিক এ আদেশ দেন। বুধবার দুপুর ১২টায় অভিযুক্তদের অনুপস্থিতিতে এই জামিন ও রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়।
অভিযুক্তদের আইনজীবী তৈয়বুর রহমান জানান, আদালত ৩২ জনকে ৫ হাজার টাকার মুচলেকায় জামিন দিয়েছেন।
আটক ৩৪ জনের মধ্যে ২ জন শিশু হওয়ায় তাদের জামিনের আবেদন পাঠানো হয়েছে শিশু আদালতে।
জামিনপ্রাপ্তরা হলেন বুয়েটের শিক্ষার্থী বখতিয়ার নাফিস, আফিফ আনোয়ার, মো. সাইখ সাদিক, সাব্বির আহম্মেদ, তাজিমুর রাফি, ইসমাইল ইবনে আজাদ, মো. সাদ আদনান, মো. শামীম আল রাজি, মো. আব্দুলাহ আল মুকিত, মাহমুদুর হাসান, খালিদ আম্মার, মো. জায়িম সরকার, হাইছাম বিন মাহবুব, মো. ফাহাদুল ইসলাম, তানভির আরাফাত, এ টি এম আবরার মুহতাদী, আলী আম্মার মৌয়াজ, মো. রাশেদ রায়হান, সাকিব শাহরিয়ার, ফায়েজ উস সোয়াইব, আবদুর রাফি, মো. ফয়সাল হাবিব, আনোয়ারুল সিদ্দিকী ও মাঈন উদ্দিন। অন্যরা হলেন, মাহাদি হাসান, টি এম তানভির হোসেন, আশ্রাফ আলী, মো. মাহমুদ হাসান, আবদুল বারি, মো. বাকি বিল্লাহ, মো. এহসানুল হক ও মো. আবদুল্লাহ মিয়া।
রবিবার (৩০ জুলাই) সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জনকে আটক করে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা রবিবার সকাল ৭টার দিকে নৌকায় করে টাঙ্গুয়ার হাওরে যায়। তাহিরপুর থানা পুলিশের একটি দল দুটি স্পিড বোটে করে টেকেরহাট থেকে শিক্ষার্থীদের এবং নৌকার মাঝি আহাদুল মিয়া ও মুহাদ্দিস মিয়াকে আটক করে। পরে তাদের তাহিরপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ তাদের ৩৩টি মোবাইল ফোন সেট জব্দ করে।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, তারা একটি গোপন বৈঠক করার জন্য এলাকায় জড়ো হয়েছিল এবং সরকারকে বিব্রত করার জন্য সেখানে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছিল।
তাহিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদুল কবির বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। তাদের সবাইকে মঙ্গলবার (১ অগাস্ট) আদালতে হাজির করা হয়।
গ্রেপ্তার বুয়েট শিক্ষার্থীদের নিয়ে যা বললেন অভিভাবকেরা
এদিকে এর আগে মঙ্গলবার বুয়েট শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হয়রানির জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করেছে। অভিভাবকেরা শিক্ষার্থীদের নির্দোষ দাবি করে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান।
মঙ্গলবার শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা এই দাবি জানান।
অভিভাবকেরা জানান, তাদের সন্তানরা কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী ও রাজনীতি কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়। এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
পরিবারের পক্ষ থেকে আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, তারা কখনোই রাজনীতিসহ এ ধরনের কোনো কাজে জড়িত ছিল না।
বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র আলী আম্মার মুয়াজের বড় ভাই আলী আহসান জুনায়েদ অভিভাবকদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের সম্পর্কে এমন অকল্পনীয় অভিযোগ শুনে আমরা হতাশ।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি এ ধরনের হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ছেলেদের নির্বিচারে আটক করা এবং তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী মামলা করা তাদের শিক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ৩৪ জনের মধ্যে ৩১ জন বুয়েটের ছাত্র। সংবাদ সম্মেলনে ২৪ শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন এবং আটক ৩৪ শিক্ষার্থীকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান।