মঙ্গলবার বিউটি পার্লারগুলির উপর দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আফগানিস্তানের তালিবান কর্তৃপক্ষ। মালিকদের ব্যবসা বন্ধ করার জন্য এক মাসের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর, দারিদ্র্যের সাথে লড়াই চালিয়ে যাওয়া দেশটিতে হাজার হাজার নারী বেকার হয়ে পড়ছেন।
প্রায় দুই বছর আগে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে, কট্টরপন্থী তালিবান সরকার নারীদের অধিকারের ওপর ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তাদেরকে শিক্ষা, প্রকাশ্য স্থান এবং বেশিরভাগ চাকরি করা থেকে বিরত রেখেছে।
আফগান নারীদের জন্য যে কয়েকটি কর্মসংস্থানের সুযোগ অবশিষ্ট ছিল, বিউটি পার্লার ছিল তার মধ্যে একটি। বিউটি পার্লারগুলো ছিল তাদের সামাজিকীকরণের জন্য একটি বিরল সর্বজনীন স্থান। বিউটি পার্লারে কর্মরত অনেক কর্মীর জন্য এটাই ছিল পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস।
আফগান বিউটি পার্লার মালিকদের একটি সমিতির মতে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কাবুলের রাজধানীতে ৩,০০০ পার্লারসহ প্রায় ১২,০০০ নারী পরিচালিত সেলুন ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে, যেখানে আনুমানিক প্রায় ৬০,০০০ নারী কাজ করতো।
তালিবান মিনিস্ট্রি ফর প্রিভেনশন অফ ভাইস অ্যান্ড প্রোপাগেশন অফ ভার্চু বিউটি সেলুনগুলিকে এক মাস বন্ধ করার সময় দিয়েছিল, এই বলে যে সেলুনগুলি ইসলামে নিষিদ্ধ পরিষেবাগুলি প্রদান করছে৷
মন্ত্রকের একজন মুখপাত্র পরবর্তী বিবৃতিতে ব্যাখ্যা করেছেন, যখন বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় কনেদের এই পার্লারগুলিতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন বরদের পরিবারের জন্য পার্লারগুলি অর্থনৈতিক অসুবিধার সৃষ্টি করে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, অত্যধিক রূপ চর্চ্চা নারীদের নামাজের জন্য অযু নষ্ট করে, এছাড়া মাথায় চুল লাগানো এবং ভ্রু তোলা শরীয়া বা ইসলামী আইনের বিরুদ্ধে।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো আফগান বিউটি পার্লারে নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে। আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহায়তা মিশন সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে তালিবানের এই আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা সতর্ক করে দিয়েছে যে এটি জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সমর্থন খর্ব করবে।
জনজীবনে আফগান নারীদের অধিকারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ, কঠোর আন্তর্জাতিক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে, জাতিসংঘ তালিবান প্রশাসনকে "লিঙ্গ-বর্ণবাদী শাসন" বলে নিন্দা করেছে।
নারীদের প্রতি তাদের আচরণের কথা উল্লেখ করে কোনো দেশই এখন পর্যন্ত তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।
মৌলবাদী ডি ফ্যাক্টো নেতারা এই বলে তাদের নীতিগুলিকে ন্যায্যতা দেয়। তাদের দাবী, নীতিগুলি আফগান সংস্কৃতি এবং শরিয়া অনুযায়ী প্রণীত, যদিও বাকি ইসলামী দেশগুলির আলেমরা তালিবানের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন।